০৫:৩১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
সমুদ্রের ভাসমান শহরে খাবারের মহাযজ্ঞ: ক্রুজ জাহাজে রান্নার বিশাল চ্যালেঞ্জ প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৩) রাজ্য বনাম কর্পোরেট শক্তি: হলিউডের পরের মহামার্জার কি আটকে দেবে অঙ্গরাজ্যগুলো আমেরিকা বড় হওয়ার গল্পে এক শিশু আর দুই অভিযাত্রীর অদৃশ্য শক্তি মার্কিন এপস্টেইন নথি প্রকাশে ক্লিনটনের নাম বেশি, ট্রাম্পের উল্লেখ সামান্য নির্বাচন সামনে রেখে সিইসির সঙ্গে বৈঠকে বসছেন তিন বাহিনীর প্রধান শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগে চিকিৎসক সাময়িক বরখাস্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু রোববার, সি ইউনিট দিয়ে সূচনা প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার বন্ধের দাবি রাকসু ভিপির প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পোড়ানোকারীরা জাতির শত্রু: মির্জা আব্বাস

গাজা শান্তি পরিকল্পনা থমকে গেলে মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও ঢেউ উঠবে

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও মানুষের ভয়ের শেষ নেই। আকাশ থেকে বোমার আশঙ্কা কিছুটা কমেছে, কিন্তু শীতের প্রকোপ এখন নতুন আতঙ্ক। ডিসেম্বরের শুরুতে প্রবল শীতকালীন ঝড়ে গাজার বহু শরণার্থী তাঁবু পানিতে তলিয়ে যায়। বরফঠান্ডা পানিতে দাঁড়িয়ে রাত কাটাতে হয় অসংখ্য পরিবারকে। ঠান্ডাজনিত কারণে অন্তত চার নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। দুই মাস আগে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতির চুক্তি যেন বাস্তব অর্থেই কাদায় ডুবে যাচ্ছে।

প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি মূলত লড়াই থামিয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপ ছিল অনেক বেশি উচ্চাভিলাষী। এই পর্যায়ে হামাসকে নিরস্ত্র করা, নতুন প্রশাসনের হাতে গাজার দায়িত্ব দেওয়া এবং ধ্বংসস্তূপ থেকে অঞ্চলটি পুনর্গঠনের কথা ছিল। বাস্তবে সেই লক্ষ্য অর্জন হয়নি। হামাস অস্ত্র ছাড়তে রাজি নয়, ফলে পুনর্গঠন ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের পথও বন্ধ হয়ে আছে। আরও বিস্ময়কর হলো, শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ স্পষ্টভাবে কমে যাওয়া।

পুতিনকে বলব—যুদ্ধ বন্ধ কর, নইলে ইউক্রেনকে টমাহক দেব: ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েক সপ্তাহ ধরে যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার জন্য একটি শান্তি বোর্ড ঘোষণার ইঙ্গিত দিলেও এখনো কোনো ঘোষণা আসেনি। আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠনের কথাও উঠেছিল, কিন্তু তাতে অংশ নিতে কোনো দেশ এগিয়ে আসেনি। আঞ্চলিক কূটনীতিকদের অভিযোগ, শার্ম এল শেখে অক্টোবরে শান্তি পরিকল্পনা স্বাক্ষরের পর হোয়াইট হাউসের সঙ্গে গাজা নিয়ে তেমন যোগাযোগই নেই।

এই ফাঁকে ট্রাম্প ঘনিষ্ঠরা গাজার ইসরায়েল-নিয়ন্ত্রিত অংশে পরিকল্পিত বসতি গড়ার ধারণা সামনে আনছেন। প্রতিটি বসতিতে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি থাকার কথা, সঙ্গে থাকবে চিকিৎসাকেন্দ্র ও বিদ্যালয়। আশাবাদীরা বলছেন, এগুলো পুনর্গঠনের মডেল হতে পারে। তবে বাস্তব মূল্যায়নে এগুলো হবে প্রদর্শনী গ্রাম। গাজার মোট জনসংখ্যার মাত্র সামান্য অংশ সেখানে ঠাঁই পাবে। দাতা দেশগুলো নিজেদের নাম লাগিয়ে সাফল্য দেখাতে পারবে, কিন্তু যুদ্ধবিরতির অপর পাশে আটকে থাকা লাখো মানুষের দুর্দশা তাতে কমবে না।

Gaza's biggest city is in chaos ahead of an imminent Israeli assault | CNN

দ্বিতীয় ধাপে অগ্রগতি না হলে সবচেয়ে বড় ভোগান্তি পোহাতে হবে প্রায় বিশ লাখ গাজাবাসীকে। খাদ্যসংকট কিছুটা কমলেও জীবন কেবল খাবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বিলম্বের সুযোগে হামাস আবারও নিয়ন্ত্রণ জোরদার করছে। বিকল্প শক্তি না থাকায় তারাই হয়ে উঠছে একমাত্র কর্তৃত্ব। একই সঙ্গে মিসরের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কেও চাপ বাড়ছে। কায়রোর আশঙ্কা, গাজার দুরবস্থা আরও শরণার্থীকে সীমান্ত পেরোতে বাধ্য করতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গাজার মাঠপর্যায়ে কাজ করা ফিলিস্তিনি প্রযুক্তিবিদদের দায়িত্ব নির্ধারণ এবং শান্তি বোর্ড গঠন জরুরি। আঞ্চলিক দেশগুলোকেও স্থির করতে হবে তারা স্থিতিশীলতা বাহিনী, পুনর্গঠন নাকি উভয় ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখবে। পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি হামাসকে নিরস্ত্রীকরণে রাজি করানোর শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে। পাশাপাশি ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ত্রাণ চলাচলের পথ খুলে দেওয়া, টেকসই আশ্রয় ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাও জরুরি। বিদেশি গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে গাজায় কাজের সুযোগ দিলে বিশ্বজনমত আবারও সক্রিয় হতে পারে।

গাজার যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার সাফল্য কেবল ফিলিস্তিনি বা ইসরায়েলিদের জন্য নয়, এটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশ্বাসযোগ্যতারও পরীক্ষা। এই চুক্তি যদি কাগজে-কলমে আটকে যায়, তবে ইউক্রেনসহ অন্য অঞ্চলে শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দুর্বল হবে। গাজার ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বৈশ্বিক রাজনীতিতে আমেরিকার আস্থা ও নেতৃত্ব।

Israel-Hamas war: Strikes on Gaza kill more than 400 Palestinians as  ceasefire crumbles

 

Israeli army kills Palestinian in southern Gaza despite ceasefire

 

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

সমুদ্রের ভাসমান শহরে খাবারের মহাযজ্ঞ: ক্রুজ জাহাজে রান্নার বিশাল চ্যালেঞ্জ

গাজা শান্তি পরিকল্পনা থমকে গেলে মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও ঢেউ উঠবে

০৬:৩২:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও মানুষের ভয়ের শেষ নেই। আকাশ থেকে বোমার আশঙ্কা কিছুটা কমেছে, কিন্তু শীতের প্রকোপ এখন নতুন আতঙ্ক। ডিসেম্বরের শুরুতে প্রবল শীতকালীন ঝড়ে গাজার বহু শরণার্থী তাঁবু পানিতে তলিয়ে যায়। বরফঠান্ডা পানিতে দাঁড়িয়ে রাত কাটাতে হয় অসংখ্য পরিবারকে। ঠান্ডাজনিত কারণে অন্তত চার নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। দুই মাস আগে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতির চুক্তি যেন বাস্তব অর্থেই কাদায় ডুবে যাচ্ছে।

প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি মূলত লড়াই থামিয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপ ছিল অনেক বেশি উচ্চাভিলাষী। এই পর্যায়ে হামাসকে নিরস্ত্র করা, নতুন প্রশাসনের হাতে গাজার দায়িত্ব দেওয়া এবং ধ্বংসস্তূপ থেকে অঞ্চলটি পুনর্গঠনের কথা ছিল। বাস্তবে সেই লক্ষ্য অর্জন হয়নি। হামাস অস্ত্র ছাড়তে রাজি নয়, ফলে পুনর্গঠন ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের পথও বন্ধ হয়ে আছে। আরও বিস্ময়কর হলো, শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ স্পষ্টভাবে কমে যাওয়া।

পুতিনকে বলব—যুদ্ধ বন্ধ কর, নইলে ইউক্রেনকে টমাহক দেব: ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েক সপ্তাহ ধরে যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার জন্য একটি শান্তি বোর্ড ঘোষণার ইঙ্গিত দিলেও এখনো কোনো ঘোষণা আসেনি। আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠনের কথাও উঠেছিল, কিন্তু তাতে অংশ নিতে কোনো দেশ এগিয়ে আসেনি। আঞ্চলিক কূটনীতিকদের অভিযোগ, শার্ম এল শেখে অক্টোবরে শান্তি পরিকল্পনা স্বাক্ষরের পর হোয়াইট হাউসের সঙ্গে গাজা নিয়ে তেমন যোগাযোগই নেই।

এই ফাঁকে ট্রাম্প ঘনিষ্ঠরা গাজার ইসরায়েল-নিয়ন্ত্রিত অংশে পরিকল্পিত বসতি গড়ার ধারণা সামনে আনছেন। প্রতিটি বসতিতে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি থাকার কথা, সঙ্গে থাকবে চিকিৎসাকেন্দ্র ও বিদ্যালয়। আশাবাদীরা বলছেন, এগুলো পুনর্গঠনের মডেল হতে পারে। তবে বাস্তব মূল্যায়নে এগুলো হবে প্রদর্শনী গ্রাম। গাজার মোট জনসংখ্যার মাত্র সামান্য অংশ সেখানে ঠাঁই পাবে। দাতা দেশগুলো নিজেদের নাম লাগিয়ে সাফল্য দেখাতে পারবে, কিন্তু যুদ্ধবিরতির অপর পাশে আটকে থাকা লাখো মানুষের দুর্দশা তাতে কমবে না।

Gaza's biggest city is in chaos ahead of an imminent Israeli assault | CNN

দ্বিতীয় ধাপে অগ্রগতি না হলে সবচেয়ে বড় ভোগান্তি পোহাতে হবে প্রায় বিশ লাখ গাজাবাসীকে। খাদ্যসংকট কিছুটা কমলেও জীবন কেবল খাবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বিলম্বের সুযোগে হামাস আবারও নিয়ন্ত্রণ জোরদার করছে। বিকল্প শক্তি না থাকায় তারাই হয়ে উঠছে একমাত্র কর্তৃত্ব। একই সঙ্গে মিসরের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কেও চাপ বাড়ছে। কায়রোর আশঙ্কা, গাজার দুরবস্থা আরও শরণার্থীকে সীমান্ত পেরোতে বাধ্য করতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গাজার মাঠপর্যায়ে কাজ করা ফিলিস্তিনি প্রযুক্তিবিদদের দায়িত্ব নির্ধারণ এবং শান্তি বোর্ড গঠন জরুরি। আঞ্চলিক দেশগুলোকেও স্থির করতে হবে তারা স্থিতিশীলতা বাহিনী, পুনর্গঠন নাকি উভয় ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখবে। পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি হামাসকে নিরস্ত্রীকরণে রাজি করানোর শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে। পাশাপাশি ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ত্রাণ চলাচলের পথ খুলে দেওয়া, টেকসই আশ্রয় ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাও জরুরি। বিদেশি গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে গাজায় কাজের সুযোগ দিলে বিশ্বজনমত আবারও সক্রিয় হতে পারে।

গাজার যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার সাফল্য কেবল ফিলিস্তিনি বা ইসরায়েলিদের জন্য নয়, এটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশ্বাসযোগ্যতারও পরীক্ষা। এই চুক্তি যদি কাগজে-কলমে আটকে যায়, তবে ইউক্রেনসহ অন্য অঞ্চলে শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দুর্বল হবে। গাজার ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বৈশ্বিক রাজনীতিতে আমেরিকার আস্থা ও নেতৃত্ব।

Israel-Hamas war: Strikes on Gaza kill more than 400 Palestinians as  ceasefire crumbles

 

Israeli army kills Palestinian in southern Gaza despite ceasefire