ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের অবসান নিয়ে নতুন করে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ফ্লোরিডায় বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। শান্তিচুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনায় কিছু অগ্রগতির ইঙ্গিত মিললেও, রাশিয়ার কঠোর অবস্থান বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়ে গেছে।
ফ্লোরিডায় যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া বৈঠক
যুক্তরাষ্ট্রের আলোচকরা শনিবার ফ্লোরিডায় রাশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যেই এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন চায়, আলোচনার মাধ্যমে রাশিয়া ও ইউক্রেনকে একটি সমঝোতায় আনা হোক।
এই বৈঠকের ঠিক আগের দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ইউক্রেন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক আলোচনা করেছেন। এসব আলোচনা একটি সম্ভাব্য শান্তি পরিকল্পনা ঘিরে, যা দীর্ঘদিনের সংঘাতের অবসান ঘটাতে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
রুশ প্রতিনিধিদল ও মার্কিন পক্ষ
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ রুশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন কূটনীতিক স্টিভ উইটকফ এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিওও আলোচনায় যোগ দিতে পারেন বলে জানিয়েছেন।
এর আগেও ফ্লোরিডার মায়ামির কাছে উইটকফের গলফ ক্লাবে এ ধরনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কিয়েভের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে অগ্রগতি
এই সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধ শেষ করার আলোচনায় কিয়েভের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তবে এসব শর্ত মস্কোর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
রুশ একটি সূত্র জানিয়েছে, রুশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইউক্রেনীয় আলোচকদের সরাসরি কোনো বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
পুতিনের অনড় অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন এখনো পুরো ইউক্রেন দখলের লক্ষ্য থেকে সরে আসেননি। এই তথ্য কিছু মার্কিন কর্মকর্তার সেই বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, যেখানে বলা হচ্ছিল রাশিয়া শান্তির জন্য প্রস্তুত।
মস্কোতে বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন স্পষ্ট করে বলেন, যুদ্ধ বন্ধের শর্তে রাশিয়ার অবস্থান বদলায়নি। তিনি আবারও দাবি করেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে এবং রাশিয়া যে চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চল নিজেদের দাবি করছে, সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।
কিয়েভের স্পষ্ট বার্তা
ইউক্রেন সরকার জানিয়েছে, প্রায় চার বছর ধরে চলা যুদ্ধে যেসব এলাকা রুশ বাহিনী দখল করতে পারেনি, সেসব ভূখণ্ড তারা কোনোভাবেই ছেড়ে দেবে না।
ইউক্রেনের প্রধান আলোচক রুস্তেম উমেরভ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে তারা যৌথভাবে আলোচনার পথ এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, আলোচনার ফলাফল তিনি প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে অবহিত করেছেন।
মার্কিন প্রশাসনের অবস্থান
হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে মার্কো রুবিও সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হলেও এখনো অনেক পথ বাকি।
তিনি স্পষ্ট করেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষকেই জোর করে চুক্তিতে বাধ্য করতে পারবে না। ইউক্রেন বা রাশিয়া—উভয় পক্ষকেই সমঝোতায় আগ্রহী হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা হলো, দুই পক্ষের মধ্যে এমন কোনো মিল খুঁজে বের করা, যেখানে তারা একমত হতে পারে।
রুবিও আশা প্রকাশ করেন, বছরের শেষ হওয়ার আগেই যদি কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়, সেটিই হবে সবচেয়ে বড় সাফল্য।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















