হংকংয়ের বহুল আলোচিত মিডিয়া উদ্যোক্তা জিমি লাইয়ের বিরুদ্ধে রায় শুধু একজন ব্যক্তির বিচার নয়, এটি শহরের নাগরিক স্বাধীনতার বর্তমান অবস্থার এক শক্ত প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। বিদেশি শক্তির সঙ্গে আঁতাত ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে জাতীয় নিরাপত্তা আদালতের তিন বিচারক তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে দেওয়া এই রায় হংকংয়ের রাজনৈতিক বাস্তবতা নতুন করে সামনে এনেছে।
রায় ঘোষণার মুহূর্ত
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি দিনে আদালতে যখন রায় পড়ে শোনানো হয়, তখন জিমি লাইকে বিস্মিত মনে হয়নি। প্রায় পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিচারকাজে তিনি নিজেই দীর্ঘ সময় সাক্ষ্য দিয়েছেন। এর আগেই অনুমোদনহীন সমাবেশ ও জালিয়াতির মামলায় কারাভোগের কারণে তিনি বহু দিন ধরে বন্দি। চূড়ান্ত সাজা ঘোষণার সময় তার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আশঙ্কা রয়েছে।

গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান
চীনে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে জিমি লাইয়ের সম্পৃক্ততা বহু পুরোনো। উনিশশো ঊননব্বই সালের তিয়েনআনমেন ঘটনার পর থেকেই তিনি প্রকাশ্যে গণতান্ত্রিক আদর্শের পক্ষে কথা বলেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যম হংকংয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছে এবং লাখো মানুষের আন্দোলনের সময় তার কণ্ঠস্বর স্পষ্ট ছিল। তবে তার পত্রিকাগুলোকে অনেকেই অতিরঞ্জিত ও উত্তেজনাপূর্ণ বলেও সমালোচনা করেছেন।
বিচারকের পর্যবেক্ষণ
দীর্ঘ রায়ে বিচারক বলেছেন, জিমি লাই পশ্চিমা শক্তির প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন এবং সরকারের বৈধতা ক্ষুণ্ন করতে উসকানিমূলক লেখা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, জাতীয় নিরাপত্তা আইন কার্যকর হওয়ার পরও তিনি পরোক্ষভাবে আন্তর্জাতিক লবিং চালিয়ে গেছেন। অন্যদিকে প্রতিরক্ষা পক্ষের দাবি ছিল, আইন কার্যকর হওয়ার পর তিনি এসব কার্যক্রম বন্ধ করেছিলেন।

জাতীয় নিরাপত্তা আইন ও নতুন বাস্তবতা
দুই হাজার কুড়ি সালে প্রণীত জাতীয় নিরাপত্তা আইন হংকং এর আইনি কাঠামোকে আমূল বদলে দেয়। রাষ্ট্রদ্রোহ, বিদেশি শক্তির সঙ্গে আঁতাতের মতো নতুন ও বিস্তৃত অপরাধের সংজ্ঞা যুক্ত হয়। পরবর্তী সময়ে আরও কঠোর বিধান এনে শাস্তির মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। এসব মামলায় জুরি ছাড়াই বিশেষভাবে নির্বাচিত বিচারকের মাধ্যমে বিচার পরিচালিত হচ্ছে।
দেশ ও বিদেশে প্রতিক্রিয়া
হংকংয়ের ভেতরে মানুষের মধ্যে এক ধরনের হতাশা ও নীরব স্বীকৃতির অনুভূতি দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এই রায়ের পর শহরের রাজনৈতিক পরিসর আরও সংকুচিত হলো। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় পক্ষ থেকে মামলাটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলা হয়েছে। তবে চীন স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, হংকংয়ের বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ তারা মেনে নেবে না।
প্রতীক হয়ে থাকা এক জীবন
এক সময় শূন্য হাতে হংকংয়ে আসা এক কিশোর থেকে সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা জিমি লাই আজ অনেকের কাছে শহরটির বদলে যাওয়া পরিচয়ের প্রতীক। সমর্থকদের চোখে তিনি নিজের বিশ্বাসে অবিচল একজন মানুষ, যিনি ব্যক্তিগত পরিণতির চেয়ে আদর্শকে বড় করে দেখেছেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















