শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন

নীলের বিশ্বায়ন – নীল ও ঔপনিবেশিক বাংলায় গোয়েন্দাগিরি (পর্ব-৪২)

  • Update Time : বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪, ১০.০০ পিএম

পিয়ের পল দারাক ও ভেলাম ভান সেন্দেল

অনুবাদ : ফওজুল করিম


বীজ বপনকালে মই ব্যবহার করলে বীজ বপনের অব্যবহিত পরে অথবা পরের দিনের মধ্যেই বীজ লাগাতে হবে, কেননা গ্রীষ্ম প্রধান দেশে বীজের অঙ্কুরোদগম হর দিনের মতে। বীজ বপনের পরপর যদি প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয় অথবা যদি সূর্য ওঠে- যা নাকি বঙ্গদেশে অহরহ ঘটে- তাহলো ঠিক মাটির উপরে একটি আবরণের মত পড়ে, এতে বীজের অঙ্কুরোদগম ব্যাহত হয়, এতে বীজ মরেও যেতে পারে। এ রকম হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যবস্থা পাল্টাতে দ্রুত আরও একবার ক্ষেতে মই দিয়ে মাটির ওই আবরণটি ভাঙতে হবে। বীজ লাগাবার পর যদি দেখা যায় ক্ষেতের এক জায়গায় বীজের অঙ্কুরোদগম হয়নি অথচ অন্য সব জায়গায় চারা গাছ গজিয়েছে তাহলে ওই জায়গায় আবার বীজ বুনতে হবে।

আগাছা সাফ করা

নীলের আবাদে কয়েক বার নিড়ানি দিতে হয়। বিশেষ করে সে জমি যদি উঁচু হয় আর সে জমিতে যদি বানের পানি না গিয়ে থাকে। নীলের চারাগাছগুলো যখন তিন ফুটের মত লম্বা হয় অথবা তার আগেও যদি ক্ষেতে আগাছা দেখা দেয় তাহলেই নিড়ানি দেওয়া যেতে পারে। যে কোনো আগাছাই যে নীল গাছের জন্য ক্ষতিকর তেমন নয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে বাংলাদেশের দুর্বা ঘাস নীল গাছের পক্ষে একেবারেই ক্ষতিকর নয়। বরং মাটিতে দুর্বা ঘাসের আবরণ গাছের শিকড়কে সূর্যের কিরণ থেকে রক্ষা করে। তাই নীলের ক্ষেতে নিড়ানি দেওয়ার সময় দুর্বা ঘাস উপরানো হয় না।

যে যন্ত্র দিয়ে নিড়ানি দেয়া হয়, তার নামও নিড়ানি। কাঠের হাতলসহ যন্ত্রটি দেড় ফুটের মত লম্বা।

নিড়ানি ছোটো আকারের যন্ত্র হওয়ায় এটি আগাছার গোড়ার দিকে টেনে নিয়ে আগাছা উপড়ানো যায়। আগাছা উপড়ালে গাছের কোনো ক্ষতি হয় না। কোনো কোনো জমিতে ও কোনো কোনো মওশুমে ক্ষেতে নিড়ানি দেয়া বেশ ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার।

নীল গাছের জন্য আদ্রতা প্রয়োজন। বিশেষ করে নীল গাছের বৃদ্ধিতে অব্যাহত আদ্রতা অপরিহার্য। বঙ্গদেশে নীল গাছ বপনের পর চারা ভালভাবে বৃদ্ধি হয় না। প্রথম বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সঙ্গে একেবারে পাল্টে যায় পরিস্থিতি। এরপর নীলের চারা এত দ্রুত গতিতে বাড়ে যে তখন থেকে সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যে এগুলো কেটে ঘরে তোলা যায়।

বছরে নীল ঘরে তোলা যায় দু’বার। মার্চ বা এপ্রিলে ফসল বোনা হলে প্রথম ফসল ঘরে ওঠে জুলাই-এর প্রথম দিকে। প্রথম ফসল ঘরে তোলারানা জলে প্রথম দ্বিতীয় ফসলের কাজ শুরু হয়। এ ফসল ঘরে ওঠে আগস্টের শেষে। কিন্তু আগস্টের পরে হলে বর্ষার পানিতে ক্ষেত ডুবে যাবে। দ্বিতীয় বার ফসল হয় প্রথমন্কিারে আগস্টের এক তৃতীয়াংশ কম। প্রথমবার নীল গাছের বৃদ্ধি হয় পূর্ণভাবে। কিন্তু দ্বিতীয় বার পূর্ণভাবে বিকশিত হওয়ার আগেই তা কেটে ফেলা হয়। উচ্চ ভূমিতে লাগানো গাছ হলে তা সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়তে পারে। কিন্তু ১৫ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফসল তোলা না হলে ফসলের পরিমাণ ও গুণগত মান দুইই কমতে থাকে।

নীল কাটা

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024