০৭:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৮০) চীন–ভারত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ায় উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা নীতি বিকৃত করার অভিযোগ বেইজিংয়ের ভারতের পানি সংকটের ছায়ায় পানীয় শিল্প: রাজস্থানে জল নিয়ে বাড়ছে ঝুঁকি ও অসন্তোষ প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৭) আমির খসরুর আসন পরিবর্তন, তার আসনে মনোনয়ন পেলেন সাঈদ নোমান এনসিপি ছাড়লেন তাসনিম জারা থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি চুক্তি সিলেটে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় নিষিদ্ধ বিড়িসহ যুবক গ্রেপ্তার একীভূত পাঁচ ব্যাংকের আমানত উত্তোলনে বিলম্ব, এ বছর অর্থ ছাড়ের সুযোগ নেই নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রতিবেদন: ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হিন্দু শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা, বাংলাদেশে সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-৫০)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪
  • 86

রাঙাছুটুর বাপের বাড়ি

নানার এক বৃদ্ধা বোন ছিলেন ফজার মা বুড়ি। তাঁকে লইয়া নানা আবার নতুন করিয়া সংসার পাতিলেন। সেই বড় বড় ঘরগুলির মতো ঘর আর উঠিল না। কার জন্যই বা নানা আর বড় ঘর করিবেন। বেটা নাই, পুত্র নাই। একমাত্র মেয়ে। সে তো আর বনগাঁয়ের দেশে কোনোদিন ঘর করিতে আসিবে না।

ফজার মাকে লইয়া নানার প্রায় পাঁচ-ছয় বৎসর কাটিয়া গেল। বুড়োবুড়ির দিন কোনোরকমে কাটে। হঠাৎ নানার পেটে পাথর হইয়া প্রস্রাব বন্ধ হইয়া গেল। বাজান খবর পাইয়া আট বেহারার পালকিতে করিয়া নানাকে চিকিৎসা করাইবার জন্য আমাদের বাড়ি লইয়া আসিলেন। নানা পালকি হইতে নামিয়া পাঁচশত টাকার একটি খুতি মায়ের হাতে দিলেন। তখনকার দিনে ফরিদপুরে তেমন বড় ডাক্তার ছিল না। মেডিকেল স্কুলের পাশ শ্রীধর ডাক্তার ফরিদপুর হাসপাতালের সাবঅ্যাসিসটেন্ট সার্জন। তিনিই ছিলেন আমাদের অঞ্চলের সব-চাইতে বড় ডাক্তার। আমাদের বাড়ি হইতে ফরিদপুর দুই মাইল পথ। তখনকার দিনে কোনো গাড়িঘোড়া চলিবার তেমন রাস্তা তৈরি হয় নাই। ডাক্তার আসিতেন-যাইতেন পালকিতে করিয়া। তাহাতে চার টাকা করিয়া লাগিত। ডাক্তার ফি লইতেন আরও চার টাকা। প্রতিদিন ডাক্তার আসিয়া সলি দিয়া নানাকে প্রস্রাব করাইয়া যাইতেন। সেটা হয়তো ১৯০৮ সাল কিংবা তারও আগে। পেটে পাথর হইলে অপারেশন করিয়া সারাইতে পারেন সেরূপ ডাক্তার বোধহয় আমাদের অঞ্চলে তখন ছিল না। ডাক্তার আসিলে নানা বড়ই সুস্থ বোধ করিতেন। ডাক্তার যাইতে চাহিলে নানা ডাক্তারকে বলিতেন, “ডাক্তারবাবু। আপনি আর একটু বসিয়া যান। আপনাকে দেখিলে আমার সমস্ত যন্ত্রণা কমিয়া যায়।” ডাক্তার আরও একটু অপেক্ষা করিয়া চলিয়া যাইতেন।

সংসারের কাজ করিয়া মা নানার কাছে বসিবার সুযোগ করিতেন। নানার পায়খানা, প্রস্রাব পরিষ্কার করিতেন। বাজান নানার চিকিৎসার জন্য নিজের সাধ্যেরও অতীত করিয়াছেন। বেদানা, ডালিম, মিছরি যা যা ডাক্তার নানাকে খাইতে বলিয়াছেন, বাজান তাহা সংগ্রহ করিয়া আনিয়াছেন। প্রায় ১৫/১৬ দিন চিকিৎসার পর নানার অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাইতে লাগিল।

শেষ দিনে নানা মাকে ডাকিয়া বলিলেন, “রাঙাছুটু। দেখ তো আমার নাকটা যেন হেলিয়া পড়িয়াছে। আমি চোখে যেন কি দেখিতেছি।” সকল বুঝিয়াও মা বলিলেন, “না বাজান। আপনার নাক তো ভালোই আছে। কে বলে যে হেলিয়া পড়িয়াছে?”

 

চলবে…

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৮০)

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-৫০)

১১:০০:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

রাঙাছুটুর বাপের বাড়ি

নানার এক বৃদ্ধা বোন ছিলেন ফজার মা বুড়ি। তাঁকে লইয়া নানা আবার নতুন করিয়া সংসার পাতিলেন। সেই বড় বড় ঘরগুলির মতো ঘর আর উঠিল না। কার জন্যই বা নানা আর বড় ঘর করিবেন। বেটা নাই, পুত্র নাই। একমাত্র মেয়ে। সে তো আর বনগাঁয়ের দেশে কোনোদিন ঘর করিতে আসিবে না।

ফজার মাকে লইয়া নানার প্রায় পাঁচ-ছয় বৎসর কাটিয়া গেল। বুড়োবুড়ির দিন কোনোরকমে কাটে। হঠাৎ নানার পেটে পাথর হইয়া প্রস্রাব বন্ধ হইয়া গেল। বাজান খবর পাইয়া আট বেহারার পালকিতে করিয়া নানাকে চিকিৎসা করাইবার জন্য আমাদের বাড়ি লইয়া আসিলেন। নানা পালকি হইতে নামিয়া পাঁচশত টাকার একটি খুতি মায়ের হাতে দিলেন। তখনকার দিনে ফরিদপুরে তেমন বড় ডাক্তার ছিল না। মেডিকেল স্কুলের পাশ শ্রীধর ডাক্তার ফরিদপুর হাসপাতালের সাবঅ্যাসিসটেন্ট সার্জন। তিনিই ছিলেন আমাদের অঞ্চলের সব-চাইতে বড় ডাক্তার। আমাদের বাড়ি হইতে ফরিদপুর দুই মাইল পথ। তখনকার দিনে কোনো গাড়িঘোড়া চলিবার তেমন রাস্তা তৈরি হয় নাই। ডাক্তার আসিতেন-যাইতেন পালকিতে করিয়া। তাহাতে চার টাকা করিয়া লাগিত। ডাক্তার ফি লইতেন আরও চার টাকা। প্রতিদিন ডাক্তার আসিয়া সলি দিয়া নানাকে প্রস্রাব করাইয়া যাইতেন। সেটা হয়তো ১৯০৮ সাল কিংবা তারও আগে। পেটে পাথর হইলে অপারেশন করিয়া সারাইতে পারেন সেরূপ ডাক্তার বোধহয় আমাদের অঞ্চলে তখন ছিল না। ডাক্তার আসিলে নানা বড়ই সুস্থ বোধ করিতেন। ডাক্তার যাইতে চাহিলে নানা ডাক্তারকে বলিতেন, “ডাক্তারবাবু। আপনি আর একটু বসিয়া যান। আপনাকে দেখিলে আমার সমস্ত যন্ত্রণা কমিয়া যায়।” ডাক্তার আরও একটু অপেক্ষা করিয়া চলিয়া যাইতেন।

সংসারের কাজ করিয়া মা নানার কাছে বসিবার সুযোগ করিতেন। নানার পায়খানা, প্রস্রাব পরিষ্কার করিতেন। বাজান নানার চিকিৎসার জন্য নিজের সাধ্যেরও অতীত করিয়াছেন। বেদানা, ডালিম, মিছরি যা যা ডাক্তার নানাকে খাইতে বলিয়াছেন, বাজান তাহা সংগ্রহ করিয়া আনিয়াছেন। প্রায় ১৫/১৬ দিন চিকিৎসার পর নানার অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাইতে লাগিল।

শেষ দিনে নানা মাকে ডাকিয়া বলিলেন, “রাঙাছুটু। দেখ তো আমার নাকটা যেন হেলিয়া পড়িয়াছে। আমি চোখে যেন কি দেখিতেছি।” সকল বুঝিয়াও মা বলিলেন, “না বাজান। আপনার নাক তো ভালোই আছে। কে বলে যে হেলিয়া পড়িয়াছে?”

 

চলবে…