সারাক্ষণ ডেস্ক
রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও পরিবারবর্গের ব্যানারে আজ বিকেল ৩ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ১০ দফা দাবি জানানো হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ভবন ধ্বসে আহত শ্রমিক এমদাদুল ইসলাম। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু, আহত শ্রমিকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নিলুফা বেগম, শহিদুল, মিনারা বেগম, আলাউদ্দিন, নিলা বেগমসহ অনেকে। বক্তারা বলেন- আমরা রানা প্লাজা ভবন ধ্বসের পর থেকে অনেকেই কর্মক্ষমতা হারিয়ে গত ১০ বছরেরও বেশী সময় যাবৎ মানবেতর জীবন যাপন করছি। রানা প্লাজা ভবন ধসে ১১৩৫ জন শ্রমিক নিহত এবং ২৫০০ জন শ্রমিক মারাত্মক আহত হয়। যারা মারা গেছেন, তারা মরে গিয়ে বেচে গেছেন, তাদের আর কোন দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে না। কিন্ত আমরা যারা আহত হয়ে হাত, পা, মাথা, কোমড়, ঘার, মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে বেচে আছি, তারা ধুকে ধুকে মরছি!
ভবন ধ্বসের পর আমরা অনেক আশ্বাস বানী শুনেছিলাম। কেউ বলেছেন ক্ষতিপূরণ দিবেন, কেউ বলেছেন পুনর্বাসন করবেন, আমাদের সন্তানদের পড়ালেখার সুযোগ দিবেন। কিন্তু ১ দশক পরেও সেই প্রতিশ্রুতির কোনটাই পূরণ করা হয় নাই। আমরা আশংকা করছি নিহত আহতদের জন্য সাবেক স্বৈরাচারী প্রধান মন্ত্রীর ফান্ডে যে অনুদান জমা হয়েছিল তাও লুটপাট হয়ে থাকতে পারে!
ছাত্র-শ্রমিক-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার পতনের পর আমরা নতুন করে আশায় বুক বেধেছিলাম যে, নতুন সরকারের উদ্যোগে আমাদের জীবনের দুঃখ দুর্দশা হয়ত কিছুটা হলেও লাঘব হবে। আমরা অভিনন্দন জানাই, ‘আহতদের সহায়তায় গৃহীত কার্যক্রম এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াদি পর্যালোচনা/অনুসন্ধান কমিটি’ গঠন করার জন্য। আমরা উক্ত কমিটির কাছে আমাদের নিম্নোক্ত ১০ দফা দাবি মেনে নেয়ার আহবান জানাচ্ছি।
১. রানা প্লাজার ভবন মালিক ও ৫ গারমেন্টের মালিকদের শ্রমিক হত্যার দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. নিহত নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিবারকে এক জীবনের আয়ের সমপরিমাণ ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৩. আহত শ্রমিকদের দীর্ঘমেয়াদী সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন করতে হবে।
৪. মারাত্মক আহত কর্মক্ষমতা হারানো শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৫. প্রত্যেক নিহত-নিখোঁজ ও কর্মক্ষমতা হারানো শ্রমিক পরিবারের কমপক্ষে একজন সদস্যর চাকরি নিশ্চিত করতে হবে।
৬. সকল কারখানায় নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর ও গণতান্ত্রিক কর্মপরিবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।
৭. ক্ষতিপূরণ আইনসহ শ্রম আইনের যথাযথ সংশোধন করতে হবে।
৮. ভবন মালিক সোহেল রানা সহ ৫ গার্মেন্টের মালিকদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। রানা প্লাজা ভবনের জায়গায় শ্রমজীবী হাসপাতাল নির্মাণ ও নিহত শ্রমিকদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করতে হবে।
৯. নিহত নিখোঁজ ও পঙ্গু শ্রমিকদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুব্যবস্থা করতে হবে।
১০. ২৪ এপ্রিলকে শোক দিবস ঘোষণা করতে হবে।