ভুয়া ওয়েবসাইটে কনসার্টের টিকিট কাটতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন এক ব্রিটিশ প্রবাসী নারী। এক মিনিটের মধ্যেই তার ক্রেডিট কার্ড থেকে উধাও হয়ে যায় আট হাজার দিরহাম। ধাক্কা সামলে দ্রুত ব্যাংক ও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো এবং দীর্ঘ সময় ধরে লেগে থাকার ফলেই শেষ পর্যন্ত তিনি হারানো টাকা ফেরত পান।
ঘটনাটি ঘটে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত ব্রিটিশ প্রবাসী মারির সঙ্গে। পরিচয় গোপন রাখতে তার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। অনলাইনে জনপ্রিয় একটি কনসার্টের টিকিট কেনার সময় তিনি ভেবেছিলেন সরাসরি ভেন্যুর ওয়েবসাইট থেকেই টিকিট নিচ্ছেন। কার্ডের তথ্য দিয়ে ওটিপি অনুমোদনের এক মিনিটের মধ্যেই তার ক্রেডিট কার্ড থেকে আট হাজার দিরহাম কেটে নেওয়া হয়।
প্রতারণা বুঝতে দেরি হয়নি
মারি জানান, প্রথম কয়েক সেকেন্ড তিনি হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। পরে ওয়েবসাইটের ঠিকানা ভালো করে দেখে বুঝতে পারেন নামের বানানে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। তখনই তার মনে হয় তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ব্যাংকের কল সেন্টারে ফোন করে কার্ড ব্লক করেন। কল সেন্টারের মেনুতেই প্রতারণা সংক্রান্ত সহায়তার অপশন আগে থাকায় তিনি বিস্মিত হন। এতে তার বোঝা যায়, এমন ঘটনা সেখানে নিয়মিতই ঘটছে।
প্রবাসীদের জন্য বাড়তি ঝুঁকি
ভুয়া ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুদ্র প্রতারণা, ভুয়া বিনিয়োগ প্রস্তাব কিংবা ভুয়া বাসা ভাড়ার বিজ্ঞাপন—প্রবাসীদের জন্য অনলাইন প্রতারণার ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়মিত সতর্কবার্তা দিচ্ছে।
আইনি পদক্ষেপ ও দ্রুত যোগাযোগের গুরুত্ব
আইন বিশেষজ্ঞ সালমান মাদকুর জানান, প্রতারণার শিকার হলে দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সব প্রমাণসহ অভিযোগ জানানো বাধ্যতামূলক। একই সঙ্গে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে, যাতে সন্দেহজনক লেনদেন বন্ধ করা যায়। দ্রুত পদক্ষেপ নিলে ক্ষতি কমানো এবং আইনি অধিকার সংরক্ষণ করা সহজ হয়।
সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা জরুরি
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বার্টিল ব্রেনডেকে বলেন, ফোন হারানো বা অনলাইন প্রতারণার ক্ষেত্রেও একই ধরনের সতর্কতা প্রয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ ব্যবহারে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা উচিত। দুই ধাপ যাচাই, একাধিক স্তরের নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করলে ঝুঁকি কমে। ফোন চুরি হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংক, কর্মস্থল এবং ইমেইল ব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
টাকা ফেরত পাওয়ার দীর্ঘ লড়াই
মারি জানান, পরবর্তী তিন মাস তিনি পুলিশ ও ব্যাংকের সব ধরনের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। কল সেন্টারে ফোন করা থেকে শুরু করে সরাসরি শাখায় গিয়েও খোঁজ নেন। তার মতে, ডেবিট কার্ডের বদলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করাই ছিল বড় সুবিধা। শেষ পর্যন্ত তিন মাস পর ব্যাংক থেকে ফোন পেয়ে তিনি জানতে পারেন, তার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। খবরটি পেয়ে আবেগে তিনি কেঁদে ফেলেন।
অন্যদের জন্য সতর্কবার্তা
মারি সবাইকে ওটিপি বার্তা ভালো করে পড়ার পরামর্শ দেন। শুধু কপি করে অনুমোদন না দিয়ে লেনদেনের অঙ্ক মিলিয়ে দেখা জরুরি বলে তিনি মনে করেন। পাশাপাশি ওয়েবসাইটের ঠিকানায় সামান্য বানান ভুল থাকলেও সেটি বড় প্রতারণার ইঙ্গিত হতে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















