মিয়ানমারে প্রায় পাঁচ বছর পর অনুষ্ঠিত হলো সাধারণ নির্বাচন। সামরিক অভ্যুত্থানের পর এই প্রথম সংসদীয় ভোট হলেও দেশের রাজনীতি ও জনমনে এর প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। রোববার সকাল থেকে ইয়াঙ্গুন, মান্দালয় ও নেপিদো সহ ৩৩০টির মধ্যে ১০২টি টাউনশিপে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। সামরিক সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, এই নির্বাচন দেশকে স্থিতিশীলতার পথে নিয়ে যাবে। তবে বিরোধী শক্তি ও সাধারণ মানুষের বড় একটি অংশের কাছে এই ভোটের অর্থ প্রায় নেই।
ভোটের সকাল, কিন্তু উৎসাহহীন উপস্থিতি
সকাল ছয়টায় ভোটকেন্দ্র খোলার পরও দৃশ্যপট ছিল ভিন্ন। ২০২০ সালের নির্বাচনে যেখানে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা গিয়েছিল, সেখানে এবার প্রথম ভোটার ঢুকতেই লেগে যায় কয়েক মিনিট। নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মতো। কেন্দ্রের বাইরে পুলিশ ও সেনাদের উপস্থিতি মানুষের ভেতরের দ্বিধা আরও স্পষ্ট করে তোলে। অনেকেই বলছেন, পরিস্থিতি এতটাই অস্থির যে ভোট দেওয়া বা না দেওয়া—দুটোই ঝুঁকির।
ভোট দেওয়া কি বাধ্যবাধকতা
অনেক ভোটার ভোট দিয়েছেন স্বতঃস্ফূর্ত ইচ্ছায় নয়, বরং আশঙ্কা থেকে। অবসরভোগী এক বৃদ্ধ ভোট দেওয়ার পর জানালেন, ভোট না দিলে কী পরিণতি হতে পারে সেই ভয় থেকেই কেন্দ্রে আসা। ২০২০ সালে তিনি নাগরিকদের পক্ষে কাজ করা সরকারের সমর্থনে ভোট দিয়েছিলেন, কিন্তু এবার তার সেই বিশ্বাস আর নেই।

নতুন পদ্ধতি, পুরোনো প্রশ্ন
এই নির্বাচনে প্রথমবার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে উচ্চকক্ষের অর্ধেক আসনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি চালু হয়েছে। সামরিক সমর্থিত দলগুলোর মতে এতে গণতান্ত্রিক কাঠামো আরও শক্ত হবে। কিন্তু বাস্তবে ভোটের হার কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালে যেখানে অংশগ্রহণ ছিল প্রায় বাহাত্তর শতাংশ, সেখানে এবার তা অনেক কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সামরিক সরকারের বার্তা ও বাস্তবতা
সামরিক শাসক মিন অং হ্লাইং নিজে ভোট দিয়েছেন এবং নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে দাবি করেছেন। তবে একই সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সশস্ত্র সংঘর্ষ ও হামলার খবর ভোটের পরিবেশকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। থাই সীমান্তের কাছে একটি হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে ভোটের ঠিক আগেই।
আস্থা সংকটে নির্বাচন
অং সান সু চি এখনও কারাবন্দি, তার দল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক আগ্রহ অনেকটাই কমে গেছে। তরুণ ভোটারদের একাংশ বলছেন, পরিবারের চাপে তারা ভোট দিতে গেছেন। তাদের চোখে এই নির্বাচন দেশের জন্য নয়, বরং সামরিক শক্তির ক্ষমতা ধরে রাখার একটি কৌশল মাত্র।
এই নির্বাচন তিন ধাপে হওয়ার কথা। পরবর্তী ধাপের ভোট জানুয়ারির মাঝামাঝি ও শেষের দিকে। ফল ঘোষণা হবে মাসের শেষ নাগাদ। কিন্তু ভোট শেষ হলেও মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকট যে এখানেই থামছে না, তা এখনই স্পষ্ট ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















