সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ হঠাৎ করেই শুক্রবার বিকালে আলোচনা সভার কর্মসূচি ঘোষণা করে। প্রতিষ্ঠার প্লাটিনাম জুবিলি উপলক্ষে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হলেও এ বিষয়ে আগে থেকে কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না বলে দলীয় সূত্র জানা গেছে।
সারাক্ষণ ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অনেকটা ধরাশায়ী হয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিতর্কে ভালো করতে না পারায় বিরক্ত তাঁর সহকর্মী ডেমোক্র্যাটরাও।
বিতর্কে ভালো করতে না পারার বিষয়টি বাইডেন নিজেও স্বীকার করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনো ইঙ্গিত বাইডেন দেননি। রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পকে হারানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।
বিতর্কের পরদিন স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার বিকেলে নর্থ ক্যারোলাইনায় এক নির্বাচনী সমাবেশে ৮১ বছর বয়সী বাইডেন বলেন, ‘স্পষ্ট করে বলতে গেলে আমি জানি, আমি তরুণ নই।’
বিতর্কের সময় বাইডেনের মুখে কথা আটকে যেতে দেখা যায় এবং এলোমেলো কথা বলতে শোনা যায়। এতে ভোটারদের মনে এমন আশঙ্কা বেড়েছে—আরও চার বছর মেয়াদে তিনি দায়িত্ব পালন করে যেতে পারবেন না। বাইডেনের পরিবর্তে অন্য কাউকে প্রার্থী করা হবে কি না—এমন চিন্তাভাবনাও উসকে দিয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির তাঁর কয়েক সহকর্মী।
তবে বাইডেনের প্রচার সহকারী মাইকেল টেইলর সাংবাদিকদের বলেছেন, এ ধরনের সম্ভাবনা নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা হচ্ছে না। ট্রাম্পকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘একজন খারাপ চিন্তাধারার প্রার্থী, যিনি দেশকে ওই জায়গায় নিয়ে যেতে চান, তাঁর বিপরীতে নাহয় আমাদের একটি খারাপ রাত গেছে।’
এদিকে ঘরে-বাইরে চাপে থাকা বাইডেনের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও বারাক ওবামার মতো জ্যেষ্ঠ ডেমোক্র্যাটরা। তাঁরা বাইডেনকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ওবামা লিখেছেন, ‘বিতর্কের একটি বাজে রাত গেছে। বিশ্বাস করুন, আমি সেটা জানি। কিন্তু এখনো এই নির্বাচন এমন দুজনের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়ার বিষয়, যেখানে একজন পুরোটা জীবন সাধারণ মানুষের জন্য লড়াই করে গেছেন আর অন্যজন শুধু নিজের স্বার্থই দেখেন।’
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে শান্তিপূর্ণ বড় সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। শনিবার (২৯) বেলা ৩টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশ হবে। একই সময়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে।
প্রায় আট মাস পর দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিতে বিএনপি এ কর্মসূচি নিয়েছে। সমাবেশে ঢাকা মহানগর ও জেলা ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকেও নেতা-কর্মীরা যোগ দেবেন বলে দলীয় সূত্র জানা গেছে।
দলীয় সূত্র জানা গেছে, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনেক দিন পর কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এ কারণে সমাবেশটি বড় করতে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতারা।
বর্তমানে ঢাকা মহানগরে বিএনপির কোনো কমিটি নেই। তাই কেন্দ্রীয় বিএনপির ব্যানারে এই সমাবেশ হবে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এতে প্রধান অতিথি থাকবেন। সভাপতিত্ব করবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সমাবেশে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তব্য দেবেন।
এদিকে, দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তারা শনিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আলোচনা সভা করবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এতে প্রধান অতিথি থাকবেন।
ছাগলকাণ্ডে ছেলে ভাইরালের পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের একাধিক বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লটের তথ্য বেরিয়ে আসছে। গাজীপুর, নরসিংদী ও ময়মনসিংহে খোঁজ মিলেছে তার একাধিক রিসোর্ট ও ফ্যাক্টরির। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আছে শতকোটি টাকা। তার অবৈধ সম্পদের খোঁজে নেমেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।
মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী ছিলেন কলেজ শিক্ষক। বর্তমানে তিনি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলী গৃহিণী। প্রথম পক্ষের মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতা ঢাকার নামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শেষে কানাডা প্রবাসী। ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্নব যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করেছেন। দেশে ফিরে বিয়ে করেছেন চট্টগ্রামের এক ঋণখেলাপি শিল্পপতির মেয়ে। দ্বিতীয় ঘরের মেয়ে ইফতিমা রহমান মাধবী বারডেম মেডিকেল কলেজে পড়ছেন। আর ছাগলকাণ্ডের জন্ম দেওয়া ছেলে মুশফিকুর রহমান নটর ডেম কলেজের ছাত্র।
ছোট ছেলে ইরফানের বয়স সাত বছর। এছাড়া মতিউরের এক ভাই নূরুল হুদা ছিলেন বেকার, বখাটে। আরেক ভাই কাইয়ুম হাওলাদার গার্মেন্টে চাকরি করতেন। বাবা আব্দুল হাকিম ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাদের মধ্যে আব্দুল হাকিম, লাকী ও কাইয়ুমের নামমাত্র আয় থাকলেও অন্য সবার ব্যয়ের উৎস ছিল মতিউরের বেতনের অর্থ।
অত্যন্ত সাধারণ পারিবারিক পরিচয়ের এ ব্যক্তিরাই এখন শত শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক। তাদের নামে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি, ফ্ল্যাট, পার্ক, রিসোর্ট, শিল্পকারখানা-কী নেই। কারও নামে পুঁজিবাজারে আছে বিপুল বিনিয়োগ। অভিযোগ আছে, অতি ধূর্ত মতিউর নিজের অবৈধ আয় আড়াল করতে কাগজে-কলমে পরিবারের সবাইকে সম্পদশালী করে দিয়েছেন। নিজের নামে রেখেছেন সামান্য কিছু। যাতে আইনের ফাঁকফোকরে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে পারেন।
আয়কর ফাইলের তথ্য বলছে, তিনি মাত্র ২০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। এর মধ্যে ১৩ কোটি টাকা আছে নগদ। যদিও আয়কর ফাইলের তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। ফাইলে উল্লিখিত ও বাস্তব সম্পদে দৃশ্যমান ফারাক থাকলেও এর আগে চার দফা তার অবৈধ সম্পদ খুঁজে পায়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রতিবারই রহস্যজনক কারণে অভিযোগ পরিসমাপ্তি করেছে সংস্থাটি। তবে এবার দুদকের পাশাপাশি মতিউর পরিবারের সম্পদের খোঁজে নেমেছে এনবিআর-এর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল সিআইসি। একাধিক সূত্রে পাওয়া গেছে উল্লিখিত তথ্য।
জানা যায়, ছাগলকাণ্ডের শুরুর দিকে পরিস্থিতি ভিন্নখাতে নিতে ইফাতকে ছেলে হিসাবে অস্বীকার করে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন মতিউর। সেখানে দাবি করেন, শেয়ারবাজার থেকে মুনাফা করে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তবে তার সবশেষ আয়কর নথিতে পুঁজিবাজারে মাত্র ৮২ লাখ টাকা বিনিয়োগের তথ্য উল্লেখ করেছেন। হাতে নগদ আছে ১২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এছাড়া ৫০ লাখ টাকার এফডিআর, ৩ কোটি টাকার অকৃষি সম্পত্তি এবং একটি মৎস্য খামারকে ৫০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া আছে তার। আয়কর নথিতে তার আর কোনো সম্পত্তির কথা উল্লেখ নেই। আয়কর ফাইলের তথ্য নেওয়ার সময় এক কর্মকর্তা হাসির ছলে বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের তুলনায় স্যার অত্যন্ত গরিব।’
সরেজমিন অনুসন্ধানে মতিউরের সম্পদের ভিন্নচিত্র পাওয়া গেছে। তার পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, মতিউর, দুই স্ত্রী ও দুই পক্ষের দুই সন্তান মিলে অন্তত এক ডজন বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করেন। এর মধ্যে ৩/৪ কোটি টাকা দামের গাড়িও আছে। অথচ মতিউর ও তার স্ত্রী-সন্তানের আয়কর ফাইলে কোনো গাড়ির তথ্য নেই। জানা যায়, এ গাড়িগুলো ব্যক্তি নামে না করে স্ত্রী, ভাই ও মেয়ের মালিকানায় যেসব কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, সেসব কোম্পানির নামে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে।
এমনকি রিফাতের ব্যবহার করা প্রাডো ও প্রিমিও মডেলের যে ৪টি গাড়ি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, সেগুলোও তাদের নামে নেই। বিআরটিএ-এর নথি দেখে জানা যায়, ইফাতের ব্যবহার করা প্রাডো মডেলের গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন এসকে ট্রিম ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের নামে। প্রিমিও মডেলের একটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ব্যাংকের নামে। অর্থাৎ হাতে ১৩ কোটি টাকা নগদ থাকার পরও চতুর মতিউর স্ত্রী-ছেলের ব্যবহারের জন্য গাড়ি কিনেছেন ব্যাংক ঋণে। আরেকটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ৯০, মহাখালীর একটি কার শোরুমের নামে।
আরও জানা যায়, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকের ৮ নম্বর রোডে ৫ কাঠা জায়গার ওপর অত্যাধুনিক বাড়ি বানিয়েছেন মতিউর রহমান। এ বাড়ির একটি ফ্লোরে প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে বসবাসও করেন। বাকি অ্যাপার্টমেন্টগুলো ভাড়া দেওয়া। পরিবারের সবাই জানেন, এই বাড়ি মতিউরের টাকায় তৈরি করা। অথচ বাড়িটি কাগজে-কলমে মতিউরকন্যা ফারজানা রহমান ইপ্সিতার নামে নিবন্ধন করা হয়েছে। বেকার বখাটে ভাইয়ের নামে ফার্মগেট এলাকায় আছে গার্মেন্ট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এগুলোও কিনেছেন মতিউরের টাকায়।
আরও জানা যায়, ছোট স্ত্রীর নামে ধানমন্ডিতে একটি, লালমাটিয়ায় একটি, কাকরাইলে দুটিসহ আরও বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট কিনেছেন মতিউর। তার নামে পুঁজিবাজারে প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনে বিপুল বিনিয়োগ করেছেন। অথচ গৃহিণী স্ত্রী শাম্মী আখতারের আয়ের কোনো উৎস নেই। পুরান ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে এসকে থ্রেড নামে সুতা তৈরির কারখানা আর টঙ্গীতে এসকে ট্রিম ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড নামের গার্মেন্ট সরঞ্জাম তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন মতিউর। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার ছোট ভাই কাইয়ুম হাওলাদার। অথচ একসময় তিনি নিজেই গার্মেন্টে চাকরি করতেন। সেই কাইয়ুম বড় ভাইয়ের অর্থ ছাড়া নিজের আয় দিয়ে কয়েক শ কোটি টাকা খরচে এই শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরি করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তার ঘনিষ্ঠরা।
এছাড়াও প্রথম পক্ষের স্ত্রী, কন্যা ও ছেলের নামে ওয়ান্ডার পার্ক, পূবাইল শুটিং স্পট ও রিসোর্ট, খামারসহ বিপুল সম্পদ করেছেন। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানের নামে যখন বিনিয়োগ করা হয়েছে, তখন স্ত্রীর সামান্য কিছু আয়ের উৎস থাকলেও ছেলে-মেয়ের কোনো আয় ছিল না। অবৈধপথে মতিউরের আয়ের টাকাই মূলত স্ত্রী-সন্তানদের নামে তৈরি করা এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
বড় কোনো সংশোধনী ছাড়াই জাতীয় সংসদে অর্থ বিল উত্থাপন হচ্ছে আজ। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস হবে আগামীকাল, যা সোমবার নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন কার্যকর হবে। এর আগে ৬ জুন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে আসন্ন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
ওই সময় উত্থাপিত প্রস্তাবগুলোয় উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটছে না বলে সূত্রে জানা গেছে। এবারের বাজেটে উত্থাপিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার বিষয়টি। এ নিয়ে সংসদের ভেতরে-বাইরে নানা মহলে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হলেও এ প্রস্তাবে কোনো পরিবর্তন আনা হচ্ছে না।
বাজেট প্রস্তাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের ওপর ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স বসানোর কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী। এতে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আপত্তি থাকলেও তা আমলে নেয়া হচ্ছে না। সংশোধনী বাজেটে আগের মতোই ৫০ লাখ টাকা লাভের ওপর কর আরোপের সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকবে আভাস পাওয়া গেছে। এর ফলে পতনের মধ্যে থাকা বাজার আরো খারাপের দিকে যাবে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ এ কর বাতিলের দাবিতে বিবৃতিও দিয়েছে। যদিও এনবিআর এ কর প্রত্যাহার করবে না বলে জানা গেছে।
সংসদে বিরোধী দলের সদস্যরা প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক হিসেবেই দেখছেন। তাদের ভাষ্যমতে, অর্থনীতির চলমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় এতে কোনো নতুনত্ব আনা হয়নি।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এটি একটা গতানুগতিক বাজেট। এতে নতুনত্বের কিছুই নেই। সেই কালো টাকা সাদা, সেই আয়-ব্যয়-রাজস্ব, নতুন কিছুই নেই। দুর্নীতি প্রতিরোধ বা জবাবদিহিতার কোনো অপশন নেই।’
তবে নতুন অর্থ বিলে আয়কর ও কাস্টমস সংক্রান্ত সামান্য কিছু পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। বিশেষ করে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের চাপে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোর কর অবকাশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থাৎ এসব অঞ্চল ও পার্কের কর অবকাশ সুবিধা আগের মতোই বহাল থাকছে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিত শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি শুল্কও আগের মতো শূন্য শতাংশ রাখা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ বা উন্নয়নের জন্য ডেভেলপারদের আমদানি করা যন্ত্রপাতির শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। শিল্প স্থাপনের মূলধনি যন্ত্রপাতিতেও ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা বাতিল করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গত সপ্তাহে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর সুবিধা প্রত্যাহারসহ ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী এসব সুবিধা বহাল রাখার নির্দেশনা আসে।
এছাড়া সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক আরোপের প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন নাও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বাজেট উত্থাপনকালে সব নাগরিককে কর প্রদানে উৎসাহিত করতে এমন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। তবে সংসদ সদস্যদের চাপে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাবটি টেকার সম্ভাবনা কম বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
প্রস্তাবিত বাজেট পাসের মাধ্যমে সরকার নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সব সময়ই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের বিষয়টি আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাজেট পরিকল্পনায় থাকে। তিনি ধাপে ধাপে ওই লক্ষ্যটায় যাওয়ার চেষ্টা করেন। সব সময়ই বাজেট করার আগেই উনি এটা খেয়াল রাখেন। উনি জনগণকে যে ওয়াদা করেছেন সেটা প্রতিফলন থাকবে বলে আমি মনে করি। যে বাজেট প্রস্তাবটা এসেছে তার অধিকাংশই পাস হবে।’
কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিতে রিটার্ন জমার স্লিপ প্রদর্শনের শর্তে পরিবর্তন আসছে। সেক্ষেত্রে পৌর এলাকা বা গ্রামাঞ্চলে এ স্লিপ প্রদর্শনের প্রয়োজন পড়বে না। তবে সিটি করপোরেশন এলাকায় তা প্রদর্শন করতে হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় আরো কমিয়ে ঋণ গ্রহণের নির্ভরতা কমিয়ে আনা উচিত ছিল বলে মনে করছে জাতীয় পার্টি। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এটি একটা গতানুগতিক বাজেট। উচিত ছিল উন্নয়ন ব্যয় কমিয়ে রাখা, পরিচালন ব্যয় আরো কমানো। ঋণ যাতে কম নিতে হয়, সেই ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। প্রত্যক্ষ করের দিকে নজর দেয়া উচিত ছিল। আমাদের দেশে যারা আয় করে, তারা ট্যাক্স দেয় না। ঋণ খেলাপ যদি বন্ধ করা না যায়, তাহলে আমাদের অর্থনীতি হুমকিতে পড়বে। আমাদের বর্তমান সমস্যাগুলো অর্থনৈতিক কারণে তৈরি হয়নি। এটা হয়েছে জবাবদিহিতার অভাবে এবং সুশাসন না থাকায়। দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রসার ঘটেছে, যা টেনে ধরার কোনো উপায় রাখা হয়নি।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে ভর্তুকি থেকে সরে আসার একটা প্রয়াস দেখা গেছে। ঘাটতি বাজেটও ৫ শতাংশের ঘরে ধরে রাখা হয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে না। আর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যও পূরণ হবে না। এটা ৭ শতাংশ হলেও আমি খুশি। সংসদের বাজেট আলোচনায় আমরা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অপচয়ের জৌলুস নিয়ে কথা বলেছি। গ্রামে বিদ্যুৎ নিয়ে মানুষের দুর্ভোগের কথা বলেছি। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় বাধ্যতামূলকভাবে ডাক্তারদের দুই বছর নিয়োগের বিধান করতে বলেছি। যতটা পেরেছি যেসব বিষয় বলা দরকার, সেগুলো আমরা তুলে ধরেছি। সর্বোপরি একটি ধারাবাহিক বাজেট পাস হতে যাচ্ছে।’