০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
উত্তর আটলান্টিক রাইট তিমির সংখ্যা বাড়ছে—বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীটির পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত উপ-সাহারার ক্ষেতে উড়ে বেড়ানো ছোট বুননপাখি ‘রেড-বিল্ড কুয়েলিয়া’—এক প্রজাতির কৃষিনাশক বিস্ময়, যার সংখ্যা ১৫০ কোটিরও বেশি অডিবলে ‘হ্যারি পটার’ নতুন কণ্ঠে—হ্যারি, হারমায়োনি, রনের ভূমিকায় তরুণ ত্রয়ী বিশ্বের স্মার্টতম নগরীগুলোতে বসবাস কেমন — প্রযুক্তিনির্ভর জীবনের নতুন সংজ্ঞা মঞ্চে বুকে টেপ—কেন করছেন লর্ড, জানালেন ‘আল্ট্রাসাউন্ড’ ট্যুরে ম্যাচা চায়ের বিশ্বজোড়া উন্মাদনা—জাপানি ঐতিহ্যের মাঝে নকল পণ্য, সংকট ও সংস্কৃতির বিকৃতি প্রথমবারের মতো ডাইনোসরের পায়ে খুর দেখা গেল পেনএআইয়ের ‘অ্যাটলাস’ ব্রাউজার: গুগল ক্রোমের আধিপত্যে নতুন চ্যালেঞ্জ দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ঋণ পরিশোধে অপমান সইতে না পেরে প্রাণ দিলেন মনির

জীবন আমার বোন (পর্ব-২১)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪
  • 41

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

এখন যদি বলি, একটা গল্প শোনাও, সাধ্যমতো চেষ্টা করবে, কিন্তু পারবে না, বলবে আজকাল আর ওসব মাথায় আসে না, মাথার ভিতরটা ফাঁকা হ’য়ে গিয়েছে, কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যায় সব; আসলে বুড়িয়ে গিয়েছি, বয়েস তো আর কম হয়নি। বললে কি হয়, আমি খুব ভালো ক’রেই জানি ওটা নিছক একটা অজুহাত মাত্র। ওর মন এখনো যথেষ্ট সতেজ, ‘তোমার চেয়েও। এস্রাজের অভ্যেসটা টেনেটুনে কোনোরকমে বজায় রেখেছিলো অনেকদিন পর্যন্ত, কিন্তু বাগড়া পড়লো সেখানেও।

একটা গৎ ধরার পর কাছে গিয়ে বসতাম, বলতাম নতুন কিছু একটা বাজিয়ে শোনাতে; কখনো ভেবে দেখিনি নতুন কিছু ও শোনাবে কোথেকে! যতটুকু অবসর পায় তার সবটুকুই থাকে আমার দখলে, আর এই লোভেই আমি সংসারের মোহ গায়ে মাখিনি, মনের আনন্দে সংসারের দখলদারি ঠেলে দিয়েছিলাম আরেক দিকে। অবসর সময়ে আমি ওকে পানদোজার মতো মুঠোর ভিতরে পুরে রাখি, আমার হাতের তালুর চাপে ও ঘেমে ওঠে, কিছু বলতে পারে না কখনো মুখ ফুটে, আমার খুশিতেই ওর আনন্দ, অতএব বলবেই বা কেন।

বলা নেই কওয়া নেই হুট ক’রে বেচে এলো একদিন এস্রাজটা। বললে, ভালোই হ’লো, ওই একঘেয়ে কোঁ কাঁ আর কাঁহাতক ভালো লাগে, নতুন কিছু হাতেই আসে না। ল্যাঠা চুকলো যা হোক। সেদিন সারারাত আমি বালিশে মুখ গুঁজে লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছিলাম। আর কিছু রইলো না মানুষটার, শুধু আমার জন্যে, কেবল আমার জন্যে-‘ অঝোরে কাঁদতে লাগলো নীলাভাবী, সে কান্না কিছুতেই আর থামতে চায় না।

এই হাস্যকর নাটুকেপনার কি সত্যি কোনো মানে হয়?

খোকা মনে মনে খতিয়ে দেখলে, এই মুহূর্তে তার কিছুই করণীয় নেই। কোলের দিকে মুখ নিচু ক’রে আকাশ ভেঙে কেঁদে চলেছে নীলাভাবী; কখন যে কার ভিতর কোন রোগ চাড়া দেয় বোঝা দুঃসাধ্য।

জাপটে ধ’রে একটা চুমু খেলেও এখন ভাবান্তর হবে না; কান্না ছাড়া পৃথিবীতে এই মুহূর্তে আর কিছু ভালো নেই, নীলাভাবীর ভাবখানা এখন এমন। বন্ধুদের কেউ হ’লে নির্ঘাত চুমু খেতো এবং আদর করতো। ইয়াসিন তো খোলাখুলি বলেই অনেক সময়, বুড়ো বয়েসের আগে মেয়েমানুষকে যে শ্রদ্ধা করে কিংবা ধর্মকর্ম নিয়ে চাগিয়ে ওঠে সে ব্যাটা এক রামপাঁঠা, তাকে লৌড়ানো দরকার; মানুষের বুড়ো হ’য়ে না জন্মানোর পিছনে উপরওয়ালার বহুৎ খেয়ালখুশি কাজ করে।

জনপ্রিয় সংবাদ

উত্তর আটলান্টিক রাইট তিমির সংখ্যা বাড়ছে—বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীটির পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত

জীবন আমার বোন (পর্ব-২১)

১১:০০:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

এখন যদি বলি, একটা গল্প শোনাও, সাধ্যমতো চেষ্টা করবে, কিন্তু পারবে না, বলবে আজকাল আর ওসব মাথায় আসে না, মাথার ভিতরটা ফাঁকা হ’য়ে গিয়েছে, কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যায় সব; আসলে বুড়িয়ে গিয়েছি, বয়েস তো আর কম হয়নি। বললে কি হয়, আমি খুব ভালো ক’রেই জানি ওটা নিছক একটা অজুহাত মাত্র। ওর মন এখনো যথেষ্ট সতেজ, ‘তোমার চেয়েও। এস্রাজের অভ্যেসটা টেনেটুনে কোনোরকমে বজায় রেখেছিলো অনেকদিন পর্যন্ত, কিন্তু বাগড়া পড়লো সেখানেও।

একটা গৎ ধরার পর কাছে গিয়ে বসতাম, বলতাম নতুন কিছু একটা বাজিয়ে শোনাতে; কখনো ভেবে দেখিনি নতুন কিছু ও শোনাবে কোথেকে! যতটুকু অবসর পায় তার সবটুকুই থাকে আমার দখলে, আর এই লোভেই আমি সংসারের মোহ গায়ে মাখিনি, মনের আনন্দে সংসারের দখলদারি ঠেলে দিয়েছিলাম আরেক দিকে। অবসর সময়ে আমি ওকে পানদোজার মতো মুঠোর ভিতরে পুরে রাখি, আমার হাতের তালুর চাপে ও ঘেমে ওঠে, কিছু বলতে পারে না কখনো মুখ ফুটে, আমার খুশিতেই ওর আনন্দ, অতএব বলবেই বা কেন।

বলা নেই কওয়া নেই হুট ক’রে বেচে এলো একদিন এস্রাজটা। বললে, ভালোই হ’লো, ওই একঘেয়ে কোঁ কাঁ আর কাঁহাতক ভালো লাগে, নতুন কিছু হাতেই আসে না। ল্যাঠা চুকলো যা হোক। সেদিন সারারাত আমি বালিশে মুখ গুঁজে লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছিলাম। আর কিছু রইলো না মানুষটার, শুধু আমার জন্যে, কেবল আমার জন্যে-‘ অঝোরে কাঁদতে লাগলো নীলাভাবী, সে কান্না কিছুতেই আর থামতে চায় না।

এই হাস্যকর নাটুকেপনার কি সত্যি কোনো মানে হয়?

খোকা মনে মনে খতিয়ে দেখলে, এই মুহূর্তে তার কিছুই করণীয় নেই। কোলের দিকে মুখ নিচু ক’রে আকাশ ভেঙে কেঁদে চলেছে নীলাভাবী; কখন যে কার ভিতর কোন রোগ চাড়া দেয় বোঝা দুঃসাধ্য।

জাপটে ধ’রে একটা চুমু খেলেও এখন ভাবান্তর হবে না; কান্না ছাড়া পৃথিবীতে এই মুহূর্তে আর কিছু ভালো নেই, নীলাভাবীর ভাবখানা এখন এমন। বন্ধুদের কেউ হ’লে নির্ঘাত চুমু খেতো এবং আদর করতো। ইয়াসিন তো খোলাখুলি বলেই অনেক সময়, বুড়ো বয়েসের আগে মেয়েমানুষকে যে শ্রদ্ধা করে কিংবা ধর্মকর্ম নিয়ে চাগিয়ে ওঠে সে ব্যাটা এক রামপাঁঠা, তাকে লৌড়ানো দরকার; মানুষের বুড়ো হ’য়ে না জন্মানোর পিছনে উপরওয়ালার বহুৎ খেয়ালখুশি কাজ করে।