শিকাগো শহরের দক্ষিণে নামলেই চোখে পড়ে এক বিশাল সেতু। নির্দিষ্ট টোল দিলেই গাড়িচালক পেরিয়ে যান ইন্ডিয়ানা সীমান্ত। বাইরে থেকে এটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিস্ময় মনে হলেও ভেতরে ভেতরে এর সাফল্য আর্থিক কৌশলে। কয়েক দশক আগে সেতুর নাম ব্যবহার করে টোল বসানো ছিল রাজনৈতিক কৌশল। আজ সেই টোলই হয়ে উঠছে খোলামেলা নীতি।
সেতুর নামে টোল, ইতিহাসের ফাঁকফোকর
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে শিকাগোর তৎকালীন মেয়র সেতুর নাম দিয়ে প্রকল্প চালু করেন, যাতে ফেডারেল সড়ক তহবিল বজায় রেখেই চালকের কাছ থেকে টাকা নেওয়া যায়। সেই সময় টোল বাড়াতে হলে রাজনীতিকদের গোপন পথ নিতে হতো। এখন পরিস্থিতি উল্টো। টোল আদায় নিজেই জনপ্রিয় নীতিতে পরিণত হচ্ছে।

ইন্ডিয়ানার সিদ্ধান্ত ও জাতীয় দৃষ্টান্ত
ডিসেম্বর মাসে ইন্ডিয়ানার গভর্নর এমন আইন স্বাক্ষর করেছেন, যাতে রাজ্য চাইলে আন্তঃরাজ্য মহাসড়কে টোল বাড়াতে পারে। পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, আগে কোনো রাজ্য এমন পদক্ষেপ নেয়নি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মোট মহাসড়কের সামান্য অংশেই টোল দিতে হয়। তবে ফেডারেল অনুমতি মিললে এই সংখ্যা দ্রুত বাড়তে পারে।
জ্বালানি করের যুগ শেষের পথে
ফেডারেল মহাসড়ক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল পেট্রোল করের অর্থে। প্রতি গ্যালন জ্বালানির ওপর নির্দিষ্ট কর দিয়ে চালকেরাই সড়কের খরচ বহন করতেন। কিন্তু সময় বদলেছে। গাড়ি জ্বালানি সাশ্রয়ী হলেও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বেড়েছে। জ্বালানি কর বাড়ানো রাজনৈতিকভাবে অজনপ্রিয় হয়ে পড়ায় তহবিলে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক অর্থবছরে সড়ক রক্ষণে ব্যয়ের তুলনায় আয়ের ঘাটতি কয়েক দশক আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

ঘাটতি সামাল দিতে টোলের যুক্তি
রাজ্য আইনপ্রণেতাদের ভাষ্য, টোল ছাড়া বিকল্প কম। বিশেষ করে বাইরের রাজ্যের চালকরা স্থানীয় কর না দিয়েই সড়ক ব্যবহার করেন। টোল বসালে তারাই খরচের অংশ বহন করবেন। পাশাপাশি কিছু চালক নিরুৎসাহিত হওয়ায় যানজটও কমে।
দ্রুত লেন ও পরিবর্তনশীল ভাড়া
কিছু মহাসড়কে যুক্ত হয়েছে দ্রুতগামী বিশেষ লেন। যানজট বেশি হলে টোল বাড়ে, কমলে কমে। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ব্যস্ত সড়কে কয়েক মিনিট পরপর টোল সমন্বয় করা হয়। এই মডেল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

রাজনীতি ও টোলের দ্বন্দ্ব
টোল নীতিতে দুই দলের সমর্থন দেখা গেলেও সাম্প্রতিক কালে রাজনীতিতে বিভাজন বাড়ছে। কোথাও যানজট নিয়ন্ত্রণের নামে টোলের বিরোধিতা জোরালো। আবার কোথাও টোল সড়ক কিনে নিয়ে বিনামূল্যে করার দাবিও উঠছে। সমালোচকদের মতে, এতে রাষ্ট্র খরচ বাড়াবে, বিনিময়ে মানুষকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড় করাবে।
আমেরিকার সড়ক ভবিষ্যৎ তাই এখন এক প্রশ্নে আটকে। ব্যবহারকারী দেবে মূল্য, না কি পুরো সমাজ বহন করবে খরচ।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















