০২:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
গুগল অস্ট্রেলিয়ার ক্রিস্টমাস আইল্যান্ডে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডেটা সেন্টার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা জাপানে উপকূলীয় ভূমির ক্ষয়জনিত কারণে সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ বছর পরও যে জাহাজডুবি এখনও এক ভয়ংকর গল্প জাপানে বাড়ছে ভাল্লুক আতঙ্ক: নিরাপত্তা জোরদারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ বইমেলায় ৩০০ শিশুর লেখক অভিষেক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৩) শাহজালালসহ দেশের সব বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি আল-ওথমান মসজিদের পুনঃস্থাপন কাজ শেষের পথে, রমজানের আগেই পুনরায় খোলা হবে ভুলভাবে উপস্থাপিত বক্তব্য নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন মির্জা ফখরুল দিল্লিতে হামলার ছক তৈরির অভিযোগে ভারতের দাবি প্রত্যাখ্যান করল ঢাকা

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-৫৪)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪
  • 40

রাঙাছুটুর বাপের বাড়ি

আজ ভাবিতে বিকারে সমস্ত মন ক্ষতবিক্ষত হইতেছে। তখন হয়তো বুঝিবার বয়স হয় নাই। কিন্তু মুরুব্বিরা যদি আমাদের ভালোমতো শাসন করিয়া এই বৃদ্ধ মহিলাটির প্রতি অনুকম্প্যশীল হইবার শিক্ষা দিতেন, তবে আজ এই কাহিনী লইয়া এত অনুতাপ করিতে হইত না। আমার পরবর্তী জীবনে কত বয়ঃবৃদ্ধ লোকের সেবা করিয়া তাঁহাদের আশীর্বাদের পাত্র হইয়াছি। শিশুদের মতো বৃদ্ধলোকদের দেহেও এক সুন্দর শোভা বিস্তার করে। কত বৃদ্ধের মধ্যে সেই শোভা দর্শন করিয়া মুগ্ধ হই। কিন্তু এই অসহায়া বৃদ্ধা মহিলার প্রতি শৈশবে যে অবিচার করিয়াছি তাহার স্মরণ এখনও আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে।

ফজার মা একখানা বাঁশের লাঠি হাতে লইয়া সেই সুদূর তাম্বুলখানা গ্রামে রওয়ানা হইলেন। আজ মানস-নয়নে দেখিতে পাইতেছি, আশাহীন, অবলম্বনহীন সেই বৃদ্ধা চলিয়াছেন সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করিয়া সেই শোভারামপুর, গোয়ালচামট, বদরপুর, তারপর ডোমরাকান্দি। দুপুরের খর রৌদ্র মাথার উপরে অগ্নিবর্ষণ করিতেছে-পথের শ্রান্তিতে, পা দুখানা হয়তো আর চলিতে চাহে না। এ-গাছের তলায় ও-গাছের তলায় জিরাইয়া বৃদ্ধা চলিয়াছেন সেই বাঘ-ডাকা, বিষাক্ত সাপের খোঁড়লে-ভরা তাম্বুলখানা গ্রামের একপাশে আম-কাঁঠালের শাখায় ঘেরা একখানা কুঁড়েঘরের আশ্রয়ের আশায়!

ইহার পরে একবার আমার বড় ভাই তাম্বুলখানা গ্রামে গিয়াছিলেন বুড়িকে দেখিতে। বুড়ি কত খুঁটিয়া খুঁটিয়া আমার মায়ের কথা, আমাদের কথা বড় ভাইকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন। নিজে যে পারেন না, তবু বহু কষ্টে পিঠা বানাইয়া, মুরগি রান্না করিয়া বড় ভাইকে খাওয়াইয়াছিলেন। আমার পিতাও মাঝে মাঝে বুড়িকে দেখিতে যাইতেন।

একবার মায়ের সঙ্গে আবার আমি তাম্বুলখানা গ্রামে পেলাম। বুড়ি তখন বাঁচিয়া আছেন।

কি আদরই না করিলেন আমাদিগকে।

কিন্তু সেই আগের তাম্বুলখানা যেন কোথায় কোন অন্ধকারে মিশিয়া গিয়াছে। দেশে পাটের নূতন চাহিদা হওয়ায় চাষীরা জঙ্গল কাটিয়া সেখানে পাটের ক্ষেত করিয়াছে। সেই নাভিওয়ালা আমের গাছ, সিন্দুরে আমের গাছ আর রাশি রাশি আম ডালে ডালে সাজাইয়া পথিকের মন আকর্ষণ করে না। সমস্ত কাটিয়া, সাফ করিয়া চাষীরা সেখানে পাট বপন করিয়াছে।

বনের মধ্যে যেখানে বাঘ থাকিত, দিনে যেখানে অতি সন্তর্পণে যাইয়া আমরা ঘন বেতঝাড় হইতে বেথুল তুলিতাম; আঁকশি দিয়া উঁচু ডাল হইতে কানাই-লাঠি পাড়িতাম, মাকাল ফল পাড়িতাম সেখানে এখন পাটক্ষেত। আজ গ্রামে বাঘের ভয় নাই-সাপের ভয়ও কতকটা অন্তর্হিত হইয়াছে।

চলবে…

জনপ্রিয় সংবাদ

গুগল অস্ট্রেলিয়ার ক্রিস্টমাস আইল্যান্ডে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডেটা সেন্টার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-৫৪)

১১:০০:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

রাঙাছুটুর বাপের বাড়ি

আজ ভাবিতে বিকারে সমস্ত মন ক্ষতবিক্ষত হইতেছে। তখন হয়তো বুঝিবার বয়স হয় নাই। কিন্তু মুরুব্বিরা যদি আমাদের ভালোমতো শাসন করিয়া এই বৃদ্ধ মহিলাটির প্রতি অনুকম্প্যশীল হইবার শিক্ষা দিতেন, তবে আজ এই কাহিনী লইয়া এত অনুতাপ করিতে হইত না। আমার পরবর্তী জীবনে কত বয়ঃবৃদ্ধ লোকের সেবা করিয়া তাঁহাদের আশীর্বাদের পাত্র হইয়াছি। শিশুদের মতো বৃদ্ধলোকদের দেহেও এক সুন্দর শোভা বিস্তার করে। কত বৃদ্ধের মধ্যে সেই শোভা দর্শন করিয়া মুগ্ধ হই। কিন্তু এই অসহায়া বৃদ্ধা মহিলার প্রতি শৈশবে যে অবিচার করিয়াছি তাহার স্মরণ এখনও আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে।

ফজার মা একখানা বাঁশের লাঠি হাতে লইয়া সেই সুদূর তাম্বুলখানা গ্রামে রওয়ানা হইলেন। আজ মানস-নয়নে দেখিতে পাইতেছি, আশাহীন, অবলম্বনহীন সেই বৃদ্ধা চলিয়াছেন সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করিয়া সেই শোভারামপুর, গোয়ালচামট, বদরপুর, তারপর ডোমরাকান্দি। দুপুরের খর রৌদ্র মাথার উপরে অগ্নিবর্ষণ করিতেছে-পথের শ্রান্তিতে, পা দুখানা হয়তো আর চলিতে চাহে না। এ-গাছের তলায় ও-গাছের তলায় জিরাইয়া বৃদ্ধা চলিয়াছেন সেই বাঘ-ডাকা, বিষাক্ত সাপের খোঁড়লে-ভরা তাম্বুলখানা গ্রামের একপাশে আম-কাঁঠালের শাখায় ঘেরা একখানা কুঁড়েঘরের আশ্রয়ের আশায়!

ইহার পরে একবার আমার বড় ভাই তাম্বুলখানা গ্রামে গিয়াছিলেন বুড়িকে দেখিতে। বুড়ি কত খুঁটিয়া খুঁটিয়া আমার মায়ের কথা, আমাদের কথা বড় ভাইকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন। নিজে যে পারেন না, তবু বহু কষ্টে পিঠা বানাইয়া, মুরগি রান্না করিয়া বড় ভাইকে খাওয়াইয়াছিলেন। আমার পিতাও মাঝে মাঝে বুড়িকে দেখিতে যাইতেন।

একবার মায়ের সঙ্গে আবার আমি তাম্বুলখানা গ্রামে পেলাম। বুড়ি তখন বাঁচিয়া আছেন।

কি আদরই না করিলেন আমাদিগকে।

কিন্তু সেই আগের তাম্বুলখানা যেন কোথায় কোন অন্ধকারে মিশিয়া গিয়াছে। দেশে পাটের নূতন চাহিদা হওয়ায় চাষীরা জঙ্গল কাটিয়া সেখানে পাটের ক্ষেত করিয়াছে। সেই নাভিওয়ালা আমের গাছ, সিন্দুরে আমের গাছ আর রাশি রাশি আম ডালে ডালে সাজাইয়া পথিকের মন আকর্ষণ করে না। সমস্ত কাটিয়া, সাফ করিয়া চাষীরা সেখানে পাট বপন করিয়াছে।

বনের মধ্যে যেখানে বাঘ থাকিত, দিনে যেখানে অতি সন্তর্পণে যাইয়া আমরা ঘন বেতঝাড় হইতে বেথুল তুলিতাম; আঁকশি দিয়া উঁচু ডাল হইতে কানাই-লাঠি পাড়িতাম, মাকাল ফল পাড়িতাম সেখানে এখন পাটক্ষেত। আজ গ্রামে বাঘের ভয় নাই-সাপের ভয়ও কতকটা অন্তর্হিত হইয়াছে।

চলবে…