নিউইয়র্কের মঞ্চে আবার ফিরে এসেছে মলিয়েরের ব্যঙ্গ, আর সেই প্রত্যাবর্তনের কেন্দ্রে আছে টারটুফ। পুরো বছরজুড়েই শহরের থিয়েটারগুলোতে একের পর এক মলিয়ের নাটকের নতুন অনুবাদ ও রূপান্তর দেখা গেছে। বছরের শেষ প্রান্তে এসে লুকাস হ্নাথের রূপান্তরিত টারটুফ যেন সেই ধারারই সমাপ্তি টেনেছে, যেখানে হাসি আর অস্বস্তি পাশাপাশি হাঁটে।
মঞ্চে পরিচিত মুখ, নতুন ব্যাখ্যা
এই প্রযোজনায় টারটুফ চরিত্রে আছেন ম্যাথিউ ব্রডরিক এবং তার বিপরীতে অর্গন চরিত্রে ডেভিড ক্রস। দুজনের অভিনয়ে নাটকটি এগিয়েছে ধীর অথচ ইঙ্গিতপূর্ণ ছন্দে। টারটুফ এখানে চিরচেনা ভণ্ড সাধুর চেয়ে বেশি এক বিভ্রান্ত অথচ সুবিধাভোগী মানুষ, যে নিজেও যেন বুঝে উঠতে পারে না কেমন করে সবকিছু তার হাতে এসে পড়ছে। অর্গনের ভূমিকায় ডেভিড ক্রস দেখিয়েছেন এক মধ্যবয়সী মোহ, যেখানে ধর্মীয় ভক্তি আসলে ব্যক্তিগত আকর্ষণের রূপ নেয়।
পরিবার, ক্ষমতা আর প্রতারণার গল্প
নাটকের কাহিনিতে অর্গনের পরিবার ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে এক ভণ্ড ধর্মগুরুর প্রভাবে। স্ত্রী এলমিরা, সন্তানদের সন্দেহ, গৃহপরিচারিকার স্পষ্ট ভাষা—সব মিলিয়ে টারটুফের মুখোশ একের পর এক ফাঁস হতে থাকে। তবু ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা মানুষের অন্ধ বিশ্বাস তাকে টিকিয়ে রাখে। মলিয়েরের এই চেনা কাঠামোই নতুন প্রযোজনায় আধুনিক ইঙ্গিত পায়, যেখানে ক্ষমতাবানদের ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হয় পুরো পরিবারকে।

আজকের সময়ের সঙ্গে সংযোগ
লুকাস হ্নাথ এই রূপান্তরে শেষ দৃশ্যের রাজকীয় হস্তক্ষেপকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। রাজশক্তির এক ঘোষণায় সব সমস্যার মীমাংসা হওয়া এখানে নিছক করুণা নয়, বরং ক্ষমতার ইচ্ছামতো আইন বাঁকানোর ইঙ্গিত। এই অংশে নাটকটি সমসাময়িক রাজনীতির সঙ্গে অদ্ভুত মিল খুঁজে পায়, যেখানে প্রভাবশালীরা আলাদা নিয়মে বাঁচে। এই ব্যঙ্গ মলিয়েরের সময়ের হলেও দর্শকের মনে আজকের বাস্তবতার প্রতিধ্বনি তোলে।
হাসির ভেতরে অস্বস্তি
প্রযোজনার শক্তি এসেছে পার্শ্ব চরিত্রদের অভিনয় থেকে। মারিয়ানের চরিত্রে আবেগী অতিনাটকীয়তা, ডোরিনের তীক্ষ্ণ সংলাপ আর ভালেরের অনাবিল উপস্থিতি নাটকটিকে প্রাণবন্ত করেছে। বিশেষ করে ভালেরের চরিত্রে অভিনেতার হাস্যরস দর্শককে বারবার স্বস্তি দেয়, যেন কঠিন সময়ে অটল থাকার এক নীরব আহ্বান।
মলিয়েরের স্থায়ী প্রাসঙ্গিকতা
এই টারটুফ দেখিয়ে দেয়, ভণ্ডামি আর ক্ষমতার সম্পর্ক শতাব্দী পেরিয়েও বদলায়নি। নিউইয়র্কের মঞ্চে মলিয়েরের এই প্রত্যাবর্তন তাই শুধু সাহিত্যিক উদযাপন নয়, বরং বর্তমান সময়কে বোঝার এক তীক্ষ্ণ উপায়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















