১২:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
রাজ্য বনাম কর্পোরেট শক্তি: হলিউডের পরের মহামার্জার কি আটকে দেবে অঙ্গরাজ্যগুলো আমেরিকা বড় হওয়ার গল্পে এক শিশু আর দুই অভিযাত্রীর অদৃশ্য শক্তি মার্কিন এপস্টেইন নথি প্রকাশে ক্লিনটনের নাম বেশি, ট্রাম্পের উল্লেখ সামান্য নির্বাচন সামনে রেখে সিইসির সঙ্গে বৈঠকে বসছেন তিন বাহিনীর প্রধান শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগে চিকিৎসক সাময়িক বরখাস্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু রোববার, সি ইউনিট দিয়ে সূচনা প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার বন্ধের দাবি রাকসু ভিপির প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পোড়ানোকারীরা জাতির শত্রু: মির্জা আব্বাস পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীর সভ্যতার নেশা থেকে সংযমের সন্ধান: মদ কীভাবে মানুষ গড়েছে, আর প্রযুক্তি কীভাবে বদলাচ্ছে সেই সম্পর্ক

মার্কিন এপস্টেইন নথি প্রকাশে ক্লিনটনের নাম বেশি, ট্রাম্পের উল্লেখ সামান্য

WASHINGTON, DC - SEPTEMBER 30: U.S. President Donald Trump gives pauses to answer a reporters' question about a whistleblower as he leaves the Oval Office after hosting the ceremonial swearing in of Labor Secretary Eugene Scalia at the White House September 30, 2019 in Washington, DC. Scalia was nominated by Trump to lead the Labor Department after Alex Acosta resigned under criticism over a plea deal he reached with Jeffrey Epstein. (Photo by Chip Somodevilla/Getty Images)

মৃত অর্থলগ্নিকারী ও দণ্ডপ্রাপ্ত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টেইন–সংক্রান্ত হাজার হাজার নথি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। শুক্রবার প্রকাশিত এসব নথিতে সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের নাম ও ছবি তুলনামূলকভাবে বেশি থাকলেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উল্লেখ খুবই সীমিত।

কংগ্রেসের বাধ্যতামূলক আইন ও আংশিক প্রকাশ
গত নভেম্বরে কংগ্রেসের বিপুল সমর্থনে পাস হওয়া এক আইনের কারণে এসব নথি প্রকাশ করতে বাধ্য হয় বিচার বিভাগ। আইন অনুযায়ী সব এপস্টেইন ফাইল প্রকাশের নির্দেশ থাকলেও এবার দেওয়া নথিগুলো ছিল আংশিক এবং ব্যাপকভাবে গোপনীয় অংশ কালো করে দেওয়া। বহু নথি শতাধিক পৃষ্ঠার হলেও সেগুলোর বড় অংশ পুরোপুরি মুছে ফেলা হয়েছে। বিচার বিভাগ জানিয়েছে, আরও বিপুল সংখ্যক নথি তারা এখনো পর্যালোচনা করছে।

ট্রাম্পের নাম কেন কম
ট্রাম্প ও এপস্টেইনের সম্পর্ক নিয়ে অতীতে নানা ছবি ও নথি সামনে এলেও এবারের প্রকাশনায় ট্রাম্পের নাম খুব কম দেখা গেছে। যদিও আগের দফায় প্রকাশিত নথিতে এপস্টেইনের ব্যক্তিগত বিমানের যাত্রী তালিকায় ট্রাম্পের নাম পাওয়া গিয়েছিল। বিচার বিভাগীয় নথিতে ট্রাম্পের নাম অনুপস্থিত থাকায় বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই এবং তিনি বরাবরই এপস্টেইনের অপরাধ সম্পর্কে অজ্ঞতার কথা বলেছেন।

ক্লিনটনকে ঘিরে বিতর্ক
প্রকাশিত নথি ও ছবিতে বিল ক্লিনটনের উপস্থিতি বেশি হওয়ায় হোয়াইট হাউসের দুই মুখপাত্র সামাজিক মাধ্যমে ক্লিনটনকে এপস্টেইনের ভুক্তভোগীদের সঙ্গে দেখানো ছবি শেয়ার করেন। ক্লিনটনের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ অ্যাঞ্জেল উরেনা এ প্রতিক্রিয়াকে সমালোচনা করে বলেন, হোয়াইট হাউস নিজেদের প্রশ্ন থেকে দৃষ্টি সরাতে সাবেক প্রেসিডেন্টকে সামনে আনছে। ক্লিনটন আগেও এপস্টেইনের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্কের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন এবং কোনো অপরাধ সম্পর্কে জানতেন না বলে দাবি করেছেন।

আইন মানা হয়নি—দুই দলের অভিযোগ
হোয়াইট হাউস দাবি করেছে, এই প্রকাশনা তাদের স্বচ্ছতার প্রমাণ। তবে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলই নথি প্রকাশকে অসম্পূর্ণ বলে আখ্যা দিয়েছে। সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার বলেছেন, প্রকাশিত নথি পুরো প্রমাণভাণ্ডারের সামান্য অংশ। রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান থমাস ম্যাসি মন্তব্য করেছেন, এটি আইনের মর্ম ও ভাষা—দুটোরই লঙ্ঘন।

ভুক্তভোগীদের তথ্য ও সীমাবদ্ধতা
বিচার বিভাগ জানিয়েছে, অন্তত বারোশোর বেশি ভুক্তভোগী বা তাদের স্বজনদের নাম গোপন রাখতে হয়েছে। আইনে ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য এবং চলমান তদন্তে ক্ষতি হতে পারে—এমন উপাদান গোপন রাখার সুযোগ রয়েছে।

ট্রাম্প সমর্থকদের হতাশা ও রাজনৈতিক প্রভাব
এপস্টেইন ইস্যুতে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যেও অসন্তোষ রয়েছে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, রিপাবলিকানদের মধ্যে এ বিষয়ে ট্রাম্পের কাজের প্রতি সমর্থন তার সামগ্রিক জনপ্রিয়তার তুলনায় অনেক কম। ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে এই বিষয়টি তার রাজনৈতিক অবস্থানে চাপ তৈরি করেছে।

আগের ও সাম্প্রতিক প্রকাশনা
এর আগে ডেমোক্র্যাটরা এপস্টেইনের সম্পত্তি থেকে পাওয়া ইমেইল প্রকাশ করে, যেখানে ট্রাম্প সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য ছিল। রিপাবলিকানরাও পাল্টা ইমেইল প্রকাশ করে দাবি করেছে, ট্রাম্প এপস্টেইনের বাড়িতে গেলেও কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াননি। অতীতের নথিতে আরও দেখা গেছে, এপস্টেইনের সঙ্গে বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগাযোগ ছিল এবং তার ব্যাংকিং কার্যক্রম নিয়ে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে।

সার্বিকভাবে, এপস্টেইন নথির এই আংশিক প্রকাশ রাজনৈতিক বিতর্ক আরও তীব্র করেছে। স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্নের পাশাপাশি কার নাম কতটা উঠে এসেছে—সেই আলোচনা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

রাজ্য বনাম কর্পোরেট শক্তি: হলিউডের পরের মহামার্জার কি আটকে দেবে অঙ্গরাজ্যগুলো

মার্কিন এপস্টেইন নথি প্রকাশে ক্লিনটনের নাম বেশি, ট্রাম্পের উল্লেখ সামান্য

১০:০৩:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

মৃত অর্থলগ্নিকারী ও দণ্ডপ্রাপ্ত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টেইন–সংক্রান্ত হাজার হাজার নথি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। শুক্রবার প্রকাশিত এসব নথিতে সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের নাম ও ছবি তুলনামূলকভাবে বেশি থাকলেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উল্লেখ খুবই সীমিত।

কংগ্রেসের বাধ্যতামূলক আইন ও আংশিক প্রকাশ
গত নভেম্বরে কংগ্রেসের বিপুল সমর্থনে পাস হওয়া এক আইনের কারণে এসব নথি প্রকাশ করতে বাধ্য হয় বিচার বিভাগ। আইন অনুযায়ী সব এপস্টেইন ফাইল প্রকাশের নির্দেশ থাকলেও এবার দেওয়া নথিগুলো ছিল আংশিক এবং ব্যাপকভাবে গোপনীয় অংশ কালো করে দেওয়া। বহু নথি শতাধিক পৃষ্ঠার হলেও সেগুলোর বড় অংশ পুরোপুরি মুছে ফেলা হয়েছে। বিচার বিভাগ জানিয়েছে, আরও বিপুল সংখ্যক নথি তারা এখনো পর্যালোচনা করছে।

ট্রাম্পের নাম কেন কম
ট্রাম্প ও এপস্টেইনের সম্পর্ক নিয়ে অতীতে নানা ছবি ও নথি সামনে এলেও এবারের প্রকাশনায় ট্রাম্পের নাম খুব কম দেখা গেছে। যদিও আগের দফায় প্রকাশিত নথিতে এপস্টেইনের ব্যক্তিগত বিমানের যাত্রী তালিকায় ট্রাম্পের নাম পাওয়া গিয়েছিল। বিচার বিভাগীয় নথিতে ট্রাম্পের নাম অনুপস্থিত থাকায় বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই এবং তিনি বরাবরই এপস্টেইনের অপরাধ সম্পর্কে অজ্ঞতার কথা বলেছেন।

ক্লিনটনকে ঘিরে বিতর্ক
প্রকাশিত নথি ও ছবিতে বিল ক্লিনটনের উপস্থিতি বেশি হওয়ায় হোয়াইট হাউসের দুই মুখপাত্র সামাজিক মাধ্যমে ক্লিনটনকে এপস্টেইনের ভুক্তভোগীদের সঙ্গে দেখানো ছবি শেয়ার করেন। ক্লিনটনের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ অ্যাঞ্জেল উরেনা এ প্রতিক্রিয়াকে সমালোচনা করে বলেন, হোয়াইট হাউস নিজেদের প্রশ্ন থেকে দৃষ্টি সরাতে সাবেক প্রেসিডেন্টকে সামনে আনছে। ক্লিনটন আগেও এপস্টেইনের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্কের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন এবং কোনো অপরাধ সম্পর্কে জানতেন না বলে দাবি করেছেন।

আইন মানা হয়নি—দুই দলের অভিযোগ
হোয়াইট হাউস দাবি করেছে, এই প্রকাশনা তাদের স্বচ্ছতার প্রমাণ। তবে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলই নথি প্রকাশকে অসম্পূর্ণ বলে আখ্যা দিয়েছে। সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার বলেছেন, প্রকাশিত নথি পুরো প্রমাণভাণ্ডারের সামান্য অংশ। রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান থমাস ম্যাসি মন্তব্য করেছেন, এটি আইনের মর্ম ও ভাষা—দুটোরই লঙ্ঘন।

ভুক্তভোগীদের তথ্য ও সীমাবদ্ধতা
বিচার বিভাগ জানিয়েছে, অন্তত বারোশোর বেশি ভুক্তভোগী বা তাদের স্বজনদের নাম গোপন রাখতে হয়েছে। আইনে ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য এবং চলমান তদন্তে ক্ষতি হতে পারে—এমন উপাদান গোপন রাখার সুযোগ রয়েছে।

ট্রাম্প সমর্থকদের হতাশা ও রাজনৈতিক প্রভাব
এপস্টেইন ইস্যুতে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যেও অসন্তোষ রয়েছে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, রিপাবলিকানদের মধ্যে এ বিষয়ে ট্রাম্পের কাজের প্রতি সমর্থন তার সামগ্রিক জনপ্রিয়তার তুলনায় অনেক কম। ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে এই বিষয়টি তার রাজনৈতিক অবস্থানে চাপ তৈরি করেছে।

আগের ও সাম্প্রতিক প্রকাশনা
এর আগে ডেমোক্র্যাটরা এপস্টেইনের সম্পত্তি থেকে পাওয়া ইমেইল প্রকাশ করে, যেখানে ট্রাম্প সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য ছিল। রিপাবলিকানরাও পাল্টা ইমেইল প্রকাশ করে দাবি করেছে, ট্রাম্প এপস্টেইনের বাড়িতে গেলেও কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াননি। অতীতের নথিতে আরও দেখা গেছে, এপস্টেইনের সঙ্গে বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগাযোগ ছিল এবং তার ব্যাংকিং কার্যক্রম নিয়ে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে।

সার্বিকভাবে, এপস্টেইন নথির এই আংশিক প্রকাশ রাজনৈতিক বিতর্ক আরও তীব্র করেছে। স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্নের পাশাপাশি কার নাম কতটা উঠে এসেছে—সেই আলোচনা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।