০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

জীবন আমার বোন (পর্ব-৮৮)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০২:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪
  • 23

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

রং বারান্দায় তারই অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলো, থোকা রিকশা থেকে নেমেই হাত দেখালো, ইশারা করলো চ’লে আসার।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে উঠতে হ’লো দোতলায়, সেজখালা ডাকলো তাকে।

খোকা বললে, ‘দেরি করতে পারবো না।’

সেজখালা বললে, ‘কি চিন্তা করলি, যাচ্ছিস তোরা?’ খোকা বললে, ‘রঞ্জুকে বলেছিলাম, বলছে যাবে না-

‘আর তুই?’

‘বাড়ি দেখবে কে?

সেজখালা অসন্তুষ্ট হ’য়ে বললে, ‘কি জানি, তোরা কি বুঝেছিস তোরাই জানিস। প্রাণের ভয়ে যে যেদিকে পারছে পালাচ্ছে, আর তোরা বাড়ি বাড়ি ক’রে অস্থির হ’য়ে উঠেছিস। বাড়িঘরদোর যেন আর কারো নেই। মারামারি বেধে গেলে তাল সামলাতে পারবি?’ খোকা বললে, ‘শুনছি তো সব মীমাংসা হ’য়ে যাচ্ছে–‘

সেজখালা বললে, ‘সেতো আমরাও শুনছি, কিন্তু মানুষজনের শহর ছেড়ে গ্রামে পালানোও তাই ব’লে বন্ধ নেই। না আছে মাথার উপর কেউ, না আছে কোনো কাণ্ডজ্ঞান, শেষ পর্যন্ত সামাল দিতে পারলে হয়–‘

খোকা বিরস কণ্ঠে বলল, ‘এতসব লম্ফঝম্প সেকি শুধু শহর ছেড়ে গ্রামে পালানোর জন্যে, কিছু আসে না আমার মাথায়!”

‘বুঝি না বাপু, শুনছি তো হুড়দাঙ্গা হবেই–‘ সেজখালা আড়াল হ’তেই বেলী এসে দাঁড়ায়। তার চোখের কোলে কালি, দুশ্চিন্তাকাতর মনে হয় খোকার।

‘কবে তোর রাগ পড়বে?’

খোকা বললে, ‘কোনোদিনই না–‘

কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো বেলী, রঞ্জুকে দেখে সে থেমে গেল।

রঞ্জ বললে, ‘যাবি তো তৈরি হ’য়ে নে–‘

‘তখন যে বললি যাবি?’

বেলীর মুখ ম্লান। সে বললে, ‘আজ থাক!’

‘ইচ্ছে করছে না আর এখন–‘

‘রংবাজি!’

রজুকে নিয়ে এক সময় বেরিয়ে পড়লো থোকা, রিকশা ধরলো সেগুনবাগিচার। সেই পুরানো গোঁ রঞ্জুর, কিছুতেই যাবে না সে, কিন্তু

কোনো ওজর-আপত্তিই শুনবে না খোকা, সে বললে, ‘বড় অবাধ্য তুই।’

‘তাই ব’লে সারাদিন বাড়ির বাইরে থাকতে হবে?’

‘এক-আধদিন এ রকম হ’য়ে যায় রাজীব ভাই দু’দিন যাবৎ বাইরে যাওয়া বন্ধ ক’রে দিয়েছে। থোকাকে দেখে খুশি হ’য়ে বললে, ‘এ-ক’দিন কোথায় ছিলে খোকা সাহেব, হাতা গুটিয়ে সংগ্রামে নেমে পড়েছো বুঝি?’

 

জীবন আমার বোন (পর্ব-৮৮)

১২:০২:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

রং বারান্দায় তারই অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলো, থোকা রিকশা থেকে নেমেই হাত দেখালো, ইশারা করলো চ’লে আসার।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে উঠতে হ’লো দোতলায়, সেজখালা ডাকলো তাকে।

খোকা বললে, ‘দেরি করতে পারবো না।’

সেজখালা বললে, ‘কি চিন্তা করলি, যাচ্ছিস তোরা?’ খোকা বললে, ‘রঞ্জুকে বলেছিলাম, বলছে যাবে না-

‘আর তুই?’

‘বাড়ি দেখবে কে?

সেজখালা অসন্তুষ্ট হ’য়ে বললে, ‘কি জানি, তোরা কি বুঝেছিস তোরাই জানিস। প্রাণের ভয়ে যে যেদিকে পারছে পালাচ্ছে, আর তোরা বাড়ি বাড়ি ক’রে অস্থির হ’য়ে উঠেছিস। বাড়িঘরদোর যেন আর কারো নেই। মারামারি বেধে গেলে তাল সামলাতে পারবি?’ খোকা বললে, ‘শুনছি তো সব মীমাংসা হ’য়ে যাচ্ছে–‘

সেজখালা বললে, ‘সেতো আমরাও শুনছি, কিন্তু মানুষজনের শহর ছেড়ে গ্রামে পালানোও তাই ব’লে বন্ধ নেই। না আছে মাথার উপর কেউ, না আছে কোনো কাণ্ডজ্ঞান, শেষ পর্যন্ত সামাল দিতে পারলে হয়–‘

খোকা বিরস কণ্ঠে বলল, ‘এতসব লম্ফঝম্প সেকি শুধু শহর ছেড়ে গ্রামে পালানোর জন্যে, কিছু আসে না আমার মাথায়!”

‘বুঝি না বাপু, শুনছি তো হুড়দাঙ্গা হবেই–‘ সেজখালা আড়াল হ’তেই বেলী এসে দাঁড়ায়। তার চোখের কোলে কালি, দুশ্চিন্তাকাতর মনে হয় খোকার।

‘কবে তোর রাগ পড়বে?’

খোকা বললে, ‘কোনোদিনই না–‘

কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো বেলী, রঞ্জুকে দেখে সে থেমে গেল।

রঞ্জ বললে, ‘যাবি তো তৈরি হ’য়ে নে–‘

‘তখন যে বললি যাবি?’

বেলীর মুখ ম্লান। সে বললে, ‘আজ থাক!’

‘ইচ্ছে করছে না আর এখন–‘

‘রংবাজি!’

রজুকে নিয়ে এক সময় বেরিয়ে পড়লো থোকা, রিকশা ধরলো সেগুনবাগিচার। সেই পুরানো গোঁ রঞ্জুর, কিছুতেই যাবে না সে, কিন্তু

কোনো ওজর-আপত্তিই শুনবে না খোকা, সে বললে, ‘বড় অবাধ্য তুই।’

‘তাই ব’লে সারাদিন বাড়ির বাইরে থাকতে হবে?’

‘এক-আধদিন এ রকম হ’য়ে যায় রাজীব ভাই দু’দিন যাবৎ বাইরে যাওয়া বন্ধ ক’রে দিয়েছে। থোকাকে দেখে খুশি হ’য়ে বললে, ‘এ-ক’দিন কোথায় ছিলে খোকা সাহেব, হাতা গুটিয়ে সংগ্রামে নেমে পড়েছো বুঝি?’