দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের সামনে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দলের সদস্যসহ বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের উদ্যোগে বড় ধরনের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত সপ্তাহে হিন্দু যুবক দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভ চলাকালে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটে।
বিক্ষোভের আশঙ্কায় আগেই হাইকমিশনের বাইরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এলাকাজুড়ে তিন স্তরের ব্যারিকেড বসানো হয় এবং প্রায় পনেরো হাজার পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়। তবুও শত শত বিক্ষোভকারী ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খায়।
বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় এবং বিভিন্ন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে। কয়েকটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, হিন্দুর রক্তের প্রতিটি ফোঁটার হিসাব চাই। বিক্ষোভকারীদের এগিয়ে যাওয়া ঠেকাতে দিল্লি পরিবহন সংস্থার বাসও রাস্তায় আড়াআড়িভাবে দাঁড় করানো হয়। পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের হাইকমিশন থেকে প্রায় আটশ মিটার দূরে আটকে রাখা সম্ভব হয়।
বিক্ষোভস্থলে উপস্থিত এক ব্যক্তি বলেন, এক হিন্দু যুবককে নির্মমভাবে মারধর করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা আমাদের সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, যারা এই হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে আমরা চাই, বাংলাদেশ পুলিশও যেন দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়।
গত ১৮ ডিসেম্বর পঁচিশ বছর বয়সী গার্মেন্টস শ্রমিক দিপু দাসকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে প্রথমে তার কারখানার তত্ত্বাবধায়কেরা চাকরি ছাড়তে বাধ্য করেন। এরপর তাকে একটি উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দেওয়া হয়। জনতা তাকে নির্মমভাবে মারধর করে হত্যা করে, পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তার মরদেহ ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই ঘটনায় পুলিশ অন্তত বারো জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতিক্রিয়া
আজকের বিক্ষোভের ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং দিল্লিতে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করেছে। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কূটনৈতিক স্থাপনার বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত সহিংসতা বা ভীতি প্রদর্শনের যেকোনো ঘটনা বাংলাদেশ নিন্দা জানায়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড কূটনৈতিক কর্মীদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে ফেলে এবং পারস্পরিক সম্মান, শান্তি ও সহনশীলতার মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ন করে।
বিবৃতিতে কূটনৈতিক কর্মী ও স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
দিল্লির পাশাপাশি কলকাতায়ও বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। এর জেরে ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মিশনের চারপাশে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং প্রধান ফটকের বাইরে সাঁজোয়া যান অবস্থান নিয়েছে।
ইন্দ্রজিৎ কুণ্ডু 



















