যাদব ঢুলি
ঢোলের তালে তালে আবার উত্তর দিল, “আমি ঢেঁকি পারাই, ধামুর ধুমুর।”
“আমার একটি কথা শুনিবে।”
“কি কথা?”
“একটু তামুক খাওয়াও।”
যাদবের বউ হাসিতে হাসিতে তামাক সাজিয়া আনিয়া যাদবের হাতে দিল। তারপর যাদব ঢোলটি আমার হাতে দিল। আমি খানিকক্ষণ ইচ্ছামতো বাজাইলাম। যাদব আমাকে ঢোলের একটি প্রাথমিক তাল দেখাইয়া দিল।
আরও দু’একদিন যাদবের বাড়ি গিয়াছিলাম। যাদব প্রায়ই বাড়ি থাকিত না। এ-গাঁয়ে ও-গাঁয়ে ঢোল বাজাইতে যাইত। ইহার পরে আর কবে কবে সেখানে গিয়াছিলাম মনে নাই।
যাদব বহুদিন আগে মারা গিয়াছে। যাহারা তাহার ঢোলবাদ্য শুনিয়া মুগ্ধ হইত তাহারাও কেহ জীবিত আছে বলিয়া মনে পড়ে না। আজ যাদবের সঙ্গে তাহার সুমধুর ঢোলবাদ্যের কথাও এখানকার লোকেরা মনে করে না। সমস্ত শিল্পসৃষ্টি একদিন এইভাবে মুছিয়া যাইবে। বৃথাই আমরা কাগজের উপরে কবিতার কয়েকটি আঁচড় টানিয়া অমর হইবার স্বপ্ন দেখি।
যাদবের সেই সুন্দর বাড়িখানা এখন জঙ্গলে ভর্তি। কেহই যাদবের কথা মনে করে না। মেছের মোল্লার সম্পত্তি কিনিবার পর আমাদের অবস্থা কিছু ভালো হইল। এখন জমিতে যে ফসল হয় তাহা দিয়া আমাদের সারা বছরের খোরাক চলিয়া যায়।
আমার পিতার জমিজমার মূল্যের পরিমাণজ্ঞান ছিল অসাধারণ। এই সম্পত্তি হইতে
চার-পাঁচ বিঘা জমি বিক্রি করিয়া তিনি মহাজনের দেনা পরিশোধ করিয়া দিলেন। এত বড় সম্পত্তিটা প্রায় বিনা মূল্যে আমাদের হাতে আসিল।
চলবে…