০৬:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
সুর আর মজায় ভরপুর জাপানের নতুন অ্যানিমে ‘দ্য অবসেসড’ ডিজনিতে ফিরছেন বিটিএসের জিমিন ও জাংকুক, আসছে ‘আর ইউ শিওর?!’ সিজন–২ স্নেক সাও-স্কেলড ভিপার: এক ভয়ঙ্কর সাপের জীবন এবং বৈশিষ্ট্য টেইলর শেরিডান কীভাবে টেলিভিশনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হিট–কারখানায় পরিণত হলেন মোবাইলে ক্রোমে এআই মোড আরও সহজ করল গুগল রোলিং স্টোন স্পেশাল ও ডিজে স্নেকের গানে একদিনেই তিন ফ্রন্ট খুলল স্ট্রে কিডস হরর-কমেডি ‘মেকিং আ ব্রাইডসমেইড’ শেষ, এখন স্ট্রিমিং বিক্রির পথে কেক বানানোর কৌশল: ঘরে বসেই নিখুঁত বেকিংয়ের গাইড লস অ্যাঞ্জেলেসে গ্র্যান্ডে–এরিভোর চমক, ক্লাসিক ডুয়েটেই মাত করল হলিউড মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (অন্তিম পর্ব-৩৬৫)

দিল্লি কা লাড্ডু – সিকি শতকের জয়যাত্রা এবার জৌলুসহীন

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৫৪:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪
  • 69

সুমন চট্টোপাধ্যায়

ইংরেজিতে একটি চালু কথা আছে এক ঝুড়িতে সব কয়টি ডিম রাখা বিপজ্জনক। কেন তা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখেনা। ২০১৪ সাল থেকে বিজেপি হঠাৎ নিজস্ব চরিত্র আমূল বদলে ফেলে দলের সব কয়টি ডিম রেখে চলেছে নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী নামের ঝুড়িতে। একবার ঝুড়ি নীচে পড়ে গেলেই সমূহ সর্বনাশ!

বিজেপি-র এমন অভ্যন্তরীণ চরিত্র বদল সাম্প্রতিক রাজনীতির ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, চলমান লোকসভা ভোটের ফলাফলের সঙ্গেও গভীরভাবে সম্পৃক্ত। ইন্দিরা গান্ধির জমানা থেকে কংগ্রেস যে পথে হাঁটতে শুরু করেছিল, বিজেপি তা অনুসরণ করেনি তারপরেও দীর্ঘদিন। তার কারণ এই নয় যে বিজেপিতে জনমনহরনী শক্তি সম্পন্ন নেতার অভাব ছিল। অটল বিহারী বাজপেয়ী ছিলেন, লালকৃষ্ণ আডবাণীও ছিলেন অবশ্যই। আজ যে গোটা ভারত জুড়ে বিজেপির এমন অপ্রত্যাশিত রবরবা তার প্রধান স্থপতি হিসেবে কাউকে যদি চিহ্নিত করতে হয় তাহলে সেই নামটি হবে আডবাণীরই। মহাকালের রথের ঘোড়া সাম্রাজ্য- জয়ে বেরিয়ে পরার অনেক পরে মোদী তাতে সওয়ার হয়েছেন।

মোদীর প্রধান কৃতিত্ব ভোটজয়ের বাজিগর হিসাবে, তিনি নেতৃত্বে আসার আগে বিজেপির কট্টর সমর্থকও কল্পনা করতে পারেননি দল উপর্যুপরি দুটি সংসদীয় ভোটে এককভাবে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পাবে। এইখানেই দলের সব পূর্বসূরীকে ম্লান করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই সাফল্যের কারণেই মোদী আজ দলে অথবা সরকারে কেবল ‘ফার্স্ট অ্যামং দ্য ইকুয়ালস’ নন, তিনিই দল, তিনিই সরকার। তিনিই স্বর্গ, তিনিই ধর্ম, তিনিই পরম তপস্বী।

নরেন্দ্র মোদী এমন অসাধ্য সাধন করলেন কোন জাদুবলে? একটু তলিয়ে দেখলে তাঁর সাফল্যে ধরা পড়বে ইন্দিরার দীর্ঘ ছায়া। ইন্দিরা যেমন কংগ্রেস দলে অভ্যন্তরীন গণতন্ত্রের পাঠ চুকিয়ে দিয়ে, দলীয় নেতৃত্বে কেবলই মোসাহেবদের বসিয়ে, রাজ্যে রাজ্যে জনপ্রিয়, প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতাদের ডানা ছেঁটে, বস্তুত তাঁদের নখদন্তহীন অবস্থা করে দিয়ে, সর্বোপরি সংগঠনের মাথার ওপর দিয়ে দেশবাসীর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কের সেতুবন্ধন করতে চেয়েছিলেন, সাময়িকভাবে সফলও হয়েছিলেন, নরেন্দ্র মোদীও ঠিক সেই চিত্রনাট্যই যেন হুবহু মুখস্থ করে স্বনামে তাঁর পরিচালিত ও অভিনীত নাটক মঞ্চস্থ করে চলেছেন। এদিক থেকে দেখলে নরেন্দ্র মোদী সর্বার্থে কিন্তু ইন্দিরা গান্ধিরই যথার্থ উত্তরসূরি, ভাবাদর্শের নিরিখে নয়, ‘রিয়াল পলিটিক্স’-এর মানদন্ডে।

মোদী আর বিজেপি আজ সমার্থক কেবল এটুকু বললে খন্ডচিত্র ধরা পড়ে। এর চেয়ে যথোপযুক্ত হবে একথা বলা যে নদী যেমন যাত্রাপথের শেষে সমুদ্রের মোহানায় গিয়ে মেশে, বিজেপিও তেমনি ধীরে ধীরে মোদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। সেজন্যই প্রাক নির্বাচনী দলীয় ইস্তেহারে মোদীর গ্যারান্টির কথা বলা হয়, বিজেপির নয়, এনডিএ-র তো নয়ই। আসমুদ্রহিমাচল ভারতবর্ষে সর্বত্র দৃশ্যমান একটিই মুখ, পোস্টার, ব্যানার, হোর্ডিং, বিজ্ঞাপন সহ সব কিছুতেই। এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও আবার মোদীর সাদৃশ্য লক্ষ্য করার মতো। গত তেরো বছরে প্রতিটি বঙ্গবাসী জেনে গিয়েছে শাসক তৃণমূল দল অথবা সরকারে কেবল একটিই ‘পোস্ট’ বাকি সব্বাই ল্যাম্পপোস্ট। মানে মমতাই দল মমতাই সরকার, বাকি সকলে চাকরবাকর। সেইজন্যই প্রতিটি নির্বাচনী জনসভায় তিনি নিজেকেই সেই কেন্দ্রের প্রার্থী বলে প্রতিষ্ঠিত করে ভোট ভিক্ষা করেন। নরেন্দ্র মোদী অবশ্যই এতটা খোলাখুলি কথাটা বলেননা একটু ঘুরিয়ে বলেন, ‘আপকা এক এক ভোট তো আখির মে মোদীকি খাতে মে হি জায়েগা।’

অস্যার্থ মোদী জিতলে বিজেপি জিতবে, অন্যথায় নয়। গুজরাত ও দিল্লি দু’টোকে যোগ করলে মোদী সিকি শতক ধরে কেবল জিতেই চলেছেন, প্রথমে ১৫ বছর বিধানসভায় তারপর ১০ বছর লোকসভায়, পরাজয়ের আস্বাদই পাননি। বারেবারে দেখা গিয়েছে মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়, তাঁকে হারানো সম্ভব, লোকে ভাবতেই ভুলে গিয়েছে। এবার ২০২৪-এর ভোটে অবশেষে তার অন্যথা হতে পারে এমন প্রশ্ন তাহলে উঠছে কেন? এ কী স্রেফ কষ্টকল্পনা, মতিভ্রম নাকি সঙ্গত প্রশ্ন?

পাঁচ দফার ভোট সাঙ্গ হওয়ার পরে একটি বিষয় পরিষ্কার। তা হোল ২০১৪ বা ২০১৯-এর মতো এবার হাওয়ায় সেই মোদী-ম্যাজিক অনুভূতই হচ্ছেনা। কোথাও আবেগ অথবা উচ্ছ্বাস নেই, সর্বত্র কেমন যেন ঠান্ডা মনোভাব, কতকটা ঘূর্ণিঝড়ের আগে বদ্ধ আবহাওয়ার মতো। ভোট হচ্ছে, লাইনও পড়ছে, শুধু উৎসবের মেজাজটাই বেমালুম গায়েব। নেতৃত্বের প্রশ্নটি ধামাচাপা পড়ে গিয়ে আম জনতার দিন গুজরানোর বিবিধ সমস্যাই অগ্রাধিকার পাচ্ছে- অসহনীয় বেকারি, অগ্নিমূল্য বাজার, পাপী পেট কা সওয়াল যাকে বলে। এই সব ইস্যুর মধ্যে ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদী অনুপস্থিত কোনও মূর্খ সে কথা বলবেনা, বলছেও না, জনপ্রিয়তার প্রশ্নে তিনি এখনও বিরোধী শিবিরের যে কোনও নেতার চেয়ে কয়েক যোজন এগিয়ে। কিন্তু অতীতের দুটি নির্বাচনের মতো মোদীই এবার প্রধান ইস্যু নন, তাঁর নামে দেশবাসী আর সেভাবে মথিত হচ্ছেনা। এখানেই অশনি সঙ্কেত দেখছে বিজেপি। শ্রাবণ মাসে তারকেশ্বরগামী পুন্যার্থীরা কাঁখে করে গঙ্গাজল বয়ে নিয়ে পদব্রজে যাওয়ার সময় যেমন ‘ভোলেবাবা পার করেগা’ বলতে বলতে এগিয়ে চলেন, সারা দেশে বিজেপির নেতা-কর্মীরাও তেমনি ‘মোদিবাবা পার করেগা’ এই আশায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর হাতে বারবার উতরে দেওয়ার কোনও জাদুদন্ড আছে কী?

লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক,সাবেক নির্বাহী সম্পাদক আনন্দবাজার পত্রিকা

 

জনপ্রিয় সংবাদ

সুর আর মজায় ভরপুর জাপানের নতুন অ্যানিমে ‘দ্য অবসেসড’

দিল্লি কা লাড্ডু – সিকি শতকের জয়যাত্রা এবার জৌলুসহীন

০৩:৫৪:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪

সুমন চট্টোপাধ্যায়

ইংরেজিতে একটি চালু কথা আছে এক ঝুড়িতে সব কয়টি ডিম রাখা বিপজ্জনক। কেন তা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখেনা। ২০১৪ সাল থেকে বিজেপি হঠাৎ নিজস্ব চরিত্র আমূল বদলে ফেলে দলের সব কয়টি ডিম রেখে চলেছে নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী নামের ঝুড়িতে। একবার ঝুড়ি নীচে পড়ে গেলেই সমূহ সর্বনাশ!

বিজেপি-র এমন অভ্যন্তরীণ চরিত্র বদল সাম্প্রতিক রাজনীতির ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, চলমান লোকসভা ভোটের ফলাফলের সঙ্গেও গভীরভাবে সম্পৃক্ত। ইন্দিরা গান্ধির জমানা থেকে কংগ্রেস যে পথে হাঁটতে শুরু করেছিল, বিজেপি তা অনুসরণ করেনি তারপরেও দীর্ঘদিন। তার কারণ এই নয় যে বিজেপিতে জনমনহরনী শক্তি সম্পন্ন নেতার অভাব ছিল। অটল বিহারী বাজপেয়ী ছিলেন, লালকৃষ্ণ আডবাণীও ছিলেন অবশ্যই। আজ যে গোটা ভারত জুড়ে বিজেপির এমন অপ্রত্যাশিত রবরবা তার প্রধান স্থপতি হিসেবে কাউকে যদি চিহ্নিত করতে হয় তাহলে সেই নামটি হবে আডবাণীরই। মহাকালের রথের ঘোড়া সাম্রাজ্য- জয়ে বেরিয়ে পরার অনেক পরে মোদী তাতে সওয়ার হয়েছেন।

মোদীর প্রধান কৃতিত্ব ভোটজয়ের বাজিগর হিসাবে, তিনি নেতৃত্বে আসার আগে বিজেপির কট্টর সমর্থকও কল্পনা করতে পারেননি দল উপর্যুপরি দুটি সংসদীয় ভোটে এককভাবে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পাবে। এইখানেই দলের সব পূর্বসূরীকে ম্লান করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই সাফল্যের কারণেই মোদী আজ দলে অথবা সরকারে কেবল ‘ফার্স্ট অ্যামং দ্য ইকুয়ালস’ নন, তিনিই দল, তিনিই সরকার। তিনিই স্বর্গ, তিনিই ধর্ম, তিনিই পরম তপস্বী।

নরেন্দ্র মোদী এমন অসাধ্য সাধন করলেন কোন জাদুবলে? একটু তলিয়ে দেখলে তাঁর সাফল্যে ধরা পড়বে ইন্দিরার দীর্ঘ ছায়া। ইন্দিরা যেমন কংগ্রেস দলে অভ্যন্তরীন গণতন্ত্রের পাঠ চুকিয়ে দিয়ে, দলীয় নেতৃত্বে কেবলই মোসাহেবদের বসিয়ে, রাজ্যে রাজ্যে জনপ্রিয়, প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতাদের ডানা ছেঁটে, বস্তুত তাঁদের নখদন্তহীন অবস্থা করে দিয়ে, সর্বোপরি সংগঠনের মাথার ওপর দিয়ে দেশবাসীর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কের সেতুবন্ধন করতে চেয়েছিলেন, সাময়িকভাবে সফলও হয়েছিলেন, নরেন্দ্র মোদীও ঠিক সেই চিত্রনাট্যই যেন হুবহু মুখস্থ করে স্বনামে তাঁর পরিচালিত ও অভিনীত নাটক মঞ্চস্থ করে চলেছেন। এদিক থেকে দেখলে নরেন্দ্র মোদী সর্বার্থে কিন্তু ইন্দিরা গান্ধিরই যথার্থ উত্তরসূরি, ভাবাদর্শের নিরিখে নয়, ‘রিয়াল পলিটিক্স’-এর মানদন্ডে।

মোদী আর বিজেপি আজ সমার্থক কেবল এটুকু বললে খন্ডচিত্র ধরা পড়ে। এর চেয়ে যথোপযুক্ত হবে একথা বলা যে নদী যেমন যাত্রাপথের শেষে সমুদ্রের মোহানায় গিয়ে মেশে, বিজেপিও তেমনি ধীরে ধীরে মোদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। সেজন্যই প্রাক নির্বাচনী দলীয় ইস্তেহারে মোদীর গ্যারান্টির কথা বলা হয়, বিজেপির নয়, এনডিএ-র তো নয়ই। আসমুদ্রহিমাচল ভারতবর্ষে সর্বত্র দৃশ্যমান একটিই মুখ, পোস্টার, ব্যানার, হোর্ডিং, বিজ্ঞাপন সহ সব কিছুতেই। এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও আবার মোদীর সাদৃশ্য লক্ষ্য করার মতো। গত তেরো বছরে প্রতিটি বঙ্গবাসী জেনে গিয়েছে শাসক তৃণমূল দল অথবা সরকারে কেবল একটিই ‘পোস্ট’ বাকি সব্বাই ল্যাম্পপোস্ট। মানে মমতাই দল মমতাই সরকার, বাকি সকলে চাকরবাকর। সেইজন্যই প্রতিটি নির্বাচনী জনসভায় তিনি নিজেকেই সেই কেন্দ্রের প্রার্থী বলে প্রতিষ্ঠিত করে ভোট ভিক্ষা করেন। নরেন্দ্র মোদী অবশ্যই এতটা খোলাখুলি কথাটা বলেননা একটু ঘুরিয়ে বলেন, ‘আপকা এক এক ভোট তো আখির মে মোদীকি খাতে মে হি জায়েগা।’

অস্যার্থ মোদী জিতলে বিজেপি জিতবে, অন্যথায় নয়। গুজরাত ও দিল্লি দু’টোকে যোগ করলে মোদী সিকি শতক ধরে কেবল জিতেই চলেছেন, প্রথমে ১৫ বছর বিধানসভায় তারপর ১০ বছর লোকসভায়, পরাজয়ের আস্বাদই পাননি। বারেবারে দেখা গিয়েছে মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়, তাঁকে হারানো সম্ভব, লোকে ভাবতেই ভুলে গিয়েছে। এবার ২০২৪-এর ভোটে অবশেষে তার অন্যথা হতে পারে এমন প্রশ্ন তাহলে উঠছে কেন? এ কী স্রেফ কষ্টকল্পনা, মতিভ্রম নাকি সঙ্গত প্রশ্ন?

পাঁচ দফার ভোট সাঙ্গ হওয়ার পরে একটি বিষয় পরিষ্কার। তা হোল ২০১৪ বা ২০১৯-এর মতো এবার হাওয়ায় সেই মোদী-ম্যাজিক অনুভূতই হচ্ছেনা। কোথাও আবেগ অথবা উচ্ছ্বাস নেই, সর্বত্র কেমন যেন ঠান্ডা মনোভাব, কতকটা ঘূর্ণিঝড়ের আগে বদ্ধ আবহাওয়ার মতো। ভোট হচ্ছে, লাইনও পড়ছে, শুধু উৎসবের মেজাজটাই বেমালুম গায়েব। নেতৃত্বের প্রশ্নটি ধামাচাপা পড়ে গিয়ে আম জনতার দিন গুজরানোর বিবিধ সমস্যাই অগ্রাধিকার পাচ্ছে- অসহনীয় বেকারি, অগ্নিমূল্য বাজার, পাপী পেট কা সওয়াল যাকে বলে। এই সব ইস্যুর মধ্যে ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদী অনুপস্থিত কোনও মূর্খ সে কথা বলবেনা, বলছেও না, জনপ্রিয়তার প্রশ্নে তিনি এখনও বিরোধী শিবিরের যে কোনও নেতার চেয়ে কয়েক যোজন এগিয়ে। কিন্তু অতীতের দুটি নির্বাচনের মতো মোদীই এবার প্রধান ইস্যু নন, তাঁর নামে দেশবাসী আর সেভাবে মথিত হচ্ছেনা। এখানেই অশনি সঙ্কেত দেখছে বিজেপি। শ্রাবণ মাসে তারকেশ্বরগামী পুন্যার্থীরা কাঁখে করে গঙ্গাজল বয়ে নিয়ে পদব্রজে যাওয়ার সময় যেমন ‘ভোলেবাবা পার করেগা’ বলতে বলতে এগিয়ে চলেন, সারা দেশে বিজেপির নেতা-কর্মীরাও তেমনি ‘মোদিবাবা পার করেগা’ এই আশায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর হাতে বারবার উতরে দেওয়ার কোনও জাদুদন্ড আছে কী?

লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক,সাবেক নির্বাহী সম্পাদক আনন্দবাজার পত্রিকা