আর্কাদি গাইদার
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
ফেঙ্কাকে বললুম, ‘দ্যাখ, ওই মোড়টা ঘুরলেই এক্ষুনি আমরা সৈন্যদের কবরগুলোর কাছে পৌছব। গেল-সপ্তায় হাসপাতাল থেকে এনে এখানে সেমিওন কোঝেনিকভকে কবর দেয়া হয়েছে। কোঝেনিকভকে আমার খুব মনে পড়ে, জানিস ফেক্কা। যুদ্ধ বাধবার অনেক আগে, আমি তখন একেবারে বাচ্চা, কোঝেনিকভ আমাদের বাড়ি প্রায়ই আসতেন।
একদিন গুলূতি তৈরির জন্যে আমায় এক টুকরো রবারও দিয়েছিলেন। রবারের টুকরোটা ভারি ভালো ছিল রে। পরে বাসিউগিনদের বাড়ির একটা জানলার কাচ পাথর লেগে ভেঙে যাওয়ায় মা আমার রবারের টুকরোটা আগুনে ফেলে দিয়েছিলেন। তাঁর ধারণা, আমিই নাকি কাচ ভেঙেছিলুম।’
‘কেন, তুই ভাঙিস নি?’
‘আরে, ভেঙেছি তো হয়েছে কী? সেটা প্রমাণ করতে হবে তো। কেউ আমায় ভাঙতে তো দ্যাখে নি। সবটাই ছিল নিছক সন্দেহ। তুই কি একে ন্যায়বিচার বলিস? আচ্ছা ধর্, আমি যদি জানলাটা না-ভাঙতুম তা হলেও সেই আমারই ঘাড়ে দোষ পড়ত নাকি?’
‘তা তো পড়তই,’ আমার সঙ্গে একমত হল ফেক্কা। ‘মা-রা সবাই একরকম, বুঝলি! মেয়েদের জিনিসে ওরা হাত দেবে না, কিন্তু ছেলেরা কোনো কিছু নিয়ে খেলছে দেখলেই আর কথা নেই, সঙ্গে সঙ্গে তা কেড়ে নেবে। জানিস, পেরেকসুদ্ধ আমার দু-দুটো তাঁর মা ভেঙে দিয়েছে, ফাঁদে-পড়া ইদুরটাকেও বের করে নিয়েছে।
আর একবার মা যে আমার কী ক্ষতি করেছিল! আমি একটা খালি ডিবে খাট থেকে খুলে নিয়েছিলুম- ওই-যে, খাটের বাজুতে সব গোল গোল ডিবে থাকে জানিস তো? মা গিয়েছিলেন গির্জেয়। খানিকটা শোরা আর কাঠকয়লা বের করে ঘরে বসে মেশাচ্ছিলুম আমি। ভাবছিলুম, ডিবেটার ভেতর বারুদ ঠেসে ভতি করব। তারপর জঙ্গলে গিয়ে বোমা ফাটাব। মশলা তৈরিতে এত ব্যস্ত ছিলুম যে লক্ষ্য করি নি মা কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে।
হঠাৎ শুনি মা-র গলা, ‘ডিবেটা খুলেছ কী জন্যে শুনি? অ্যাঁ, শয়তান কোথাকার! আর আমি ভাবছি ডিবেটা আবার কোথায় উবে গেল।’ সঙ্গে সঙ্গে গালে এক থাপ্পড়। ভাগ্যি ভালো, বাবা আমার পক্ষ নিল। জিজ্ঞেস করল, ‘ডিবেটা খুললে কেন?’ আমি বললুম, ‘দেখছ না? বোমা বানাচ্ছি যে।’ বাবা ভুরু কোঁচকাল। বলল, ‘থাক এসব। এসব জিনিস নিয়ে খেলা করো না।
Sarakhon Report 



















