শ্রী নিখিলনাথ রায়
অর্ম্মের লিখিত বিবরণানুসারে ও রেনেলের পলাশী যুদ্ধ- ক্ষেত্রের চিত্র দর্শনে এইরূপ প্রতীতি’ হয় যে, রায়দুর্লভের দক্ষিণ পরিখার সম্মুখেই নবাবের বুরুজ নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। যে স্থানে নবাবের বুরুজ নিৰ্ম্মিত-হয়, অ্যাপি তথায় তাহার কোন কোন চিহ্ন দেখিতে পাওয়া যায়। তাহার পূর্বদিকের অংশকে আজিও লোকে বুরুজডাঙ্গা কহে। এই বুরুজডাঙ্গা বর্তমান লাখবাগ হইতে প্রায় এক ক্রোশ উত্তর- পূর্ব্ব। মুর্শিদাবাদ হইতে যে সড়ক কৃষ্ণনগর পর্যন্ত গিয়াছে, তাহারই উত্তর-পূর্ব্বে একডালা নামক গ্রামের দক্ষিণ এবং সেজো গ্রামের বিলের পশ্চিমে এই বুরুজডাঙ্গা দৃষ্ট হয়।
অষ্টাদশ শতাব্দীর সড়ক পলানী- যুদ্ধের সময় আম্রকুঞ্জের নিকট দিয়াই গিয়াছিল; রেনেলের কাশীথ- বাজার দ্বীপের মানচিত্রে ইহাই নিদ্দিষ্ট হইয়াছে। বর্তমান সড়ক অষ্টাদশ শতাব্দীর আম্রকুঞ্জ ও বর্তমান তেজনগর হইতে অর্দ্ধ ক্রোশেরও অধিক উত্তরে, লোকনাথপুর নামক গ্রামের দক্ষিণ দিয়া প্রথমে পূর্ব্বে, পরে দক্ষিণাভিমুখে গমন করিয়াছে। এই সড়ক মুর্শিদাবাদ ও নদীয়া জেলার সীমা। বিশ্বকুঞ্জ হইতে অর্দ্ধক্রোশেরও কিছু অধিক উত্তরে প্রান্তর মধ্যে নূতনগ্রাম-নামে নবস্থাপিত গ্রামের নিকট একটি নিম্নভূমি দেখা যায়। সেজো গ্রামের বিলের পশ্চিম পর্যন্ত এই নিম্ন ভূমি দৃষ্ট হইয়া থাকে; ইহাই নবাব-শিবিরের পরিখা। রেনেলের মানচিত্র-নির্দিষ্ট ইংরেজ-বুরুজ হইতে নবাব-শিবিরের দূরত্বের সহিত বিশ্বকুঞ্জ হইতে ইহার দূরত্ব সমান হয়।
এই পরিখা প্রথমে রায়হর্লভ খনন করেন। বেভা- রিজ ভ্রমক্রমে লিখিয়াছেন যে, লাখবাগে রায়দুর্লভের পরিখা খনিত হইয়াছিল। নবজাত বৃক্ষ হইতে প্রায় ১৬০০ হস্ত দক্ষিণপূর্ব্বে গ্রাম্য সমাধিক্ষেত্রের নিকট অর্দ্ধচন্দ্রাকারে বিস্তৃত উচ্চ ভূমিতে মীরজাফরের সৈন্ত সমবেত হইয়াছিল বলিয়া প্রতীত হয়। গবর্ণমেন্ট-কর্তৃক যে সৈন্য- সংস্থান প্রদর্শিত হইয়াছে, লোকপ্রবাদের নির্দিষ্ট স্থান সকলের সহিত তাহার সম্পূর্ণ ঐক্য আছে বলিয়া বোধ হয় না। অষ্টাদশ শতাব্দীর পলাশী- প্রান্তরে তেজনগর, নূতনগ্রাম, কদমখালি ও লোকনাথপুর প্রভৃতি গ্রাম স্থাপিত হইয়াছে। পলাশী পরগণা কালীমবাজার-রাজবংশের জমীদারী হওয়ায়, কান্তবাবুর পুত্র রাজা লোকনাথের নামানুসারে লোকনাথপুরের নামকরণ হইয়াছে বলিয়া কথিত হইয়া থাকে।
পূর্ব্বে বলা হইয়াছে যে, ক্লাইব যুদ্ধের দিবস রাত্রিতে পলাশী প্রান্তর হইতে প্রায় তিন ক্রোশ উত্তরে দাদপুর নামক স্থানে শিবির সন্নিবেশ করেন। এই দাদপুর পূর্ব্বে মুর্শিদাবাদের একটি প্রসিদ্ধ চটী ছিল। এখানে নবাবদিগেরও অনেক লোকজন থাকিত। নিজ নবাবদিগেরও একটি বাসস্থান ছিল, তাহাকে নবাববাটী বলিত। নবাববাটীর নিকটস্থ একটি বৃহৎ জলাশয়কে নবাব-বাঁওড় নামে অভিহিত করা হইত। নবাবদিগের হস্তী, গো প্রভৃতির আবাসস্থানের চিহ্ন অত্থাপি নির্দেশ করা যায়। সেই সেই স্থানকে আজিও ফিলখানা ও গোখানা কহিয়া থাকে। রেনেলের মানচিত্রে এই ফিলখানার উল্লেখ আছে। ফিলখানা হইতে প্রায় অর্দ্ধক্রোশ উত্তরে ক্লাইব শিবির সন্নিবেশ করিয়াছিলেন, রেনেলের মানচিত্রে ঐরূপ দেখিতে পাওয়া যায়।
Leave a Reply