০২:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৭৯)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪
  • 24
শশাঙ্ক মণ্ডল

কৃষি ও কৃষক

চতুর্থ অধ্যায়

হয়েছে যাতে দু তিন বছর ফসল না পেলে জমি থেকে পালিয়ে যায়। ১৯৩৫ খ্রীস্টাব্দের দিকে সুন্দরবনের কজন চাষির রায়ত সম্পত্তি ছিল? সবই তো জমিদারের অনুমতিসূত্রে সে দখলকার, চাষির বসতবাড়ি রান্নাঘর সবকিছুই জমিদারের অনুমতিসূত্রে দখল বলে চিহ্নিত ছিল। চাষি তার প্রয়োজনে ঐ জমি বিক্রয় করতে পারত না। সুন্দরবনের পশ্চিমপ্রান্তে আজকের ২৪ পরগনা জেলায় জমি হাসিল করার জন্য সাঁওতাল ওরাঁও মুন্ডাদের নিয়োগ করা হয়েছিল। এ দেশীয় চাষিরা এসব জমি উদ্ধার করার ব্যাপারে বেশি উৎসাহ দেখাত না, এসব এলাকায় লবণাক্ত জলের চাপ বেশি থাকার জন্য জমিতে ফসল ফলানো বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। কয়েক বছর ধরে দিবারাত্র পরিশ্রম করে জঙ্গল কেটে জমিকে কৃষিযোগ্য করে তুলল, প্রথম কয়েক বছর সে কিছু খাজনা ছাড় পেল কিন্তু শীঘ্র তাকে জমি থেকে উচ্ছেদ করে তাকে ক্ষেতমজুর অথবা বর্গাচাষিতে পরিণত করা হল। বহিরাগত প্রজারা যারা জমির জন্য নগদ উচ্চ মূল্য বা সেলামি দিতে পারল তাদেরকে ঐ সব জমি পুনরায় বিলি করা হল।

ব্রিটিশ রাজত্বের পূর্বে সুন্দরবনের উত্তরাংশে যে সব এলাকায় প্রজাবসতি ছিল সে সব জায়গায় দেখা গেল নতুন নতুন জমিদার। হাড়োয়া বালান্দাতে আমরা লক্ষ করছি প্রজারা লর্ড আমহার্স্টের কাছে আবেদন করছে ১৮২৫ এর ২২ শে সেপ্টেম্বর। নদীয়ার মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পুত্র ঈশ্বরচন্দ্র রায়ের নিকট থেকে ১৭৯৭ খ্রীষ্টাব্দে বালান্দার জমিদারি ৪০,০০০ সিকা টাকায় মুনসি আমির কেনেন। ১৮০১ খ্রীষ্টাব্দে মুনসী আমির সমগ্র পরগনা জরিপ করে প্রজাদের ওপর যে কর ধার্য করেছেন তা অত্যধিক। চাষিরা খাজনা দিতে পারেনি বলে তাদের আটক করা হয়েছে, অনেককে মারধর পর্যন্ত করা হয়েছে-

“Caused them to be beaten by some armed men employed in his service.” (5) এই মুনসি আমিরের নামে কলকাতার মুনসির বাজার এবং এরই রক্ষিতা বেগম আমরুর জন্য বর্তমান বেলেঘাটা Commercial Tax এর বাগান বাড়িতে তার বাসস্থান তৈরি করেছিলেন। বালান্দার প্রজারা মুনসি আমিরের বিরুদ্ধে বারাসাতের জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ ডেভিডসন-এর কাছে নালিশ করেন- এই অপরাধে জমিদারের লোকেরা কৃষকদের বাড়িতে চড়াও হয়েছে, অসম্মানের হাত থেকে মেয়েরাও রেহাই পায়নি। প্রজারা অন্যত্র কোথাও বিচার প্রার্থনা করতে পারবে না। জমিদারই সর্ব বিচারের কর্তা; এর ওপর প্রজাদের অভিযোগ-নানাধরণের খাজনা প্রতিনিয়ত জমিদার তাদের কাছে দাবি করছেন।

আর একজন জমিদারের বিরুদ্ধে প্রজাদের অভিযোগ শোনা যেতে পারে; তিনি প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। তিনি তাঁর ছেলের নামে খাসপুর গড়িয়ার জমিদারি কিনেছেন। তাঁর অত্যাচারে প্রজারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে এই নিষ্ঠুর জমিদারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে কোন ফল হয়নি। বন্যার জন্য জমিতে ফসল নষ্ট হয়েছে তবু প্রজাদের খাজনা দিতে হবে। খাজনা শোধ না করতে পারার ফলে কয়েকজনকে কয়েদ করা হয়েছে।

 

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-৭৯)

১২:০০:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪
শশাঙ্ক মণ্ডল

কৃষি ও কৃষক

চতুর্থ অধ্যায়

হয়েছে যাতে দু তিন বছর ফসল না পেলে জমি থেকে পালিয়ে যায়। ১৯৩৫ খ্রীস্টাব্দের দিকে সুন্দরবনের কজন চাষির রায়ত সম্পত্তি ছিল? সবই তো জমিদারের অনুমতিসূত্রে সে দখলকার, চাষির বসতবাড়ি রান্নাঘর সবকিছুই জমিদারের অনুমতিসূত্রে দখল বলে চিহ্নিত ছিল। চাষি তার প্রয়োজনে ঐ জমি বিক্রয় করতে পারত না। সুন্দরবনের পশ্চিমপ্রান্তে আজকের ২৪ পরগনা জেলায় জমি হাসিল করার জন্য সাঁওতাল ওরাঁও মুন্ডাদের নিয়োগ করা হয়েছিল। এ দেশীয় চাষিরা এসব জমি উদ্ধার করার ব্যাপারে বেশি উৎসাহ দেখাত না, এসব এলাকায় লবণাক্ত জলের চাপ বেশি থাকার জন্য জমিতে ফসল ফলানো বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। কয়েক বছর ধরে দিবারাত্র পরিশ্রম করে জঙ্গল কেটে জমিকে কৃষিযোগ্য করে তুলল, প্রথম কয়েক বছর সে কিছু খাজনা ছাড় পেল কিন্তু শীঘ্র তাকে জমি থেকে উচ্ছেদ করে তাকে ক্ষেতমজুর অথবা বর্গাচাষিতে পরিণত করা হল। বহিরাগত প্রজারা যারা জমির জন্য নগদ উচ্চ মূল্য বা সেলামি দিতে পারল তাদেরকে ঐ সব জমি পুনরায় বিলি করা হল।

ব্রিটিশ রাজত্বের পূর্বে সুন্দরবনের উত্তরাংশে যে সব এলাকায় প্রজাবসতি ছিল সে সব জায়গায় দেখা গেল নতুন নতুন জমিদার। হাড়োয়া বালান্দাতে আমরা লক্ষ করছি প্রজারা লর্ড আমহার্স্টের কাছে আবেদন করছে ১৮২৫ এর ২২ শে সেপ্টেম্বর। নদীয়ার মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পুত্র ঈশ্বরচন্দ্র রায়ের নিকট থেকে ১৭৯৭ খ্রীষ্টাব্দে বালান্দার জমিদারি ৪০,০০০ সিকা টাকায় মুনসি আমির কেনেন। ১৮০১ খ্রীষ্টাব্দে মুনসী আমির সমগ্র পরগনা জরিপ করে প্রজাদের ওপর যে কর ধার্য করেছেন তা অত্যধিক। চাষিরা খাজনা দিতে পারেনি বলে তাদের আটক করা হয়েছে, অনেককে মারধর পর্যন্ত করা হয়েছে-

“Caused them to be beaten by some armed men employed in his service.” (5) এই মুনসি আমিরের নামে কলকাতার মুনসির বাজার এবং এরই রক্ষিতা বেগম আমরুর জন্য বর্তমান বেলেঘাটা Commercial Tax এর বাগান বাড়িতে তার বাসস্থান তৈরি করেছিলেন। বালান্দার প্রজারা মুনসি আমিরের বিরুদ্ধে বারাসাতের জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ ডেভিডসন-এর কাছে নালিশ করেন- এই অপরাধে জমিদারের লোকেরা কৃষকদের বাড়িতে চড়াও হয়েছে, অসম্মানের হাত থেকে মেয়েরাও রেহাই পায়নি। প্রজারা অন্যত্র কোথাও বিচার প্রার্থনা করতে পারবে না। জমিদারই সর্ব বিচারের কর্তা; এর ওপর প্রজাদের অভিযোগ-নানাধরণের খাজনা প্রতিনিয়ত জমিদার তাদের কাছে দাবি করছেন।

আর একজন জমিদারের বিরুদ্ধে প্রজাদের অভিযোগ শোনা যেতে পারে; তিনি প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। তিনি তাঁর ছেলের নামে খাসপুর গড়িয়ার জমিদারি কিনেছেন। তাঁর অত্যাচারে প্রজারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে এই নিষ্ঠুর জমিদারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে কোন ফল হয়নি। বন্যার জন্য জমিতে ফসল নষ্ট হয়েছে তবু প্রজাদের খাজনা দিতে হবে। খাজনা শোধ না করতে পারার ফলে কয়েকজনকে কয়েদ করা হয়েছে।