যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া অঙ্গরাজ্যের ছোট্ট শহর এলডন সাধারণত নীরব। চারপাশে ভুট্টার ক্ষেত, পাহাড়ের চূড়ায় ছড়িয়ে থাকা জনপদ। এখানকার স্কুলগুলো সোমবার আরও বেশি শান্ত থাকে। কারণ ওই দিন শিক্ষার্থীদের ছুটি। দুই হাজার বাইশ সাল থেকে এলডন এলাকার স্কুল জেলায় চালু হয়েছে চার দিনের ক্লাস সপ্তাহ। জেলা সুপারিনটেনডেন্ট জেমস ক্রেগ বলছেন, এই সিদ্ধান্তে তিনি ভীষণ সন্তুষ্ট। তাঁর মতে, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, আচরণ ও মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
চার দিনের স্কুল সপ্তাহ কীভাবে ছড়াচ্ছে
এলডনের মতো উদাহরণ এখন আর বিরল নয়। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে দুই হাজারের বেশি স্কুলে এখন চার দিনের ক্লাস চালু রয়েছে। মিসিসিপি নদীর পশ্চিমের প্রায় সব অঙ্গরাজ্যেই এই ব্যবস্থা অনুমোদন পেয়েছে। আগে এটি মূলত গ্রামীণ এলাকার সীমিত উদ্যোগ ছিল। এখন শহর ও উপশহরেও তা পৌঁছে গেছে। মিসৌরির কানসাস সিটির কাছের ইন্ডিপেনডেন্স শহরের ভোটাররাও সম্প্রতি তাদের চৌদ্দ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য এই ব্যবস্থা বজায় রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন।
শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ব্যবস্থার জনপ্রিয়তা চোখে পড়ার মতো। অনেক অভিভাবকও সন্তুষ্ট, কারণ পরিবারে একসঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, সপ্তাহের চাপ কমেছে, বাচ্চারা মানসিকভাবে বেশি স্বস্তিতে আছে।
পাঠদানের ঘাটতি ও পরীক্ষার ফল
তবে শিক্ষাগত ফলাফলের প্রশ্নে চিত্র এতটা উজ্জ্বল নয়। সাধারণত চার দিনের ক্লাসে বাকি চার দিন সময় একটু বাড়ানো হয়। গবেষণা সংস্থাগুলোর মতে, এতে মোট পাঠদানের সময় কিছুটা কমে যায়। এর প্রভাব পরীক্ষার ফলে দেখা যায়। শিক্ষা গবেষকদের ধারণা, শিক্ষার্থীরা গড়ে দুই থেকে সাত সপ্তাহ পিছিয়ে পড়তে পারে। যদিও গ্রামীণ স্কুল বা যেখানে পাঠঘণ্টা প্রায় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে, সেখানে ক্ষতি তুলনামূলক কম।
শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ ও আচরণ
অনেক শিক্ষক বলছেন, শিক্ষার্থীরা এখন কম ক্লান্ত থাকে। শ্রেণিকক্ষে মনোযোগ বাড়ছে, শৃঙ্খলাজনিত বড় সমস্যাও কমেছে। কিছু এলাকায় মারামারি ও হয়রানির ঘটনা কমার তথ্যও মিলেছে। তবে সব গবেষণায় একই ফল পাওয়া যায়নি। কিছু জরিপে দেখা গেছে, মনোবল নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের ধারণা ইতিবাচক হলেও বাস্তব চিত্রে তফাৎ খুব বেশি নয়।
অর্থ সাশ্রয় ও শিক্ষক ধরে রাখার প্রশ্ন
চার দিনের ক্লাস চালু করে স্কুল জেলাগুলোর বড় অঙ্কের অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে না। সাধারণত বাজেটের খুব সামান্য অংশই বাঁচে। তবু অনেক জেলা এটি বেছে নিচ্ছে শিক্ষক নিয়োগ ও ধরে রাখার সমস্যার সমাধান হিসেবে। কম বেতন ও কম করের এলাকায় এই ব্যবস্থা কিছুটা হলেও শিক্ষক ধরে রাখতে সহায়ক হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসকদের দাবি। যদিও সামগ্রিক গবেষণায় গ্রামীণ এলাকায় শিক্ষক ধরে রাখার বড় পরিবর্তনের প্রমাণ স্পষ্ট নয়।
ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের উদ্বেগ
কিছু শিক্ষাবিদ আশঙ্কা করছেন, একক অভিভাবক পরিবারের বা আর্থিকভাবে দুর্বল শিক্ষার্থীরা এই ব্যবস্থায় আরও পিছিয়ে পড়তে পারে। অতিরিক্ত এক দিনের তত্ত্বাবধান হারানো অনেক পরিবারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অভিভাবকদের বড় অংশই চার দিনের ক্লাস সপ্তাহ চালু রাখতে চান। অনেকেই বলছেন, জীবনের চাপ কমেছে, সন্তানরা আগের চেয়ে বেশি খুশি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















