পিওতর মান্তেইফেল
চলমান বাসা
শেষ পর্যন্ত আমাদের জাহাজ ছাড়ল। আমি ছিলাম গলুইয়ে, চারপাশে রাজ্যের সরঞ্জাম: দড়ি-দড়া, নোঙরের শেকল, হুক এবং আরো কত কী, যার অর্থ কেবল মাঝি-মাল্লাদের কাছেই বোধগম্য। আমি সেগুলো খুঁটিয়ে দেখছিলাম, কেননা ওগুলোরই ভেতর দুটো ছোট্ট পাখি লুকিয়ে পড়েছিল। কিন্তু কোথায়?
পায়ে পায়ে গলুইটা পরীক্ষা করে দেখে শেষ পর্যন্ত পেয়ে গেলাম যা খুজছিলাম। গলুইয়ে গুটিয়ে রাখা দড়ার পাকের মধ্যে বাসা পেতেছে ছিমছাম চিফ-চ্যাফ পাখি।
তাতে পাঁচটা ক্ষুদে ক্ষুদে ছানা, তখনো পালক ওঠে নি, ক্ষীণ চি’চি’ স্বরে খাবার চাইছিল। মানুষের ‘বিপজ্জনক’ সান্নিধ্য সত্ত্বেও মা-বাপে ব্যস্ত-সমস্ত হয়ে ঘুরঘুর করছিল তাদের চারপাশে।

এটা ঘটে আরল সাগরে, শুটকী মাছ ভরা একটা জাহাজে। যাত্রা শুরুর আগে জাহাজটা দু’সপ্তাহের বেশি তীরে ভিড়ে ছিল মেরামতির জন্যে। এই দাঁড়িয়ে থাকার সময়টা চিফ-চ্যাফ দম্পতি জাহাজের নিশ্চলতায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং বাসা বাঁধে সেখানে।
জাহাজ যখন ছাড়ল, তখন সে জাহাজকে অনুসরণ করা ছাড়া ওদের গত্যন্তর রইল না, কেননা তাঁর থেকে ক্রমেই দূরে জাহাজটা টেনে নিয়ে যাচ্ছিল তাদের বাসা।
ভূরিভোজী ছানাগুলোকে খাওয়াবার জন্যে ওরা ডেকে মাছি এবং অন্যান্য কীট-পতঙ্গ ধরত। বাতাসে ডেক থেকে মাছি উড়িয়ে নিয়ে গেলে ওরাও খোলা সমুদ্রে উড়ে গিয়ে শিকার ধরে ফের ফিরে আসত তাদের ভাসমান বাসায়।

কী একটা অনুক্ত চুক্তিতে জাহাজের সমস্ত লোকই সযত্নে আগলিয়ে রাখত তাদের পালকওয়ালা সহযাত্রীদের।
…ডাঙা দেখা যেতেই দুটো পাখিই উড়ে গেল তাঁরে। অনেক পরে তারা ফিরে এল ঠোঁট ভর্তি ছোটো ছোটো কীট নিয়ে।
চিফ-চ্যাফের এ আচরণ যেন বা অভিজ্ঞতার বিপরীত, কেননা তাদের বাসা মাত্র কয়েক মিটার সরিয়ে রাখলেই তারা আর তা খুঁজে পায় না। তবে এ ক্ষেত্রে জাহাজটা তাদের কাছে মনে হয়েছিল দ্বীপ বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক আশ্রয়ের মতো, তাতে বাসাটা কোথাও সরে যায় নি, ডেকের অন্যান্য জিনিসপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে বরাবরই ছিল একই জায়গায়।
Sarakhon Report 



















