আর্কাদি গাইদার
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
বই বন্ধ করে রাস্তায় বেরুলুম। কিছু করার না-থাকায় শহরের বাইরে কবরখানায় তিষ্কা শূকিনের সঙ্গে দেখা করতে দৌড় দিলুম। তিষ্কাকে বাড়িতে পাওয়া গেল না। পাকা মাথা, বলিষ্ঠ চেহারার বৃদ্ধ তিকার বাবা আমার বাবার অনেক দিনের চেনা। উনি আমার পিঠ চাপড়ে বললেন:
‘বাঃ, দিব্যি বড় হয়েচ যে খোকা! তোমার বাবা ফিরে এসে তোমায় দেখি চিনতেই পারবেন না। ঠিক বাপের মতো হচ্চ অমনি বড়সড়, শক্তসমর্থ হয়ে উঠবে সময়ে। আমার তিকাটা একেবারে বে’টেখাটো ক্ষয়া-খপপুরে হচ্ছে, কপালটাই খারাপ। নির্ঘাত ও ওর মা-র বাবা দাদামশাইয়ের মতো হচ্ছে। যা খায় তা কোথায় যে যায় কে জানে! তারপর, বাবার খবর ভালো তো? তাঁকে চিঠি লেখার সময় আমার নমস্কার জানিও। সত্যিকার একজন মহাশয় লোক, তোমার বাবা।
তিনি আর আমি এক সময়ে এক গাঁয়ের ইশকুলে আট বছর চাকরি করেছি। উনি ছিলেন মাস্টার। আর আমি চৌকিদার। তবে সে হল গিয়ে আজ বহুকালের কথা তুমি তখন দুধের বাচ্চা, তোমার এ-সব মনে থাকার কথা নয়। আচ্ছা, আচ্ছা, দৌড় লাগাও। তিম্কা এই কাছাকাছি কোথাও আছে, গোল্ডফিশু-পাখি ধরছে বোধ হয়। সৈন্যদের কবরগুলোর পেছনে, কোণের দিকে, বার্চ’-বনে খোঁজ কর দেখি। ওর এদিকে ও বড় একটা পাখি ধরে না, গির্জে’র চৌকিদার দেখতে পেলে বকে কিনা, তাই।’
বার্চ-বনেই পেলুম তিকাকে। একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে লাঠির ডগায় ফাঁস লাগিয়ে ও লাঠিটাকে সাবধানে একটা গোল্ডফিল্ড-পাখির কাছাকাছি সরিয়ে সরিয়ে আনছিল। হলুদ-হয়ে-আসা গাছের পাতার ফাঁকে পাখিটাকে অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। আমাকে দেখে ভয় পেয়ে প্রায় মিনতির ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকাল তিঙ্কা, তারপর জোরে-জোরে মাথা নেড়ে সাবধান করে দিল শামি যেন আরও কাছে গিয়ে পড়ে পাখিটাকে ভয় পাইয়ে না দিই।
আমি দাঁড়িয়ে গেলুম। যদি আমার মত চাও তো বলব, গোল্ডফিল্ডের চেয়ে বোকা পাখি দুনিয়ায় আর দুটি নেই। ছেলেরা গোল ফাঁসের আকারে এক টুকরো ঘোড়ার বালামচি একটা লম্বা লাঠির আগায় বে’ধে নেয়, তারপর পাখির গলায় সাবধানে ওই ফাঁসটা গলিয়ে দেয়। এতেই গোল্ডফিশু ধরা পড়ে।
Sarakhon Report 



















