আর্কাদি গাইদার
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
ঠিক চিঠি নয়, প্যাকেট বলা চলে। প্যাকেটটা বেশ ভারি দেখে অবাকই হলুম। তার আগে বাবা আমাদের কখনও অত মোটা চিঠি লেখেন নি। আমার ধারণা হল, প্যাকেটের মধ্যে খুব সম্ভব কিছু ফোটোগ্রাফও আছে।
‘আপনি আমার বাবার সঙ্গে এক রেজিমেন্টে থেকে লড়াই করেছেন?’ জিজ্ঞেস করলুম। সৈনিকটির পাতলা-পাতলা গম্ভীরমতো মুখখানা, সেন্ট জর্জের কুশপদক- লাগানো পাঁশুটে রঙের দোমড়ানো-কোঁচকানো গ্রেটকোট আর বাঁ পায়ের সঙ্গে বাঁধা
কাঠের খুঁটিটার দিকে কৌতূহল নিয়ে তাকাচ্ছিলুম বারবার।
‘শুধু এক রেজিমেন্টেই নয়, আমরা দু-জন এক কোম্পানিতে, এক প্লেটুনে থেকে, এমন কি এক ট্রেন্ডে পাশাপাশি থেকে কনুইয়ে কনুই ঠেকিয়ে লড়েছি। তুমি ওর ছেলে তো?’
‘হ্যাঁ।’
‘ও, তুমি বরিস? তাই তো? আমি জানি তোমাকে। তোমার বাবার কাছে কত শুনেছি তোমার কথা। তোমার জন্যেও একটা প্যাকেট আছে। তোমার বাবা কেবল বলে দিয়েছেন এটা লুকিয়ে রাখতে আর তিনি ফিরে না-আসা পর্যন্ত এটা না ছাতে।’
একটা চামড়ার ব্যাগ হাতে তুলে নিলেন সৈনিকটি। উ’চু বুটের ওপরের কানাত কেটে ঘরে-তৈরি ব্যাগটা। প্রত্যেকবার ওঁর নড়াচড়ার সঙ্গে সঙ্গে আয়োডোফর্মের কড়া গন্ধ ঘরময় ছড়িয়ে পড়ছিল।
ব্যাগ থেকে এক টুকরো কাপড়ে মোড়া আর সূতো-দিয়ে শক্ত-করে-বাঁধা একটা প্যাকেট বের করে উনি আমায় দিলেন। প্যাকেটটা ছোট্ট, কিন্তু বেশ ভারি। আমি তখুনি সেটা খুলতে গেলুম, কিন্তু সৈনিকটি বললেন: ‘এত তাড়া কিসের? পরে খুলো’খন, অনেক সময় পাবে।’
‘আচ্ছা, বলুন তো, ফ্রন্টের খবর কী? লড়াই কেমন চলছে? আমাদের সেনাবাহিনীর মনোবল কেমন?’ ধীরে-সুস্থে, গম্ভীরভাবে আমি জানতে চাইলুম।