শ্রী নিখিলনাথ রায়
তিনি ভাবিয়া ছিলেন, বলপূর্ব্বক তাহাদিগকে বিদূরিত না করিয়া, এইরূপ কৌশল অবলম্বন করিলে, তাহারা চলিয়া যাইতে বাধ্য হইবে। খানা তদানীন্তন গোস্বামীর নিকট উপস্থিত হইলে, গোস্বামী তাহার আবরণ উন্মোচন করিতে বলিলেন; আবরণ উন্মোচন করিয়া দেখা হইল যে, তাহা খুঁই ফুলের মালা হইয়াছে। নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁ তাহাতে বিশ্বাস না করিয়া স্বহস্তে পুনর্ব্বার খানা পাঠাইয়া দেন; খানা সে বারও খুঁইফুলের মালা হইল।
তখন তিনি অত্যন্ত বিস্ময়ান্বিত হইলেন। তদবধি তিনি গোস্বামীকে অতিশয় শ্রদ্ধা করিতেন।এক সময়ে গোস্বামীদিগের অনুরোধে তিনি এরূপ আদেশ দিয়াছিলেন যে, মন্দিরের নিকটস্থ চারিটি ঘাটের সীমার মধ্যে কেহ মৎস্ত বা পক্ষী বধ করিতে পারিবে না। এইরূপ অনেক প্রবাদে ও গরে মোতিঝিলের উভয়তীরস্থ ভূমি পরিপূর্ণ।
বহুদিনের প্রাচীন স্থান হইলে, এইরূপে তাহা হইতে অনেক গল্পের সৃষ্টি হইয়া থাকে। আমরা মোতিঝিলের প্রবাদমূলক ও ঐতিহাসিক বিবরণ যতদূর সংগ্রহ করিতে পারিয়াছি, সাধারণের নিকট প্রকাশ করিলাম। মুসল মানরাজত্বের সমাধিক্ষেত্র মুর্শিদাবাদে ভ্রমণ করিলে, এখনও তাহার অতীত গৌরবের অনেক বিবরণ অবগত হওয়া যায়।
যদিও কালের কঠোর হস্তে ইহার প্রায় সমস্ত গৌরব-চিহ্নই ধরণীপৃষ্ঠ হইতে মুছিয়া গিয়াছে, তথাপি যাহা কিছু ভগ্নাবশেষ আছে, তাহার মধ্যে দাঁড়াইয়া চারিদিকে দৃষ্টিপাত করিলে, অতীতের অনেক মনোমোহন ছবি: মানসচক্ষের সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হয়। আমরা মুসলমান-গৌরবের সমাধিক্ষেত্রে ভ্রমণ করিয়া শুরুভারাক্রান্ত-হৃদয়ে গৃহে প্রত্যাগত হই। অবশেষে ইংরেজরাজত্বের গৌরবপ্রবাহের মধ্যে আত্মবিসর্জন দিয়া গুরুভারের লাঘব করিয়া থাকি।
Leave a Reply