লাহোরে পাকিস্তানের একটি আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকে পৃথক একটি দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন। শনিবার ঘোষিত এই রায়ে রাষ্ট্রীয় উপহার কম দামে কেনার অভিযোগে তাঁদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
দুর্নীতির অভিযোগ ও মামলার পটভূমি
এই মামলাটি রাষ্ট্রীয় বিলাসবহুল উপহার, বিশেষ করে ঘড়ি সংক্রান্ত। অভিযোগ অনুযায়ী, সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সরকারি সফরের সময় ইমরান খানকে যে দামী ঘড়ি উপহার দিয়েছিলেন, সেগুলো রাষ্ট্রীয় ভাণ্ডার থেকে বিধি ভেঙে অত্যন্ত কম দামে কেনা হয়। এতে রাষ্ট্রের কয়েক মিলিয়ন রুপি ক্ষতি হয়েছে বলে প্রসিকিউশনের দাবি।
রায় ও সাজা
আদালত জানিয়েছে, ইমরান খান ও বুশরা বিবিকে আস্থাভঙ্গের অপরাধে পাকিস্তানের দণ্ডবিধি অনুযায়ী ১০ বছর এবং দুর্নীতিবিরোধী আইনে আরও ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে ভারী অঙ্কের জরিমানাও ধার্য করা হয়েছে।
আগের সাজা ও কারাবাস
ইমরান খান আগস্ট ২০২৩ থেকে কারাগারে রয়েছেন। এর আগে একটি জমি দুর্নীতির মামলায় তিনি ১৪ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। তথ্য অনুযায়ী, নতুন এই ১৭ বছরের সাজা কার্যকর হবে আগের ১৪ বছরের সাজা শেষ হওয়ার পর।
আইনি অবস্থান ও প্রতিক্রিয়া
ইমরান খানের পরিবারের আইনজীবী রানা মুদাসসির উমর বলেছেন, আত্মপক্ষের বক্তব্য না শুনেই আদালত রায় ঘোষণা করেছে। তাঁর মতে, এটি ন্যায়বিচারের মৌলিক নীতির পরিপন্থী। ইমরান খানের ঘনিষ্ঠরা দাবি করছেন, এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ইমরান খান সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন এবং তাঁর আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আপিল করা হবে।
টশাখানা মামলা ও রাজনৈতিক প্রভাব
পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয় উপহার সংক্রান্ত এসব মামলাকে সাধারণভাবে ‘টশাখানা মামলা’ বলা হয়। এর আগেও একই ধরনের একটি মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির সাজা আপিলে স্থগিত হয়েছিল।
রায় ঘোষণার পর ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পাঞ্জাবজুড়ে বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে। দলটির অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ইমরান খানের সঙ্গে পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীদের সাক্ষাৎ বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
এক সময়ের জনপ্রিয় ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা ইমরান খান পাকিস্তানের সবচেয়ে বিতর্কিত রাজনৈতিক চরিত্রগুলোর একজন। ক্ষমতা থেকে অপসারিত হওয়ার পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা চলছে, আর এসব আইনি লড়াইয়ের মধ্যেই তাঁর দল বর্তমানে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















