০৬:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

রূপের ডালি খেলা (পর্ব-২২)

  • Sarakhon Report
  • ০৪:০০:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪
  • 17

ইউ. ইয়াকভলেভ

স্কেটস, বগলে ছেলেটা-১১

প্রত্যেকটা বাড়িরই এক-একটা নিজস্ব গন্ধ আছে, এমনকি তা যদি বাসাবাড়ি না হয় তাহলেও। ডাকঘরের আছে ডাকঘর-ডাকঘর গন্ধ, রুটির দোকানে রুটি-রুটি, হাসপাতালে ওষুধপত্রের গন্ধ।

ডাকঘরের গন্ধে থাকে পার্শেল আর বুক-পোস্ট, টাটকা খবরের কাগজ আর কালো ডাক-ছাপ দেওয়া বিদেশী টিকিটের কাহিনী। রুটির দোকানের গন্ধ শোনায় কড়া-সে’কা পাঁউরুটির চটা, কালো কালো মশলা দেওয়া আংটা রুটি, মিষ্টি সিরাপের প্রলেপ দেওয়া বান-রুটির ডাক।

হাসপাতালের গন্ধে কিন্তু ভালো কিছুর আমেজ থাকে না। ঢুকতেই সে গন্ধ লোকের নাকে যায়, ব্যথা আর যন্ত্রণার খবর দিয়ে মন খারাপ করে দেয় তার।

‘ভর্তি’র ঘর’ নাম লেখা দরজাটা দিয়ে ঢুকতেই এই গন্ধটা পেলে ছেলেটা। ভর্তি’র ঘরে একেবারে জমকালো স্তব্ধতা। সত্যি বলতে, এটা খাস ভর্তি’র ঘর নয়, তার সামনের করিডর মাত্র। চকচকে, পিচ্ছিল টালি বাঁধানো মেঝের ওপর একটা শাদা কাঠের বেঞ্চি ছাড়া আর কিছু নেই এখানে।

ইতস্তত করে ছেলেটা গিয়ে দাঁড়াল একটা কাঁচের দরজার কাছে। দরজাটা আধখোলা। উ’কি দিতেই চোখাচোখি হয়ে গেল ডিউটি-রত ডাক্তারের সঙ্গে। ডাক্তারের মাথায় শাদা টুপি, বড়ো-বড়ো কালো দাড়ি। স্মকের আস্তিন কনুই পর্যন্ত গোটানো। চেহারাটা তার কড়া, ছেলেটার মনে হল, একটু যেন রগচটা। আগন্তুককে ডাক্তার কড়া দৃষ্টিতে যাচাই করে নিয়ে বেরিয়ে এল করিডরে। ছেলেটার কাছে গিয়ে সে যা বললে তা একেবারে অপ্রত্যাশিত:

‘তোর এটা ‘বৃটিশ স্পোর্ট’স’? কই দে তো দেখি।’

অবাক হয়ে ছেলেটা স্কেটস্ এগিয়ে দিল ডাক্তারকে। ডাক্তার সেটা নিয়ে নখ দিয়ে তার ধার পরীক্ষা করলে। স্কেটস্ জোড়া ডাক্তার যতক্ষণ দেখছিল, ছেলেটা ততক্ষণ তাকিয়ে ছিল ডাক্তারের দিকে। লোকটা অল্পবয়সী। মুখে তার একটিও বলিরেখা নেই, আর গালদুটো এমন লাল যেন এইমাত্র স্কেটিং করে ফিরেছে। এ কথাটা ভাবতেই ছেলেটার মনটা হালকা হালকা লাগল। জিজ্ঞেস করলে:

‘আপনাদের এখানে একজন রোগী এসেছে। ল. বাতিউকভ। কেমন আছে সে?’

স্কেটস্ জোড়া ফেরত দিয়ে ডাক্তার দাড়ি চুলকাল।

‘বাতিউকভ?’ জিজ্ঞেস করলে সে, ‘বুকে শেলের টুকরো?’

‘হ্যাঁ, হ্যাঁ,’ তাড়াতাড়ি সায় দিলে ছেলেটা, ‘অ্যাম্বুলেন্স গাড়িতে এসেছে।’

‘সবাই আমাদের কাছে অ্যাম্বুলেন্স গাড়িতেই আসে।’

চুপ করে রইল ছেলেটা।

‘কেসটা কঠিন,’ হঠাৎ কোমল হয়ে এল ডাক্তারের গলা, কঠোরতার চিহ্নমাত্র রইল না, ‘কী দাঁড়াল এক্ষুনি জেনে নিচ্ছি। তুই ওই বেঞ্চিটায় ততক্ষণ বসে থাক্। অবিশ্যি বাইরের লোকের থাকা এখানে বারণ, তবে কেসটা গুরুতর।’

ডাক্তার তার ভর্তি’র ঘরে ঢুকে গেল আর ছেলেটা বসল বেঞ্চিতে। বসতেই সারা শরীর জুড়ে এমন একটা দুর্বলতা পেয়ে বসল তাকে যে চোখ বন্ধ করে ফেললে। এমন পর্যন্ত তার মনে হল সে আর কখনোই যেন খাড়া হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।

কানে আসছিল তার কাঁচের দরজাটার ওপাশে টেলিফোন করছে দাড়ি-ওয়ালা নবীন ডাক্তারটি, জিজ্ঞেস করলে বাতিউকভের কথা, নিজের পরিচয় দিলে ভর্তি ঘরের ডাক্তার কন।

কিছুক্ষণ পরে ফের তাকে দেখা গেল দরজায়। পরীক্ষকের দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে চেয়ে সে বললে:

‘শোন। এক্ষুনি বাবার অপারেশন করা হবে। অপেক্ষা করবি?’

‘করব।’

তারিফের ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে ডাক্তার অন্তর্ধান করলে দরজার ওপাশে।

 

রূপের ডালি খেলা (পর্ব-২২)

০৪:০০:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪

ইউ. ইয়াকভলেভ

স্কেটস, বগলে ছেলেটা-১১

প্রত্যেকটা বাড়িরই এক-একটা নিজস্ব গন্ধ আছে, এমনকি তা যদি বাসাবাড়ি না হয় তাহলেও। ডাকঘরের আছে ডাকঘর-ডাকঘর গন্ধ, রুটির দোকানে রুটি-রুটি, হাসপাতালে ওষুধপত্রের গন্ধ।

ডাকঘরের গন্ধে থাকে পার্শেল আর বুক-পোস্ট, টাটকা খবরের কাগজ আর কালো ডাক-ছাপ দেওয়া বিদেশী টিকিটের কাহিনী। রুটির দোকানের গন্ধ শোনায় কড়া-সে’কা পাঁউরুটির চটা, কালো কালো মশলা দেওয়া আংটা রুটি, মিষ্টি সিরাপের প্রলেপ দেওয়া বান-রুটির ডাক।

হাসপাতালের গন্ধে কিন্তু ভালো কিছুর আমেজ থাকে না। ঢুকতেই সে গন্ধ লোকের নাকে যায়, ব্যথা আর যন্ত্রণার খবর দিয়ে মন খারাপ করে দেয় তার।

‘ভর্তি’র ঘর’ নাম লেখা দরজাটা দিয়ে ঢুকতেই এই গন্ধটা পেলে ছেলেটা। ভর্তি’র ঘরে একেবারে জমকালো স্তব্ধতা। সত্যি বলতে, এটা খাস ভর্তি’র ঘর নয়, তার সামনের করিডর মাত্র। চকচকে, পিচ্ছিল টালি বাঁধানো মেঝের ওপর একটা শাদা কাঠের বেঞ্চি ছাড়া আর কিছু নেই এখানে।

ইতস্তত করে ছেলেটা গিয়ে দাঁড়াল একটা কাঁচের দরজার কাছে। দরজাটা আধখোলা। উ’কি দিতেই চোখাচোখি হয়ে গেল ডিউটি-রত ডাক্তারের সঙ্গে। ডাক্তারের মাথায় শাদা টুপি, বড়ো-বড়ো কালো দাড়ি। স্মকের আস্তিন কনুই পর্যন্ত গোটানো। চেহারাটা তার কড়া, ছেলেটার মনে হল, একটু যেন রগচটা। আগন্তুককে ডাক্তার কড়া দৃষ্টিতে যাচাই করে নিয়ে বেরিয়ে এল করিডরে। ছেলেটার কাছে গিয়ে সে যা বললে তা একেবারে অপ্রত্যাশিত:

‘তোর এটা ‘বৃটিশ স্পোর্ট’স’? কই দে তো দেখি।’

অবাক হয়ে ছেলেটা স্কেটস্ এগিয়ে দিল ডাক্তারকে। ডাক্তার সেটা নিয়ে নখ দিয়ে তার ধার পরীক্ষা করলে। স্কেটস্ জোড়া ডাক্তার যতক্ষণ দেখছিল, ছেলেটা ততক্ষণ তাকিয়ে ছিল ডাক্তারের দিকে। লোকটা অল্পবয়সী। মুখে তার একটিও বলিরেখা নেই, আর গালদুটো এমন লাল যেন এইমাত্র স্কেটিং করে ফিরেছে। এ কথাটা ভাবতেই ছেলেটার মনটা হালকা হালকা লাগল। জিজ্ঞেস করলে:

‘আপনাদের এখানে একজন রোগী এসেছে। ল. বাতিউকভ। কেমন আছে সে?’

স্কেটস্ জোড়া ফেরত দিয়ে ডাক্তার দাড়ি চুলকাল।

‘বাতিউকভ?’ জিজ্ঞেস করলে সে, ‘বুকে শেলের টুকরো?’

‘হ্যাঁ, হ্যাঁ,’ তাড়াতাড়ি সায় দিলে ছেলেটা, ‘অ্যাম্বুলেন্স গাড়িতে এসেছে।’

‘সবাই আমাদের কাছে অ্যাম্বুলেন্স গাড়িতেই আসে।’

চুপ করে রইল ছেলেটা।

‘কেসটা কঠিন,’ হঠাৎ কোমল হয়ে এল ডাক্তারের গলা, কঠোরতার চিহ্নমাত্র রইল না, ‘কী দাঁড়াল এক্ষুনি জেনে নিচ্ছি। তুই ওই বেঞ্চিটায় ততক্ষণ বসে থাক্। অবিশ্যি বাইরের লোকের থাকা এখানে বারণ, তবে কেসটা গুরুতর।’

ডাক্তার তার ভর্তি’র ঘরে ঢুকে গেল আর ছেলেটা বসল বেঞ্চিতে। বসতেই সারা শরীর জুড়ে এমন একটা দুর্বলতা পেয়ে বসল তাকে যে চোখ বন্ধ করে ফেললে। এমন পর্যন্ত তার মনে হল সে আর কখনোই যেন খাড়া হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।

কানে আসছিল তার কাঁচের দরজাটার ওপাশে টেলিফোন করছে দাড়ি-ওয়ালা নবীন ডাক্তারটি, জিজ্ঞেস করলে বাতিউকভের কথা, নিজের পরিচয় দিলে ভর্তি ঘরের ডাক্তার কন।

কিছুক্ষণ পরে ফের তাকে দেখা গেল দরজায়। পরীক্ষকের দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে চেয়ে সে বললে:

‘শোন। এক্ষুনি বাবার অপারেশন করা হবে। অপেক্ষা করবি?’

‘করব।’

তারিফের ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে ডাক্তার অন্তর্ধান করলে দরজার ওপাশে।