জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, একটি গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশকে অপমানজনক ও ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক সহিংসতা, হামলা ও রাষ্ট্রীয় নিষ্ক্রিয়তা দেখে মনে হচ্ছে দেশে আদৌ কার্যকর সরকার আছে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
১৮ ডিসেম্বরের হামলা ও সরকারের ভূমিকা
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের ভাষায়, ১৮ ডিসেম্বর সংবাদপত্র ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা একাত্তরের পর আর দেখা যায়নি। এই হামলার শিকার ব্যক্তিরা অতীতে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। অথচ এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার পর সরকার ও উপদেষ্টাদের ভূমিকা ছিল নির্লিপ্ত। তিনি বলেন, এমন ভয়ংকর পরিবেশ দেখার জন্য এই সরকারকে আনা হয়নি।
জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন
শনিবার ২০ ডিসেম্বর দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে শরিফ ওসমান হাদির বিচারের দাবিতে এবং সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর হামলার প্রতিবাদে নাগরিক সমাজ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আনু মুহাম্মদ।
ওসমান হাদির মৃত্যু ও তদন্ত প্রসঙ্গ
তিনি বলেন, ওসমান হাদির মৃত্যুর পর বিভিন্ন বেসরকারি গণমাধ্যমে নানা তথ্য প্রকাশিত হয়েছে এবং জড়িতদের পরিচয়ও উঠে এসেছে। তারপরও সরকারিভাবে কোনো তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি। বরং চিহ্নিত খুনি ভারতে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ ওঠে।
বিচারহীনতার ধারাবাহিকতা
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ স্মরণ করিয়ে দেন, অতীত সরকারের সময় তনু, মুনিয়া ও ত্বকি হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয়নি। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও ছায়ানট আগে থেকেই লক্ষ্যবস্তু ছিল। সাংবাদিক নুরুল কবির সংগ্রাম করলেও তাকেও ছাড় দেওয়া হয়নি। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর ভূমিকা রাখেনি। বরং প্রকৃত অপরাধীদের বাদ দিয়ে নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সহিংসতা ও রাজনৈতিক অবস্থান
তার অভিযোগ, সংবাদপত্রের অফিসে হামলা ও লুটপাট হলেও সরকার ও উপদেষ্টাদের কেউ প্রকাশ্যে কথা বলেননি। কিছু রাজনৈতিক দল সহিংসতার বিরোধিতা করলেও অন্যদিকে উসকানি দিচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।

সরকারের কাছে ছয় দফা দাবি
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সরকারের কাছে ছয়টি দাবি উত্থাপন করেন।
এক. শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের স্বচ্ছ তদন্ত করতে হবে এবং জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
দুই. ১৮ ডিসেম্বর রাতজুড়ে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট, সংস্কৃতি ভবন, নালন্দা বিদ্যালয়, ধানমন্ডি ৩২সহ দেশজুড়ে সংঘটিত সব হামলার তদন্ত করতে হবে। একই সঙ্গে ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
তিন. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বাচন সামনে রেখে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
চার. জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার দায়ে অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ করতে হবে।
পাঁচ. দেশ ও দেশের বাইরে থেকে সংঘবদ্ধভাবে উসকানি দেওয়া ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
ছয়. ওসমান হাদির জানাজার আগে ও পরে যেন কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা না ঘটে, সে বিষয়ে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
অন্যান্য বক্তা ও উপস্থিত সংগঠন
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন শহিদুল আলম, সীমা দত্ত, শামসুল হুদা, সারা হোসেন, বাকি বিল্লাহ, ফেরদৌস আরা রুমি, শফিকুর রহমান, তাসলিমা আক্তার, জাকির হোসেন, ওয়ারদা আশরাফ, আকরাম খান ও ফারহানা শারমিন ইমু।
এ সময় গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি, ব্রেইন, ক্ষুব্ধ নারী সমাজ, সম্প্রীতি যাত্রা, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক, নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম, জনভাষ্য, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, থিয়েটারকর্মী, টেক গ্লোবাল ইন্সটিটিউট, বটতলা এ পারফরমেন্স স্পেস, নারীপক্ষ, এএলআরডি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক, ভয়েজ ফর রিফর্ম, নাগরিক কোয়ালিশন ও মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















