শ্রী নিখিলনাথ রায়
নন্দকুমারের এত সম্মান তাঁহার প্রাণে সহ্য হইবে কেন? তাহার পর যে অবধি তিনি ইংরেজদিগের চক্ষুঃশূল হইয়া উঠেন, তখন হইতে নবকৃষ্ণ তাঁহার নিন্দা করিয়া ইংরেজমহলে আপনার প্রতিপত্তি বাড়াইবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। তাঁহারই পরামর্শক্রমে ইংরেজেরা নন্দকুমারের উপর মহাক্রুদ্ধ হইয়াছিলেন। ক্রমে নন্দকুমারের পতন হইলে, নবকৃষ্ণ বাঙ্গালীদিগের মধ্যে ক্ষমতাবান্ হইয়া উঠেন। যথেষ্ট অর্থ ও নানাবিধ পদের ক্ষমতা লাভ করিয়া, তিনি দেশের লোকের উপর স্বীয় ক্ষমতা প্রকাশ করিতে আরম্ভ করেন। সকলে আসিয়া নন্দকুমারের আশ্রয় লয়।
আমরা দেখাইয়াছি যে, যে ব্যক্তি নন্দকুমারের আশ্রয় লয়, তিনি শত বিপদ মাথায় লইয়াও তাহার উপকারে অগ্রসর হন। তজ্জন্য তিনি নিজে কতই না কষ্ট পাইয়াছেন, তথাপি লোকের উপকার করিতে বিরত হন নাই। নবকৃষ্ণ উৎকোচ গ্রহণ ও গৃহস্থের পরিবারবর্গের সতীত্বনাশ প্রভৃতির দ্বারা নিন্দনীয় হইয়া উঠেন, অন্ততঃ এই মর্ম্মে তাঁহার নামে অভিযোগ উপস্থিত হয়।
যদিও তাৎকালিক ইংরেজদিগের ‘প্রিয়পাত্র, নবকৃষ্ণ তাহা হইতে নিষ্কৃতি পাইয়াছিলেন, তথাপি সাধারণ লোকের মনে সে সমস্ত অভিযোগ একেবারে মিথ্যা বলিয়া প্রতীত হয় নাই। আমরা দুই একটি মোকদ্দমার উল্লেখ করিতেছি। রামনাথ দাস নামে এক ব্যক্তি নবকৃষ্ণের নামে ৩৬ হাজার টাকা উৎকোচ- গ্রহণের অভিযোগ উপস্থিত করিয়াছিল। • গোকুল সোনার নামে আর একজন এই বলিয়া আবেদন করিয়াছিল যে, রাম সোনার ও ব্রাম বেনিয়া নামে নবকৃষ্ণের দুই জন লোক একজন হরকরার সহিত’ তাহার ‘বাটীতে প্রবেশ করিয়া নবকৃষ্ণের জন্য তাহার ভগিনীকে বলপূর্ব্বক ধরিয়া লইয়া যায়।
নবকৃষ্ণ তাহাকে এক রাত্রি আবদ্ধ রাখিয়া তাহার সতীত্ব নষ্ট করেন।। নীবু নামক আর একটি ব্রাহ্মণীর সতীত্ব নষ্ট করিয়াছিলেন বলিয়া তাহার স্বামী অভিযোগ উপস্থাপিত করিয়াছিল। কিন্তু নবকৃষ্ণ এই সমস্ত অভিযোগ হইতে নিষ্কৃতি পাইয়াছিলেন। নন্দকুমারের শত্রুপক্ষীয়েরা বলেন যে, এই সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ নন্দকুমারের পরামর্শক্রমেই উপস্থাপিত করা হয়। রাজা নবকৃষ্ণ ঐ সকল ভয়াবহ কার্য্য করিয়াছিলেন কিনা, জানি না।