লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ সাম্প্রতিক সংঘাতে বড় ধাক্কা খেলেও পুরোপুরি ভেঙে পড়েনি। নিরস্ত্রীকরণ প্রশ্নে টানাপোড়েন, ইসরায়েলের প্রায় প্রতিদিনের হামলা এবং যুক্তরাষ্ট্রের চাপ মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে।
যুদ্ধ-পরবর্তী বাস্তবতায় হিজবুল্লাহ
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে এক বছরের সংঘাত শেষে যুদ্ধবিরতি হলেও পরিস্থিতি এখনও স্থিতিশীল নয়। লেবানন সরকার এক বছর আগে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সেই প্রক্রিয়ার গতি ধীর হওয়ায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তোষ বাড়ছে। হিজবুল্লাহ দাবি করছে, তারা সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সশস্ত্র যোদ্ধা সরিয়ে নিয়েছে এবং বড় অংশের অস্ত্রভাণ্ডার হারিয়েছে। তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মতে, সংগঠনটি নতুন করে শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করছে, যা আবারও বড় সামরিক অভিযানের ঝুঁকি তৈরি করছে
নিরস্ত্রীকরণে রাজনৈতিক জটিলতা
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম জানিয়েছেন, লিতানি নদীর দক্ষিণে নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরপর দেশের অন্য অংশে নজর দেওয়া হবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের হামলা বন্ধ ও লেবানন ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহারের মতো ছাড় ছাড়া দ্রুত পদক্ষেপ নিলে দেশের ভেতরে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। হিজবুল্লাহ কেবল একটি মিলিশিয়া নয়, তারা সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক শক্তিও, যার শিকড় গভীরভাবে প্রোথিত শিয়া জনগোষ্ঠীতে।

হিজবুল্লাহ কতটা শক্তি ধরে রেখেছে
গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে রকেট ও ড্রোন হামলা শুরু করে। সংঘাত তীব্র হলে লেবাননে বাস্তুচ্যুত হয় দশ লক্ষাধিক মানুষ, নিহত হয় প্রায় চার হাজার, যাদের বেশিরভাগই লেবাননের নাগরিক। ইরানের সহায়তায় গড়ে ওঠা এই গোষ্ঠী একসময় লেবাননের নিয়মিত সেনাবাহিনীর চেয়েও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তবে সাম্প্রতিক যুদ্ধে তারা হাজারো যোদ্ধা ও দীর্ঘদিনের নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হারিয়েছে। সীমান্ত এলাকায় তাদের উপস্থিতি কমলেও রাজধানী বৈরুতের আশপাশে এখনও শক্ত অবস্থান রয়েছে বলে বিভিন্ন পক্ষ দাবি করছে।
ইসরায়েল কি আবার হামলা বাড়াবে
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে বলেছেন, লেবানন নিজেই যদি হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করে, তবে যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব। কিন্তু ইসরায়েলের নতুন নিরাপত্তা নীতিতে উদীয়মান হুমকি আগেভাগেই দমন করার কথা বলা হচ্ছে। সাবেক গোয়েন্দা প্রধান তামির হাইমানের মতে, শত্রু দুর্বল থাকতেই ঝুঁকি নেওয়াই ইসরায়েলের কৌশল। অন্যদিকে লেবাননের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ইসরায়েলের লাগাতার হামলা হিজবুল্লাহর প্রতিরোধের বয়ানকে আরও শক্তিশালী করছে।
আন্তর্জাতিক সহায়তা ও ভবিষ্যৎ সমীকরণ
হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে পারলে পশ্চিমা ও উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে বিপুল আর্থিক সহায়তা পাওয়ার আশায় রয়েছে লেবানন। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত লেবানন সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজন বলে সরকার মনে করছে। ইতোমধ্যে হাজার হাজার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র সরানোর দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ। সীমিত হলেও ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে গোয়েন্দা সহযোগিতার নজিরও তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে হিজবুল্লাহ দুর্বল হলেও পুরোপুরি পরাস্ত নয়, আর এই অনিশ্চয়তাই নতুন সংঘাতের ছায়া ফেলছে অঞ্চলের ওপর।
#Hezbollah #Lebanon #Israel #MiddleEast #Disarmament #WarRisk-
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















