নিউইয়র্কের ব্যস্ত রাস্তাঘাট থেকে আন্তর্জাতিক টেবিল টেনিসের মঞ্চ পর্যন্ত এক তরুণের বেপরোয়া যাত্রা নিয়ে নির্মিত নতুন চলচ্চিত্র মার্টি সুপ্রিম। পরিচালক জশ স্যাফডির এই ছবিতে কেন্দ্রে রয়েছেন টিমোথি শালামে, যিনি এক ক্যারিশমাটিক টেবিল টেনিস খেলোয়াড়ের ভূমিকায় দর্শককে টেনে নেন অস্থিরতা, স্বপ্ন আর আত্মবিশ্বাসের এক ঝাঁকুনিময় দুনিয়ায়। উনিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের নিউইয়র্কে শুরু হওয়া এই গল্প ধীরে ধীরে পৌঁছে যায় লন্ডন ও টোকিওর প্রতিযোগিতাময় মঞ্চে, যেখানে জয় শুধু খেলার নয়, পরিচয় আর স্বীকৃতিরও।
শুরুতেই আত্মবিশ্বাসের বিস্ফোরণ
ছবির শুরুতেই দেখা যায় মার্টি মাউসার নামের এক তরুণ বিক্রয়কর্মী, যার জীবনে গোপন উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর ব্যক্তিগত সম্পর্ক জটিল ভাবে জড়িয়ে আছে। স্থানীয় পর্যায়ে ছোটখাটো বাজিতে খেলে বেড়ানো এই তরুণ বিশ্বাস করে, সে বিশ্বসেরা হতে পারে। এই আত্মবিশ্বাসই তাকে নিজের সীমা ভাঙতে প্রলুব্ধ করে এবং পরিচিত গণ্ডি ছাড়িয়ে অজানার পথে ঠেলে দেয়।
বাস্তব ইতিহাসের ছায়া
চরিত্রটি অনুপ্রাণিত বাস্তব জীবনের টেবিল টেনিস খেলোয়াড় মার্টি রাইসম্যানের জীবন থেকে। নিউইয়র্কের লোয়ার ইস্ট সাইডে বেড়ে ওঠা এই খেলোয়াড় পঞ্চাশের দশকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। ছবিতে ইতিহাসের সঙ্গে কল্পনার মিশেলে তুলে ধরা হয়েছে এক দুর্দমনীয় মানসিকতা, দম্ভ আর ঝুঁকি নেওয়ার নেশা।

লন্ডনের মঞ্চে পরীক্ষা
লন্ডনে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় গিয়ে মার্টি বুঝতে পারে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা যতটা ভেবেছিল তার চেয়েও কঠিন। নতুন ধরনের ব্যাট আর কৌশলে পারদর্শী এক জাপানি খেলোয়াড়ের মুখোমুখি হয়ে তার আত্মবিশ্বাস চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। তবু ম্যাচ জেতার চেয়েও বড় লক্ষ্য হয়ে ওঠে সমাজের উঁচু স্তরে পৌঁছানো এবং পৃষ্ঠপোষক জোগাড় করা।
খ্যাতির মোহ আর ঝুঁকির ঘূর্ণি
লন্ডনের বিলাসবহুল হোটেলে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা, এক সাবেক চলচ্চিত্র তারকার সান্নিধ্য আর অর্থশালী ব্যবসায়ীর নজর কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা মার্টিকে আরও গভীরে টেনে আনে। জরিমানা, অর্থসংকট আর সময়ের চাপ তাকে আবারও ঝুঁকিপূর্ণ পথে ঠেলে দেয়। এখান থেকেই গল্পে যোগ হয় বিশৃঙ্খলা, দুর্ঘটনা আর একের পর এক নাটকীয় ঘটনা।
চলচ্চিত্রের গতি ও অভিনয়
জশ স্যাফডির পরিচালনায় ছবিটি এগিয়ে যায় শ্বাসরুদ্ধকর গতিতে। ক্যামেরার দ্রুত চলাচল, সংলাপের তীব্রতা আর সম্পাদনার ধার দর্শককে মুহূর্তের জন্যও বিশ্রাম দেয় না। এই উন্মত্ত গতির কেন্দ্রে রয়েছেন টিমোথি শালামে, যিনি মার্টির আত্মপ্রচারপ্রবণতা, কৌতুক আর দুঃসাহসকে প্রাণবন্ত করে তোলেন। গুইনেথ প্যালট্রো ও ওডেসা অ্যাজিওনের সঙ্গে তার দৃশ্যগুলোতে টানটান শক্তি অনুভূত হয়।
ব্যক্তিগত চলচ্চিত্রের স্বর
স্যাফডি ভাইদের যৌথ কাজের বাইরে এটি জশ স্যাফডির একক পরিচালনায় সবচেয়ে ব্যক্তিগত ছবি হিসেবে ধরা হচ্ছে। উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর আত্মবিশ্বাসের চূড়ান্ত সীমা নিয়ে এই গল্প শুধু এক খেলোয়াড়ের নয়, বরং সৃষ্টিশীল মানুষদের ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতার প্রতিফলন। মার্টি সুপ্রিম দেখায়, কখনও কখনও নিজের ওপর বাজি ধরাই সবচেয়ে বড় দুঃসাহস, আবার সবচেয়ে বড় পুরস্কারও।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















