০৮:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ইশকুল (পর্ব-৩৬)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪
  • 9

আর্কাদি গাইদার

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

‘অন্তত এখনও পর্যন্ত কিছু হয় নি,’ সৈনিকটি বললেন। ‘উনি আপনাদের শুভকামনা জানিয়েছেন আর আমাকে এই প্যাকেটটা আপনাকে দিতে বলেছেন।

এটা ডাকে পাঠাতে ভরসা পান নি। আজকাল তো ডাকের ওপর নির্ভর করা যায় मा।

মা খামখানা ছিড়লেন। নাঃ, খামের মধ্যে একখানাও ফোটোগ্রাফ নেই, খালি তেলকালিমাখা আর ঘন-করে-লেখ্য এক বান্ডিল কাগজ। তার মধ্যে একখানা কাগজে আবার এক টুকরো মাটি মাখানো আর সাঁটা ঘাসের শুকনো সবুজ এক চিলতে ডগাও।

আমার প্যাকেটটাও খুলে ফেললুম। দেখি, তার মধ্যে রয়েছে একটা ছোট্ট মাওজার পিস্তল। সঙ্গে বাড়তি একটা ক্লিপ। ‘তোমার বাবা ভেবেছেন কী! এটা কি একটা খেলনা হল!’ মা অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন।

‘তা হোক,’ সৈনিকটি বললেন। ‘আপনার ছেলে বোকাহাবা কি খেপা নয় তো? দেখুন না, কেমন আমার মাথায়-মাথায় হয়ে উঠেছে। এটা এখন ও কিছুদিন লুকিয়ে রাখুক। খুব ভালো পিস্তল, বুঝলেন না? আলেক্সেই এক জার্মান ট্রেন্ডে এটা পেয়েছিল। যন্তরটা চমৎকার। পরে কাজে লাগতে পারে।’ ঠান্ডা, মসৃণ হাতলটায় একবার হাত বুলিয়ে, মাওজারটা যত্ন করে আবার কাপড়ে মুড়ে দেরাজের একটা টানায় রেখে দিলুম।

সৈনিক আমাদের সঙ্গে চা খেলেন এরপর। গ্লাসের পর গ্লাস চা খেতে-খেতে বাবার বিষয়ে আর যুদ্ধ সম্বন্ধে কত কথাই না বললেন। আমি খেলুম আধ গ্লাস আর মা তাঁর কাপ ছালেন না পর্যন্ত। তারপর মা শিশি-বোতলের কাঁড়ি হাঁটকে কোথা থেকে ছোট্ট এক বোতল অ্যালকোহল বের করে সৈনিকটিকে খেতে দিলেন। চোখ কচেকে উনি জল মিশিয়ে পাতলা করে নিয়ে আস্তে-আন্তে গ্লাসের সবটুকু খেয়ে ফেললেন। একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে মাথা নাড়লেন তারপর।

গ্লাসটা একপাশে ঠেলে দিয়ে বললেন, ‘জীবনটা কেমন যেন নয়ছয় হয়ে গেছে। দেশ-গাঁ থেকে চিঠি পেয়েছি, খেত খামার উচ্ছন্নে গেছে। কিন্তু আমি তার কী করতে পারি? বলে আমরাই ফ্রন্টে মাসের পর মাস উপোস করে থেকেছি। মনে হত, জঘন্য নরকে পচে মরছি। ভাবতুম, কবে এ যন্তন্না শেষ হবে। যা হোক একটা কিছু এস্পার- ওস্পার হয়ে যাক। মানুষের পক্ষে যতদূর সহ্য করা সম্ভব লোকে তা করছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, কেটলিতে ঘোলাটে চায়ের জল যেমন ফোটে তেমনি ভেতরটায় সবকিছু যেন টগবগ করে ফুটছে। মনে হয়, ধৃত, সব কিছু ছুড়ে ফেলে দিয়ে গটগট করে চলে যাওয়ার সাহস যদি আমার থাকত।

 

ইশকুল (পর্ব-৩৬)

০৮:০০:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪

আর্কাদি গাইদার

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

‘অন্তত এখনও পর্যন্ত কিছু হয় নি,’ সৈনিকটি বললেন। ‘উনি আপনাদের শুভকামনা জানিয়েছেন আর আমাকে এই প্যাকেটটা আপনাকে দিতে বলেছেন।

এটা ডাকে পাঠাতে ভরসা পান নি। আজকাল তো ডাকের ওপর নির্ভর করা যায় मा।

মা খামখানা ছিড়লেন। নাঃ, খামের মধ্যে একখানাও ফোটোগ্রাফ নেই, খালি তেলকালিমাখা আর ঘন-করে-লেখ্য এক বান্ডিল কাগজ। তার মধ্যে একখানা কাগজে আবার এক টুকরো মাটি মাখানো আর সাঁটা ঘাসের শুকনো সবুজ এক চিলতে ডগাও।

আমার প্যাকেটটাও খুলে ফেললুম। দেখি, তার মধ্যে রয়েছে একটা ছোট্ট মাওজার পিস্তল। সঙ্গে বাড়তি একটা ক্লিপ। ‘তোমার বাবা ভেবেছেন কী! এটা কি একটা খেলনা হল!’ মা অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন।

‘তা হোক,’ সৈনিকটি বললেন। ‘আপনার ছেলে বোকাহাবা কি খেপা নয় তো? দেখুন না, কেমন আমার মাথায়-মাথায় হয়ে উঠেছে। এটা এখন ও কিছুদিন লুকিয়ে রাখুক। খুব ভালো পিস্তল, বুঝলেন না? আলেক্সেই এক জার্মান ট্রেন্ডে এটা পেয়েছিল। যন্তরটা চমৎকার। পরে কাজে লাগতে পারে।’ ঠান্ডা, মসৃণ হাতলটায় একবার হাত বুলিয়ে, মাওজারটা যত্ন করে আবার কাপড়ে মুড়ে দেরাজের একটা টানায় রেখে দিলুম।

সৈনিক আমাদের সঙ্গে চা খেলেন এরপর। গ্লাসের পর গ্লাস চা খেতে-খেতে বাবার বিষয়ে আর যুদ্ধ সম্বন্ধে কত কথাই না বললেন। আমি খেলুম আধ গ্লাস আর মা তাঁর কাপ ছালেন না পর্যন্ত। তারপর মা শিশি-বোতলের কাঁড়ি হাঁটকে কোথা থেকে ছোট্ট এক বোতল অ্যালকোহল বের করে সৈনিকটিকে খেতে দিলেন। চোখ কচেকে উনি জল মিশিয়ে পাতলা করে নিয়ে আস্তে-আন্তে গ্লাসের সবটুকু খেয়ে ফেললেন। একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে মাথা নাড়লেন তারপর।

গ্লাসটা একপাশে ঠেলে দিয়ে বললেন, ‘জীবনটা কেমন যেন নয়ছয় হয়ে গেছে। দেশ-গাঁ থেকে চিঠি পেয়েছি, খেত খামার উচ্ছন্নে গেছে। কিন্তু আমি তার কী করতে পারি? বলে আমরাই ফ্রন্টে মাসের পর মাস উপোস করে থেকেছি। মনে হত, জঘন্য নরকে পচে মরছি। ভাবতুম, কবে এ যন্তন্না শেষ হবে। যা হোক একটা কিছু এস্পার- ওস্পার হয়ে যাক। মানুষের পক্ষে যতদূর সহ্য করা সম্ভব লোকে তা করছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, কেটলিতে ঘোলাটে চায়ের জল যেমন ফোটে তেমনি ভেতরটায় সবকিছু যেন টগবগ করে ফুটছে। মনে হয়, ধৃত, সব কিছু ছুড়ে ফেলে দিয়ে গটগট করে চলে যাওয়ার সাহস যদি আমার থাকত।