রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ও ছাত্রশিবির নেতা মোস্তাকুর রহমান দৈনিক প্রথম আলো ও ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেওয়ার পর তা নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তাঁর এই বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উসকানিমূলক বলে অভিহিত করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ সমাবেশে বিতর্কিত ঘোষণা
বৃহস্পতিবার রাতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই রাজশাহীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। সেখানে বক্তব্য দিতে গিয়ে মোস্তাকুর রহমান বলেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম বন্ধ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ওই কর্মসূচিতে এসব পত্রিকার কোনো সাংবাদিক থাকলে সঙ্গে সঙ্গে চলে যেতে হবে।
সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়া
মোস্তাকুর রহমান একই সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি। তাঁর বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিভিন্ন মহল থেকে এই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করা হয়।
ঢাকায় সংবাদমাধ্যমে হামলার প্রেক্ষাপট
এই বক্তব্যের কিছুক্ষণ আগেই ঢাকায় প্রথম আলোর কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরে কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত ডেইলি স্টারের কার্যালয়েও হামলা চালিয়ে ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় ডেইলি স্টারের বহু কর্মী ভবনের ভেতরে আটকা পড়েন। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাঁদের উদ্ধার করেন।
আরও উত্তেজক মন্তব্য
বিক্ষোভ সমাবেশে মোস্তাকুর রহমান রাজশাহীতে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন উচ্ছেদের দাবিও তোলেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শিক্ষক ক্লাস নিতে পারবেন না। তাঁর বক্তব্যে আরও ছিল, হাদির রক্ত থেকে লক্ষ হাদি জন্ম নেবে—এমন মন্তব্য।
শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ ও বিবৃতি
রাকসু ভিপি ও শিবির নেতার এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে শনিবার বিবৃতি দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত শরিফ ওসমান হাদির আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, হাদির হত্যাকে কেন্দ্র করে একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ও উদীচীতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়েছে। একই ঘটনায় ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ-এর সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীরের ওপর হামলার ঘটনাও উল্লেখ করা হয়।
বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাঁদের বিবৃতিতে মোস্তাকুর রহমানের বক্তব্যকে দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে দেওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয় মন্তব্য বলে উল্লেখ করেন। তাঁদের মতে, এমন বক্তব্য চলমান উগ্রতা ও সহিংসতাকে আরও উসকে দেয়। তাঁরা অবিলম্বে ওই বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান।
সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পরও দেশজুড়ে নৈরাজ্য, মব সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ চলমান থাকা এবং জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর হত্যাকাণ্ড ও অরাজকতার ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকারের চরম ব্যর্থতার পরিচয় বহন করে। এসব পরিস্থিতি গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তাঁরা। সংশ্লিষ্ট সব অপরাধীকে দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করার জোর দাবি জানানো হয়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















