গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র
নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা এবং সমালোচনামূলক সাংবাদিকতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে দেশের শীর্ষ সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা। তাঁদের মতে, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ গণমাধ্যম গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান ভিত্তি, যা কোনোভাবেই দুর্বল করা যাবে না।
কঠিন সময় পার করছে সংবাদমাধ্যম
রোববার এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে গণমাধ্যম বর্তমানে সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশের দুটি শীর্ষ দৈনিক পত্রিকার কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা গণমাধ্যমের জন্য ভয়াবহ সংকেত। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতার আহ্বান
বক্তারা বলেন, ভবিষ্যৎ সরকারকে অবশ্যই সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে হবে এবং জবাবদিহির পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সমালোচনামূলক সাংবাদিকতা শুধু গণমাধ্যমের অধিকার নয়, বরং সুশাসনের জন্য একটি বড় সুযোগ।
সংবাদমাধ্যমে নজিরবিহীন হামলার প্রসঙ্গ
একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক বলেন, দেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে আগে কখনো কোনো সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি। প্রথমবারের মতো শীর্ষ দুটি পত্রিকার অফিসে হামলা হয়েছে, যা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভঙ্গুর অবস্থারই প্রতিফলন।

নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা
তাঁরা আশা প্রকাশ করেন, নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে, যেখানে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ গণমাধ্যম কাজ করার সুযোগ পাবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়।
গত শাসনামলে গণমাধ্যমের অভিজ্ঞতা
আরেক সম্পাদক বলেন, গত দীর্ঘ সময়ের শাসনামল ছিল গণমাধ্যমের জন্য কঠিন ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ। মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, মালিকানা পরিবর্তন এবং সংবাদকক্ষে চাপ ছিল নিত্যদিনের বাস্তবতা। তুলনামূলকভাবে অতীতের অন্য সময়গুলো গণমাধ্যমের জন্য কিছুটা স্বস্তিদায়ক ছিল বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
রাজনৈতিক শূন্যতা ও জননিরাপত্তা
সভায় বলা হয়, বর্তমানে দেশে এক ধরনের রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে, যা ঝুঁকিপূর্ণ। সড়ক অবরোধ, হামলা ও অস্থিরতার ঘটনায় মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এই অবস্থায় জনগণ বড় রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করছে।
ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা
বক্তারা সতর্ক করে বলেন, জাতীয় ঐক্য না থাকলে রাষ্ট্রই ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো আসছে, তা মোকাবিলায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
সাংবাদিকতার নৈতিকতা ও দায়িত্ব
সভায় সাংবাদিকদের দায়িত্ব নিয়েও আলোচনা হয়। বক্তারা বলেন, সাংবাদিকতার কাজ শুধু সমালোচনা নয়, সরকারের ভালো কাজের স্বীকৃতিও দেওয়া। একই সঙ্গে সাংবাদিক ও সরকার উভয়েরই ভুল স্বীকার করার সাহস থাকতে হবে।
স্বাধীন ও নৈতিক সাংবাদিকতার অঙ্গীকার
অনেকে বলেন, ভবিষ্যৎ সরকারকে নৈতিক ও সৎ সাংবাদিকতা চর্চার পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং দলীয় ইশতেহারে স্বাধীন গণমাধ্যমের সুরক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

সংলাপের প্রস্তাব
সংবাদপত্র মালিকদের একজন প্রতিনিধি প্রস্তাব দেন, নির্বাচনের পর সরকার ও গণমাধ্যমের মধ্যে নিয়মিত সংলাপ হওয়া দরকার। এতে সরকারের ভুলত্রুটি গঠনমূলকভাবে তুলে ধরার সুযোগ তৈরি হবে।
ব্যঙ্গ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
একজন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব বলেন, সমাজে ব্যঙ্গ ও রসবোধের অধিকার থাকা জরুরি। একই সঙ্গে টক শো বা আলোচনায় কারা অংশ নেবে, সে বিষয়ে কোনো নিরাপত্তা সংস্থার হস্তক্ষেপ থাকা উচিত নয়।
বিএনপির আশ্বাস
সভায় উপস্থিত বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা বলেন, দলটি ক্ষমতায় এলে গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। অতীতের দমন-পীড়নের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন তিনি। তাঁর মতে, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে এর ভূমিকা অপরিসীম।
এই মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং বিএনপির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















