মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৪ পূর্বাহ্ন

 থাইল্যান্ডে মিয়ানমার শরনার্থী ও অভিবাসীদের ব্যবসা জমজমাট

  • Update Time : শুক্রবার, ৯ আগস্ট, ২০২৪, ৫.২৯ পিএম
মিয়ানমারের ট্রাডিশনাল চেইন রেস্টুরেন্ট খাইং খাইং গত ২০২৩ সালের নভেম্বরে তাদের প্রথম ব্যবসা সম্প্রসারণ শুরু করে

সারাক্ষণ ডেস্ক

যুদ্ধ বিধ্বস্ত নিজ দেশ মিয়ানমারে টিকতে না পেরে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে, যা এখনো চলমান। ফলে বেড়েছে বিভিন্ন রকম পেশা। বেশীরভাগ মিয়ানমারের শরনার্থী ও অভিবাসী এই বাড়তি মানুষের চাহিদাকে সামনে রেখে নানারকম ব্যবসা খুলে বসেছে। এসবের মধ্যে হোটেল, রেস্তোরাঁ, কাপড়ের ব্যবসা অন্যতম।

মিয়ানমারের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মাধ্যমে জানা যায়, শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাইল্যান্ডে তাদের নিজের দেশের পরিচিত ব্যবসায়ীদের সাহায্যে বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালনা করছে। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী যিনি তার মোবাইল এবং কম্পিউটার ব্যবসাকে থাইল্যান্ডে স্থানান্তর করেছেন, তিনি বলেন- “মুদ্রাস্ফীতি আর অর্থনীতির অস্থিরতার কারনে মিয়ানমারে ব্যবসা পরিচালনা করা এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে কিন্তু থাইল্যান্ড এখানে আমাদের ব্যবসা করার জন্যে একটি স্থিতিশীল পরিবেশের নিশ্চয়তা দিচ্ছে।”

মিয়ানমারের সাথে সীমান্ত ও দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বড় অর্থনীতির দেশ হিসেবে থাইল্যান্ড এখানে ব্যবসার জন্যে একটি বিকল্প বাজারের সুযোগ দিয়ে তাদের একটি নতুন বাজার খুলতে চায়।৪ দশক ধরে মিয়ানমারে ঘড়ি ব্যবসায়ী চেরি উউ রবিবার ব্যাংককে তার প্রথম স্টোর উদ্ভোধন করেন। মিয়ানমারে তার আরো ৩৮টি ঘড়ির দোকান আছে। মিয়ানমারের একটি রেস্টুরেন্ট চেইন খাইং খাইং কিআও যেটা সনাতনী মিয়ানমারের কুইজিন সেটিও থাইল্যান্ডে ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে।

মিয়ানমার  থেকে আসা শরনার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় খাইং খাইং আরো দুইট শপ থাইল্যান্ডে খুলবে বলে জানিয়েছে।

এই বছরের মার্চে খাইং খাইং কিআও এর দ্বিতীয় লোকেশন উদ্ভোধনের কথা উল্লেখ করে এর ম্যানেজার কিয়াও শয়ে বলেন, “মিয়ানমারের প্রচুর ক্রেতা বাড়ায় আমরা ব্যাংককে এর আরেকটি লোকেশন বাড়ানোর চিন্তা করছি।” প্রচুর চাহিদা থাকায় গত দুই দশকে এই চেইন শপটির প্রায় দশটি শাখা খোলা হয়েছে মিয়ানমারে। গত নভেম্বরে এর প্রথম শাখা খোলা হয় থাইল্যান্ডে।

ম্যানেজার আরো বলেন, এর বিক্রি বাড়ায় চেইনটি থাইল্যান্ডের পাত্তায়া ও চিয়াং মাইয়ে আরো দুইটি রেস্টুরেন্ট খোলার পরিকল্পনা করছে। সু, ব্যাংককের চুলালংকর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মিয়ানমার বিষয়ক গবেষক, তিনি বলেন, “থাইল্যান্ডে মিয়ানমারের বেশীভাগ ব্যবসা বাড়ানোর উদ্দেশ্য হলো, তাদের অর্থনৈতিক সম্পদের নিরাপত্তা প্রদান। আসলে এসব ব্যবসা এখনি লাভজনক হতে হবে এমন কিছু নয়। এসবের উদ্দেশ্য হলো একটি স্থায়ী ঘাঁটি স্থাপন এবং নিরাপদ জায়গায় সম্পদ স্থানান্তর।” তিনি বলেন , গত কয়েকমাসে মিয়ানমারের ক্রেতাদের কাছে এর প্রচুর চাহিদা বেড়ে গেছে।

 

                                                             মিয়ানমার-থাই সীমান্ত  দিয়ে শরনার্থীদের প্রবেশ। সট, টাক প্রভিন্স।

কত সংখ্যক মিয়ানমারের অভিবাসী থাইল্যান্ডে আছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই তবে ইউএনডিপি’র গত নভেম্বরে করা এক হিসাব মতে, এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত  প্রায় ১.৯ মিলিয়ন নিয়মিত অভিবাসী থাইল্যান্ডে বসবাস করছে। রিপোর্টটি আরো জানায় যে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারীতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ক্ষমতা ক্যু করার পর থেকে ৫ মিলিয়ন অভিবাসী এখন থাইল্যান্ডে অবস্থান করছে। এবছরের ফেব্রুয়ারীতে শুরু হওয়া সেনাবাহিনীর আবশ্যিক হিসেব শুরুর সময় সবচেয়ে বেশী মানুষ এই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটি ছেড়ে  পার্শ্ববর্তী দেশ থাইল্যান্ডে পালিয়ে এসেছে।

থাইল্যান্ডে ব্যবসা স্থাপনের মানে হলো মিয়ানমারে ব্যবসার পরিবেশ খুবই খারাপের দিকে চলে গেছে। সম্প্রতি জান্তা সরকার ব্যবসায়ী, নির্বাহী এবং ব্যাংকারদের উপরে বিভিন্ন রকম যাচাই বাছাই জোরদার করেছে ফলে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে। দেশীয় মুদ্রা কিয়াতের অবমূল্যায়নের ফলে পন্যের দাম বেড়ে গেছে। এক বছর আগে এর বাজার-ভিত্তিক বিনিময় হার প্রতি ডলারে ৫৫০০ কিয়াট থেকে ৩৩০০ তে নেমে এসেছে। ফলে জীবন মানের খরচ বেড়ে গেছে এবং ব্যবসা চালানো কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

অংসান সুকি’র দল এনএলডি এর ইকোনোমিক কমিটি মেম্বার ও অর্থনীতিবিদ সেইন তায় বলেন, “ উচ্চ পরিবহন খরচ এবং বিতরণ ব্যবস্থায় ধীরগতির কারনে মিয়ানমারে দেশজ উৎপাদন কমছে।”

সেইন তায় আরো বলেন, গত বছর গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকেই মিয়ানমারের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে এবং ক্রেতার কেনার সামর্থ্য অনেক হ্রাস পেয়েছে। এই সমস্যাগুলো মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে বাজারের দাম কমিয়ে ফেলেছে। ফলে জাতীয় ভোক্তা বাজার সরু হয়ে যাচ্ছে যাকে এককথায়  ক্রেতার খরচের শক্তি কমে যাওয়াকেই বুঝায়।

বিশ্ব ব্যাংক এর জুন মাসে প্রকাশিত সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায় যে, জনসংখ্যার দারিদ্রের হার ৩২.১ % বেড়ে গেছে কিন্তু জান্তা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত এনএলডি থেকে জোর করে ক্ষমতা দখলের আগে ২০২০ সালে ছিল মাত্র ১৭.৪% ।

সবকিছু মূল্যায়নে দেখা যায় যে, মিয়ানমারে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা খুবই কমে গেছে তাই অনেকেই তাদের ব্যবসা গুটিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ থাইল্যান্ডে নতুন করে নিরাপদে ব্যবসা করার জন্যে মুখিয়ে আছে। কিছু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন, এইসব ব্যবসা প্রসার হোস্ট অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে।

চিয়াংমাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব পলিটিকাল সাইয়েন্স এন্ড পাবলিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশনরে লেকচারার সিরাদা খেমানিত্তাথাই বলেন, মিয়ানমার পরিচালিত রেস্টুরেন্ট এবং দোকানপাট থাই সাপ্লাই চেইনকে লাভবান হতে এবং সরকারকে অতিরিক্ত রাজস্ব পেতে সাহায্য করবে। সিরাদা বলেন, থাইল্যান্ডের বেশীরভাগ মানুষের মতে, তাদের দেশে এই সব ব্যবসা তাদের কোনো ক্ষতির কারন হবেনা কারন যারা ব্যবসা করবে তারা অবশ্যই থাই সরকারের আইন মেনেই সবধরনের ব্যবসা পরিচালিত করবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024