পরাবাস্তবতা শুধু একটি শিল্পধারা নয়, এটি মানুষের স্বপ্ন, কল্পনা আর অবচেতনের গভীরে ঢুকে পড়ার এক বিপ্লবী প্রয়াস। এক শতক পেরিয়ে আজও এই ধারার শিল্পকর্ম দর্শককে বাস্তবের সীমা ছাড়িয়ে অদ্ভুত ও বিস্ময়কর এক জগতে নিয়ে যায়। বিশ্বজুড়ে পরাবাস্তবতার শতবর্ষ ঘিরে আয়োজন করা প্রদর্শনীগুলো সেই স্বপ্নময় অভিযাত্রারই নতুন করে উদযাপন।
পরাবাস্তবতার জন্ম ও দর্শন
পরাবাস্তবতা শব্দটির জন্ম হয় বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে। এই ধারার শিল্পীরা বিশ্বাস করতেন, যুক্তি আর সচেতন চিন্তার বাইরে যে অবচেতন জগৎ, সেখানেই লুকিয়ে আছে মানুষের প্রকৃত সৃজনশীলতা। স্বপ্ন, কল্পনা, আকস্মিকতা ও শিশুসুলভ স্বতঃস্ফূর্ততা তাদের শিল্পের প্রধান ভাষা হয়ে ওঠে। বাস্তব আর কল্পনার সীমারেখা ভেঙে দিয়ে তারা শিল্পকে নিয়ে যান এক রহস্যময় অভিজ্ঞতায়।

শতবর্ষের প্রদর্শনীতে স্বপ্নের পুনরাবিষ্কার
শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত দুটি বড় প্রদর্শনী পরাবাস্তবতার বিস্ময়কর পথচলাকে নতুন করে তুলে ধরেছে। এক প্রদর্শনীতে দেখা যায় শতাধিক শিল্পকর্ম, যেখানে স্বপ্ন, কামনা, যুদ্ধ আর নির্বাসনের অভিজ্ঞতা এক সুতোয় গাঁথা। অন্য প্রদর্শনীতে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে একজন বহুমাত্রিক শিল্পীর কাজ, যিনি ছবি, বস্তু, চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্রে পরাবাস্তব ভাবনার ভিন্ন ভিন্ন রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন।
শিল্পীদের অবচেতন অনুসন্ধান
এই প্রদর্শনীগুলোতে দর্শক দেখতে পান কল্পিত প্রাণী, গলতে থাকা ঘড়ি, অদ্ভুত বস্তুসংযোজন আর অচেনা দৃশ্যের সমাহার। কিছু শিল্পী গভীরভাবে অবচেতনের রহস্য অনুসন্ধান করেছেন, আবার কেউ কেউ এই ধারার বাহ্যিক রূপকে নাটকীয়ভাবে ব্যবহার করেছেন। তবু সব মিলিয়ে পরাবাস্তবতা যে শিল্পকে কতটা মুক্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে, সেটিই এখানে স্পষ্ট।

প্রভাব ও সমালোচনা
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরাবাস্তবতা কখনো প্রশংসিত হয়েছে, কখনো সমালোচিত। কেউ কেউ মনে করেন, এই ধারা অতিরিক্ত অযৌক্তিকতায় হারিয়ে যেতে বসেছিল। তবু অনেক শিল্পী পরাবাস্তবতার ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজস্ব পথে এগিয়েছেন এবং সেখান থেকেই জন্ম নিয়েছে স্মরণীয় শিল্পকর্ম। এই প্রদর্শনীগুলো সেই দ্বন্দ্ব ও বিবর্তনের গল্পও বলে।
স্বপ্নের মতোই অধরা শিল্প
পরাবাস্তবতার সবচেয়ে বড় শক্তি তার অধরাভাব। এই ধারার শিল্পকর্ম পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায় না, ঠিক যেমন স্বপ্নকে ধরা যায় না। শতবর্ষের এই আয়োজন আবারও মনে করিয়ে দেয়, শিল্পের সেরা রূপগুলো আমাদের বাস্তবতার বাইরে নিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করতে শেখায়, বিস্মিত করে এবং ভাবতে বাধ্য করে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















