সিঙ্গাপুরে প্রবেশে কঠোর অবস্থান
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে মোট ৪১ হাজার ৮০০ জন বিদেশিকে সিঙ্গাপুরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। দেশটির অভিবাসন ও চেকপয়েন্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২৬ সাল থেকে বিদেশি যাত্রীদের ওপর নজরদারি আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নতুন ‘নো বোর্ডিং ডিরেকটিভ’ কী
২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে ‘নো বোর্ডিং ডিরেকটিভ’ বা এনবিডি কার্যকর হবে। এই ব্যবস্থার আওতায় যেসব যাত্রী সিঙ্গাপুরে প্রবেশের যোগ্য নন, তাদের বিমানে উঠতেই বাধা দেওয়া হবে। শুরুতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, স্কুট, এমিরেটস, টার্কিশ এয়ারলাইন্স ও এয়ারএশিয়া এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে। মার্চ থেকে আরও এয়ারলাইন্স যুক্ত হবে।
প্রবেশে বাধা পাওয়া যাত্রী কেন বাড়ছে
কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত যাদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে, সেই সংখ্যা ২০২৪ সালের পুরো বছরের তুলনায় প্রায় ২৬ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালের তুলনায় এই বৃদ্ধি প্রায় ৪৬ শতাংশ। উন্নত প্রযুক্তি ও নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে আগের চেয়ে বেশি ‘অযোগ্য’ বা ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রী শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।
প্রযুক্তির মাধ্যমে আগাম শনাক্তকরণ
সিঙ্গাপুর এখন বহুস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা পদ্ধতি ব্যবহার করছে। স্বয়ংক্রিয় লেন, জালিয়াতি শনাক্তকারী ব্যবস্থা এবং আইরিস ও মুখমণ্ডলের বায়োমেট্রিক তথ্যের মাধ্যমে ভুয়া পরিচয় বা একাধিক পরিচয় ব্যবহারকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করা হচ্ছে। যেসব ব্যক্তি আগে অপরাধে জড়িত ছিলেন বা যাদের দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে, তাদেরও এই ব্যবস্থায় ধরা পড়ছে।
আগেই ঝুঁকি বিশ্লেষণ
ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের আগাম তথ্য ও তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চিহ্নিত করছে। তবে শুধু ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হলেই কাউকে প্রবেশে নিষেধ করা হয় না। এসব যাত্রীকে স্বয়ংক্রিয় লেনে থামিয়ে অতিরিক্ত জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত করা হয়। এরপরই তাদের প্রবেশের যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদাহরণ
যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় আগেই এমন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসবাদ সংশ্লিষ্ট তালিকার সঙ্গে যাত্রীদের তথ্য মিলিয়ে দেখা হয়। অস্ট্রেলিয়ায়ও গুরুতর অপরাধী বা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের আগাম শনাক্ত করা হয়। সিঙ্গাপুরও একইভাবে সীমান্তের আগেই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রীদের আটকাতে চায়।
এয়ারলাইন্সের ভূমিকা বদলাচ্ছে
বর্তমানে এয়ারলাইন্সগুলো হাতে-কলমে পাসপোর্ট ও কাগজপত্র দেখে যাত্রী যাচাই করে, যা ভুলের ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন ব্যবস্থায় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সিস্টেম থেকে এয়ারলাইন্স সরাসরি নির্দেশনা পাবে। যাত্রী চেক-ইন করার সময় যদি এনবিডি জারি থাকে, তাহলে তাকে বিমানে উঠতে দেওয়া হবে না।
আপত্তির সুযোগ থাকবে
যাদের বিরুদ্ধে এনবিডি জারি হবে, তারা চাইলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিশেষ অনুমতি নিতে পারবেন। অনুমতি ছাড়া নতুন করে টিকিট কেটে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না।
স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় কাজের চাপ কমছে
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পাসপোর্ট ছাড়াই বায়োমেট্রিক ক্লিয়ারেন্স চালু হওয়ায় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের কাজ সহজ হয়েছে। এতে কম সময়ে বেশি যাত্রী নিরাপদভাবে যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে এবং দীর্ঘ লাইনের চাপও কমছে।
স্থলপথেও নজরদারি থাকবে
নতুন নির্দেশনা মূলত বিমান ও নৌপথে কার্যকর হলেও স্থলপথে নজরদারি কমবে না। স্থলপথে আগত বিদেশিদের আগাম তথ্য নেওয়া অব্যাহত থাকবে। কর্তৃপক্ষের ভাষায়, উদ্দেশ্য একটাই—অযোগ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রীদের সিঙ্গাপুরে ঢুকতেই না দেওয়া।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















