থাইল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির গতি যখন মন্থর, তখন নতুন প্রবৃদ্ধির খোঁজে দেশের অন্যতম বড় ব্যাংক ব্যাঙ্ক অব আয়ুধ্যা তার দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিচ্ছে বিদেশের দিকে। ক্রুঙ্গসরি নামে পরিচিত এই ব্যাংক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কার্যক্রম জোরদার করে আঞ্চলিক উপস্থিতি বাড়াতে চাইছে। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের নেওয়া কৌশল স্পষ্ট করে দিচ্ছে, দেশীয় বাজারে সীমাবদ্ধ থেকে ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা আর সম্ভব নয়।
দেশীয় সীমাবদ্ধতা ও নতুন দিকনির্দেশ
ব্যাংক অব আয়ুধ্যার মোট ঋণের বড় অংশ এখনও থাইল্যান্ডের ভেতরেই কেন্দ্রীভূত। তবে অর্থনীতির পরিপক্বতা এবং আয়ের ওপর চাপ নতুন ভাবনাকে জরুরি করে তুলেছে। ব্যাংকের শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, আগের সাফল্যই এখন পরবর্তী সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই বাস্তবতায় দ্রুত রূপান্তর ও সময়ের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো ছাড়া বিকল্প নেই।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিস্তার
এই কৌশলের মূল অংশ হিসেবে ব্যাংকটি ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার মতো বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে। এর আগে ভোক্তা অর্থায়ন খাতে একাধিক অধিগ্রহণের মাধ্যমে সেখানে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। লক্ষ্য একটাই, শুধু উপস্থিতি নয়, বরং স্থানীয় বাজারে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। ব্যাংকের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই নতুন বাজারগুলোকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।

কর্পোরেট থাইল্যান্ডের বিদেশযাত্রায় সহায়তা
বিদেশে বিস্তারের অংশ হিসেবে ব্যাংকটি সম্প্রতি একটি নতুন পরামর্শমূলক সেবা চালু করেছে, যার মাধ্যমে থাই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আঞ্চলিক বাজারে প্রবেশে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বাজার গবেষণা, নিয়ন্ত্রক বিশ্লেষণ এবং স্থানীয় অংশীদার খোঁজার মতো সহায়তা দিয়ে এই সেবা ব্যাংকের জন্য নতুন মূলধনী চাহিদা তৈরির পথ খুলে দিচ্ছে। থাইল্যান্ডের কয়েকটি উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই এই সহায়তায় প্রতিবেশী দেশে ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে।
অর্থনৈতিক চাপ ও ঝুঁকির বাস্তবতা
থাইল্যান্ডের সামগ্রিক অর্থনীতি এখন একাধিক চাপে রয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস নিম্নমুখী, পর্যটন খাতে চীনা পর্যটকের সংখ্যা কমছে, আঞ্চলিক রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করছে। এর পাশাপাশি পারিবারিক ঋণের উচ্চ হার ভোক্তা ঋণ খাতের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। ফলে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হারও ধীরে ধীরে বাড়ছে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়।
ভবিষ্যৎ পথ চলা
ব্যাংক নেতৃত্বের মতে, সামনের বছরগুলো থাইল্যান্ডের জন্য চ্যালেঞ্জিং হলেও ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। বিদেশে বিস্তার এবং পরামর্শমূলক সেবার সমন্বয়ই ক্রুঙ্গসরির নতুন কৌশলের মূল শক্তি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি পরামর্শ দেওয়ার এই মডেল ব্যাংকটিকে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় আলাদা করে তুলতে পারে, যদিও বাড়তি প্রতিযোগিতা ও অধিগ্রহণ-পরবর্তী ঝুঁকি সতর্কতার সঙ্গে সামলাতে হবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















