০৭:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ইশকুল (পর্ব-১৪)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
  • 19
আর্কাদি গাইদার

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

সপ্তায় একদিন, প্রতি বুধবার, পড়াশুনো শুরু করার আগে ইশকুলের হলঘরে যুদ্ধে বিজয়কামনা করে একটি প্রার্থনাসভার অনুষ্ঠান হত।

প্রার্থনা শেষ হলে পর প্রত্যেকেই বাঁদিকে, যেখানে দেয়ালের গায়ে জার ও জারিনার ছবি ঝুলত, সেইদিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়াত। সঙ্গে সঙ্গে ঐকতান-গায়করা জাতীয় সঙ্গীত শুরু করত ‘ঈশ্বর জারকে রক্ষা করুন’, আর সকলে যোগ দিত তাতে।

আমি যতটা চে’চানো সম্ভব চে’চিয়ে গাইতুম। আমার অবিশ্যি ঠিক গানের গলা ছিল না, কিন্তু এমন প্রাণপণে গাইতে চেষ্টা করতুম যে একবার মাস্টারমশাই বলে ফেললেন:

‘আরেকটু সহজভাবে গাও গোরিকভ। একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।’

আমি চটে গেলুম। বাড়াবাড়ি হচ্ছে? তার মানে?

তার মানে, আমার যদি গাইবার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে অন্যদের বিজয়প্রার্থনা করতে দিতে হবে, আর আমি দাঁড়িয়ে থাকব চুপচাপ?

বাড়িতে এসে মায়ের কাছে নালিশ জানালুম।

মা কিন্তু বিশেষ উচ্চবাচ্য করলেন না, শুধু বললেন:

‘তুমি তো এখনও ছোট্টটি আছ। আরেকটু বড় হও আগে… লোকে লড়াই করছে তো কাঁ হয়েছে? তাতে তোমার কী?’

‘কী বলছ মা? আর যদি জার্মানরা আমাদের দেশ জয় করে নেয়? ওদের অত্যাচারের কথা আমিও কিছু কিছু পড়েছি, বুঝেছ তো? আচ্ছা, জার্মানরা এমন হনদের মতো কেন মা যে তারা বুড়ো, বাচ্চা কাউকেই রেহাই দেয় না? অথচ আমাদের জারকে দ্যাখো তো, সকলের জন্যে তাঁর কত দরদ।’

‘ও নিয়ে তোমাকে মাথা ঘামাতে হবে না!’ অসন্তুষ্ট হয়ে মা বললেন। ‘ওরা সবাই সমান, স-ব্বা-ই। সবাই ওরা পাগল হয়ে গেছে, বুঝলে? জার্মানরা আর আমাদের দেশের মানুষ কেউই অন্য দেশের লোকের চেয়ে খারাপ নয়।’

ইশকুল (পর্ব-১৪)

০৮:০০:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
আর্কাদি গাইদার

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

সপ্তায় একদিন, প্রতি বুধবার, পড়াশুনো শুরু করার আগে ইশকুলের হলঘরে যুদ্ধে বিজয়কামনা করে একটি প্রার্থনাসভার অনুষ্ঠান হত।

প্রার্থনা শেষ হলে পর প্রত্যেকেই বাঁদিকে, যেখানে দেয়ালের গায়ে জার ও জারিনার ছবি ঝুলত, সেইদিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়াত। সঙ্গে সঙ্গে ঐকতান-গায়করা জাতীয় সঙ্গীত শুরু করত ‘ঈশ্বর জারকে রক্ষা করুন’, আর সকলে যোগ দিত তাতে।

আমি যতটা চে’চানো সম্ভব চে’চিয়ে গাইতুম। আমার অবিশ্যি ঠিক গানের গলা ছিল না, কিন্তু এমন প্রাণপণে গাইতে চেষ্টা করতুম যে একবার মাস্টারমশাই বলে ফেললেন:

‘আরেকটু সহজভাবে গাও গোরিকভ। একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।’

আমি চটে গেলুম। বাড়াবাড়ি হচ্ছে? তার মানে?

তার মানে, আমার যদি গাইবার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে অন্যদের বিজয়প্রার্থনা করতে দিতে হবে, আর আমি দাঁড়িয়ে থাকব চুপচাপ?

বাড়িতে এসে মায়ের কাছে নালিশ জানালুম।

মা কিন্তু বিশেষ উচ্চবাচ্য করলেন না, শুধু বললেন:

‘তুমি তো এখনও ছোট্টটি আছ। আরেকটু বড় হও আগে… লোকে লড়াই করছে তো কাঁ হয়েছে? তাতে তোমার কী?’

‘কী বলছ মা? আর যদি জার্মানরা আমাদের দেশ জয় করে নেয়? ওদের অত্যাচারের কথা আমিও কিছু কিছু পড়েছি, বুঝেছ তো? আচ্ছা, জার্মানরা এমন হনদের মতো কেন মা যে তারা বুড়ো, বাচ্চা কাউকেই রেহাই দেয় না? অথচ আমাদের জারকে দ্যাখো তো, সকলের জন্যে তাঁর কত দরদ।’

‘ও নিয়ে তোমাকে মাথা ঘামাতে হবে না!’ অসন্তুষ্ট হয়ে মা বললেন। ‘ওরা সবাই সমান, স-ব্বা-ই। সবাই ওরা পাগল হয়ে গেছে, বুঝলে? জার্মানরা আর আমাদের দেশের মানুষ কেউই অন্য দেশের লোকের চেয়ে খারাপ নয়।’