কৃষি ও কৃষক
চতুর্থ অধ্যায়
আমরা সুন্দরবন কমিশনার ও অন্যান্য সরকারি কাগজপত্রাদি এবং সমকালীন ব্যক্তিদের বিবরণে সুন্দরবনের ক্ষেত্রে বিপরীত চিত্রই লক্ষ করি। সমস্ত জঙ্গল অনাবাদী জমি আবাদ করা হয়েছে প্রজার বেগার শ্রমের মধ্য দিয়ে। জমিদার চাষিকে একটা নির্দিষ্ট এলাকা দেখিয়েছেন জমি হাসিল করে কৃষিযোগ্য হলে ঐ জমি সে পাবে নির্দিষ্ট খাজনার বিনিময়ে। চাষি জমি উদ্ধার করতে যে গাছ কেটেছে তার অর্ধেক জমিদার নিয়েছে, বাকিটা নায়েব চাষির কাছ থেকে সস্তায় কিনেছে। সাময়িকভাবে জমিদার প্রজার বাসভূমির জন্য কোথাও কোথাও কিছু খরচ করেছেন, পানীয় জলের জন্য পুকুর কেটেছেন। হিঙ্গলগঞ্জ থানার দক্ষিণে কানাইকাটির নিকটে এক বিস্তীর্ণ এলাকা আবাদ করার ব্যাপারে ১৮২২ খ্রীষ্টাব্দে Mr. Robert Beeby উদ্যোগী হয়েছেন তৎকালীন সুন্দরবন কমিশনার Mr. Dale এর মৌখিক নির্দেশে।
বাকলা ধুলিয়াপুরের জমিদার ঈশ্বরচন্দ্র পালচৌধুরী ঐ জমির উত্তরে বেশ কিছু বনাঞ্চল চাষযোগ্য করেছেন। কারণ কানাইকাটির উত্তরে বর্তমানের দুলদুলী সাহেবখালি রমাপুর ছিল কৃষ্ণনগরের পালচৌধুরীদের জমিদারির অন্তর্ভুক্ত। ঈশ্চরচন্দ্র পালচৌধুরী অভিযোগ জানাচ্ছেন রবার্ট বিবির ঐ জমি তিনি আবাদী করেছেন এবং এই জমি তাদের জমিদারির অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের অভিযোগ বনাঞ্চল নিয়ে সে যুগের জমিদাররা প্রতিনিয়ত করতেন।
সুন্দরবনের কমিশনার Mr. R. Manglas ১৮২৫ খ্রীস্টাব্দে ২৪ শে মে তদন্ত রিপোর্ট দিচ্ছেন- I believe Rs. 3.00 Per bigha may be safely assumed as the average rate of expense incurred in reclaiming the Sunderbans waste or reducing it into a State fit for Cultivation) কমিশনার রবার্ট বিবির পক্ষে রায় দেন এবং রবার্ট বিবি বনাঞ্চল উঠিত করার জন্য কী কী করেছেন তার বিবরণ ঐ রিপোর্টে লক্ষ করা যাচ্ছে। জমিদারির মধ্যে একটা পানীয় জলের পুকুর কাটা হয়েছে, ৫০ জন প্রজাকে দূর দেশ থেকে নিয়ে বসিয়েছেন, তিন বছর ধরে চেষ্টা করেছেন বনাঞ্চল উদ্ধার করার জন্য। ইতিমধ্যে ২৫ জনের মতো প্রজা দুর্গম এলাকা বলে পালিয়ে গেছে ইত্যাদি সেই তদন্তে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিঘা প্রতি তিন টাকা খরচ করে জমি উদ্ধার করা হলে তার জন্য জমিদার ১৮২৫ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত খাজনা ও আবয়াব বাবদ বিঘা প্রতি কত টাকা আদায় করেছেন তা সহজে অনুমান করা যায়। এ ধরণের অসংখ্য উদাহরণ সুন্দরবন কমিশনারের রিপোর্ট থেকে উল্লেখ করা যেতে পারে। ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দের বঙ্গীয় প্রজাসত্ত্ব আইনে বেআইনি খাজনা সম্পর্কে নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সুন্দরবন এলাকার কতজন জমিদার তা মেনেছেন? জমি উদ্ধার করার প্রয়োজনে বহিরাগত প্রজাদের দলে দলে ডেকে নিয়ে আসা হল কিন্তু জমি চাষযোগ্য হলে প্রজাদের উচ্ছেদ করার জন্য নদীর বাঁধ কেটে দিয়ে জমি প্লাবিত কর।