জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য একক ডোজের চতুর্থ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ভ্যাকসিন অনুমোদন: সহায়ক ভূমিকায় আইসিডিডিআর,বি–র গবেষণা
সারাক্ষণ ডেস্ক
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একক ডোজের চতুর্থ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) ভ্যাকসিন ‘সেকোলিন’ জনসাধারণের মাঝে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। এই ভ্যাকসিন অনুমোদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আইসিডিডিআর,বি-র গবেষণা। জরায়ুমুখের ক্যান্সারে প্রতি দুই মিনিটে একজন নারী মারা যায় এবং এই মৃত্যুর ৯০ শতাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে ঘটে। তাই জরায়ুমুখের ক্যান্সার মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী চলমান প্রচেষ্টায় নতুন ভ্যাকসিনের অনুমোদন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাথ, আইসিডিডিআর,বি এবং ঘানার বিজ্ঞানীরা একসাথে সিভিআইএ ০৮৭ ট্রায়াল পরিচালনা করে। এই ট্রায়ালের মাধ্যমে চীনের ইনোভ্যাক্স এর তৈরি বাইভ্যালেন্ট এইচপিভি ভ্যাকসিন সেকোলিন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত পাওয়া যায়। এই তথ্য পর্যালোচনা করার পর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সেকোলিন-কে একক ডোজ ভ্যাকসিন হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে। আইসিডিডিআর,বি-র গবেষণা কীভাবে বিশ্বব্যাপী টিকা নীতি প্রণয়নে ভূমিকা রাখছে এটি তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আইসিডিডিআর,বি-র সিনিয়র সায়েন্টিস্ট এবং এই গবেষণার অন্যতম প্রধান গবেষক ড. কে জামান বলেন, “আমাদের গবেষণা একক ডোজ ভ্যাকসিন হিসেবে সেকোলিন-এর নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। এর ফলে ভ্যাকসিন সরবরাহে ঘাটতি আছে এমন দেশগুলোর জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি হলো। এরকম যুগান্তকারী কাজের সাথে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা একটি গর্বের মুহূর্ত, এবং আমরা আশা করি এটি এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচিতে মানুষের আস্থা বাড়াবে।”
এই গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকটি চিহ্নিত করতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ডাঃ টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস বলেছেন, “অন্যান্য বেশিরভাগ ক্যান্সারের তুলনায় জরায়ুমুখের ক্যান্সার আলাদা। কেননা আমাদের এটি নির্মূল করার সক্ষমতা রয়েছে। তাই জরায়ুমুখের ক্যান্সার মোকাবেলায় আরেকটি একক ডোজের এইচপিভি ভ্যাকসিন অনুমোদন দেয়ার মাধ্যমে, আমরা জরায়ুমুখের ক্যান্সার চিরতরে নির্মূল করার ক্ষেত্রে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলাম।”
আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ, টিকাদানের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন, বিশেষ করে যেহেতু বাংলাদেশ সরকার ১০-১৪ বছর বয়সী বা ৫ম-৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত মেয়েদের বিনামূল্যে এইচপিভি টিকা দিচ্ছে। তিনি বলেন, “জরায়ুমুখের ক্যান্সার থেকে আমাদের মেয়েদের রক্ষা করার জন্য এটি খুবই ভালো একটি সুযোগ। এই রোগের বিরুদ্ধে টিকাই সবচেয়ে ভালো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। আমি সব বাবা-মা এবং অভিভাবকদের অনুরোধ করবো যেন তাঁরা তাঁদের মেয়েদের এই জীবন রক্ষাকারী টিকা প্রদান নিশ্চিত করেন। এটি শুধুমাত্র বিনামূল্যে পাচ্ছে এমন মেয়েদের জন্য নয়, বরং ঝুঁকিতে থাকা প্রত্যেকের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।”
সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৬৬০,০০০ টিরও বেশি জরায়ুমুখের ক্যান্সারের সনাক্ত হয় যার ৯৫ শতাংশই এইচপিভি দ্বারা সৃষ্ট। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রতি দুই মিনিটে একজন নারী এই প্রতিরোধযোগ্য রোগে মারা যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই ঘোষণা বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। এর ফলে আরো বেশি দেশ, বিশেষত যেসব দেশে ভ্যাকসিনের তীব্র ঘাটতি রয়েছে তারা এখন আরো সহজে সাশ্রয়ী মূল্যের এবং কার্যকর এইচপিভি ভ্যাকসিন পাবে। মানুষের জীবন বাঁচানোর এবং জনস্বাস্থ্য নীতিকে প্রভাবিত করার বৈশ্বিক লক্ষ্যে আইসিডিডিআর,বি-র গবেষণা প্রতিনিয়ত অবদান রেখে চলেছে।
Sarakhon Report 



















