আর্কাদি গাইদার
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
মজা পাওয়ার ভঙ্গিতে সৈনিকটি আমার দিকে তাকালেন। তাঁর দুঃসহ, কিছুটা বিদ্রূপভরা চোখের দৃষ্টি আমাকে কেমন অপ্রস্তুত করে দিল। প্রশ্নটা আমার নিজের কানেই এবার খানিকটা জাঁকালো আর বোকা-বোকা শোনাল।
‘মনের জোরের কথা বলছ?’ বলে সৈনিকটি হাসলেন। ‘মনের জোরের কথা ঠিক জানি না, তবে দুর্গন্ধটা খুব জোর। ট্রেন্টে তা ছাড়া আর কি আশা করা যায়। পায়খানার চেয়েও নোংরা।’
তামাকের থলি বের করে একটা সিগারেট পাকিয়ে নিয়ে কটুগন্ধ মাখোরকা তামাকের একরাশ ধোয়া ছাড়লেন সৈনিক। আমার পেছন দিকে সূর্যাস্তের আভায় ঝলমলে জানলার কাচের দিকে তাকিয়ে আবার বললেন: ‘প্রত্যেকেই হাড়ে-মজ্জায় বিরক্ত হয়ে উঠেছে। অথচ এর কোনো শেষও দেখা যাচ্ছে না।’
হঠাৎ মা ঘরে ঢুকলেন। সৈনিককে দেখে তিনি দোরগোড়াতেই থেমে গিয়ে দু হাতে দরজার দুই চৌকাঠ চেপে ধরলেন।
‘কী… কী খবর?’ দুই ঠোঁট একেবারে রক্তশূন্য, ফিসফিস করে শুধোলেন তিনি, ‘আলেক্সেইয়ের ব্যাপারে তো?’
‘মা, বাবা আমাদের চিঠি পাঠিয়েছে!’ আমি হৈ-চৈ করে উঠলুম। ‘বেশ মোটা চিঠি। খুব সম্ভব ছবিও আছে। বাবা আমাকেও উপহার পাঠিয়েছে, মা।’
গায়ের শালটা খুলে ফেলে মা এবার প্রশ্ন করলেন, ‘ও বে’চে আছে? ভালো আছে তো? দোরগোড়া থেকে ছাইরঙের কোটটা দেখে আমার বুকটা ধক করে উঠেছিল। ভাবলুম, কত্তার নিশ্চয়ই ভালোমন্দ কিছু হয়েছে।’