০১:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

 জোড়া লাগানো যমজ শিশুর চিকিৎসায় বিএসএমএমইউর বিরাট সাফল্য

  • Sarakhon Report
  • ০৬:৫০:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
  • 24

সারাক্ষণ ডেস্ক

আলাদা হওয়া। অত্যন্ত কষ্টের। নিদারুণ বেদনাদায়ক ও যন্ত্রণার। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। কিছু আলাদা হওয়া আবার কষ্টের পরিবর্তে অত্যন্ত আনন্দের। তেমনই এক আনন্দের বন্যায় ভাসল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)’র ক্যাম্পাস ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণ। সেই আনন্দের সাথে আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ইং তারিখে শামিল হয়েছিল  ৫টি সফল অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা জোড়া শিশু নূহা ও নাবার সাথে বিএসএমএমইউর বর্তমান প্রশাসন। আজ বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেবিন ব্লকের ৬তলা গিয়ে বিরল যমজ জোড়া দেহ থেকে আলাদা হওয়া জোড়া শিশু  নূহা ও নাবার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন এবং তাঁদের রিলিজ দেন। এসময় সবার মুখে হাসি-খুশির ছাপ ফুটে উঠে। কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার শিবরাম কাঁঠালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা নাসরিন আক্তার ও আলমগীর হোসেন দম্পত্তির সন্তান নূহা ও নাবার শরীরের পেছন ও নিচের দিক থেকে যুক্ত ছিল। কনজয়েন্ট টুইন পিগোপেগাস নূহা ও নাবাকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করায় বিএসএমএমইউ এর প্রশাসন, চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এসময় সেখানে সম্মানিত উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম,  উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজাদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোঃ নজরুল ইসলাম, পরিচালক (হাসপাতাল) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মোঃ রেজাউর রহমান, শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নূহা ও নাবার চিকিৎসা বাবদ ৫০ লক্ষ টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে।  এরমধ্যে রয়েছে  কেবিন ভাড়া, হাসপাতাল ফার্মেসীর মাধ্যমে ওষুধ ক্রয় ব্যয়, নিউরোসার্জারি বিভাগ কর্তৃক অপারেশনকালীন ক্রয়কৃত ওষুদ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদী ব্যয়, এ্যানেসথেশিয়া সামগ্রী ও অপারেশন বা ওটি চার্জ ইত্যাদি। এই ব্যয়ের মধ্যে প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা বহন করেছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। আর ১৫ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে অনুদান হিসেবে। অনুদানকারী তাঁর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তবে এই অনুদান পেতে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছেন সাংবাদিক তাওসিয়া তাজমিম ও দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জনাব চৌধুরী খালেদ মাসুদ। অর্থাৎ জোড়া লাগানো যমজ শিশু নূহা ও নাবার চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। পরিচালক (হাসপাতাল) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মোঃ রেজাউর রহমান জানিয়েছেন নূহা ও নাবাকে ডিসচার্জ দেয়া হলেও চিকিৎসার জন্য ফলোআপে থাকতে হবে এবং আরো অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

শিশু নূহা ও নাবার জন্ম হয়েছিল ২০২২ সালের ২১ মার্চ। বিএসএমএমইউতে তাদের ভর্তি করানো হয়েছিল ৪ এপ্রিল ২০২২ সালে। তারপর থেকে তারা এখানেই বেড়ে উঠেছে। শিশু নূহা ও নাবার চিকিৎসায় নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে নিউরোসার্জনগণ, শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম জাহিদ হোসেনের  নেতৃত্বে শিশু সার্জনগণ, এ্যানেসথেশিওলজিস্ট গণসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞগণ, চিকিৎসক, নার্সবৃন্দ অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা করেছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই জোড়া লাগানো দেহের যমজ শিশু নূহা ও নাবা আলাদা হওয়ার আনন্দ নিয়ে  ২ বছর ৭ মাস ২০ দিন পর সুস্থ হয়ে মা বাবার সাথে বাড়ি ফিরেছে। বিএসএমএমইউতে এ পর্যন্ত ৩ জোড়া জোড়া লাগানো শিশুদের আলাদা করা হয়েছে এবং আরো এক জোড়া লাগানো শিশুদ্বয়কে আলাদার প্রস্তুতি চলছে।

 জোড়া লাগানো যমজ শিশুর চিকিৎসায় বিএসএমএমইউর বিরাট সাফল্য

০৬:৫০:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

সারাক্ষণ ডেস্ক

আলাদা হওয়া। অত্যন্ত কষ্টের। নিদারুণ বেদনাদায়ক ও যন্ত্রণার। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। কিছু আলাদা হওয়া আবার কষ্টের পরিবর্তে অত্যন্ত আনন্দের। তেমনই এক আনন্দের বন্যায় ভাসল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)’র ক্যাম্পাস ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণ। সেই আনন্দের সাথে আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ইং তারিখে শামিল হয়েছিল  ৫টি সফল অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা জোড়া শিশু নূহা ও নাবার সাথে বিএসএমএমইউর বর্তমান প্রশাসন। আজ বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেবিন ব্লকের ৬তলা গিয়ে বিরল যমজ জোড়া দেহ থেকে আলাদা হওয়া জোড়া শিশু  নূহা ও নাবার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন এবং তাঁদের রিলিজ দেন। এসময় সবার মুখে হাসি-খুশির ছাপ ফুটে উঠে। কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার শিবরাম কাঁঠালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা নাসরিন আক্তার ও আলমগীর হোসেন দম্পত্তির সন্তান নূহা ও নাবার শরীরের পেছন ও নিচের দিক থেকে যুক্ত ছিল। কনজয়েন্ট টুইন পিগোপেগাস নূহা ও নাবাকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করায় বিএসএমএমইউ এর প্রশাসন, চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এসময় সেখানে সম্মানিত উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম,  উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজাদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোঃ নজরুল ইসলাম, পরিচালক (হাসপাতাল) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মোঃ রেজাউর রহমান, শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নূহা ও নাবার চিকিৎসা বাবদ ৫০ লক্ষ টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে।  এরমধ্যে রয়েছে  কেবিন ভাড়া, হাসপাতাল ফার্মেসীর মাধ্যমে ওষুধ ক্রয় ব্যয়, নিউরোসার্জারি বিভাগ কর্তৃক অপারেশনকালীন ক্রয়কৃত ওষুদ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদী ব্যয়, এ্যানেসথেশিয়া সামগ্রী ও অপারেশন বা ওটি চার্জ ইত্যাদি। এই ব্যয়ের মধ্যে প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা বহন করেছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। আর ১৫ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে অনুদান হিসেবে। অনুদানকারী তাঁর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তবে এই অনুদান পেতে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছেন সাংবাদিক তাওসিয়া তাজমিম ও দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জনাব চৌধুরী খালেদ মাসুদ। অর্থাৎ জোড়া লাগানো যমজ শিশু নূহা ও নাবার চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। পরিচালক (হাসপাতাল) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মোঃ রেজাউর রহমান জানিয়েছেন নূহা ও নাবাকে ডিসচার্জ দেয়া হলেও চিকিৎসার জন্য ফলোআপে থাকতে হবে এবং আরো অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

শিশু নূহা ও নাবার জন্ম হয়েছিল ২০২২ সালের ২১ মার্চ। বিএসএমএমইউতে তাদের ভর্তি করানো হয়েছিল ৪ এপ্রিল ২০২২ সালে। তারপর থেকে তারা এখানেই বেড়ে উঠেছে। শিশু নূহা ও নাবার চিকিৎসায় নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে নিউরোসার্জনগণ, শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম জাহিদ হোসেনের  নেতৃত্বে শিশু সার্জনগণ, এ্যানেসথেশিওলজিস্ট গণসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞগণ, চিকিৎসক, নার্সবৃন্দ অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা করেছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই জোড়া লাগানো দেহের যমজ শিশু নূহা ও নাবা আলাদা হওয়ার আনন্দ নিয়ে  ২ বছর ৭ মাস ২০ দিন পর সুস্থ হয়ে মা বাবার সাথে বাড়ি ফিরেছে। বিএসএমএমইউতে এ পর্যন্ত ৩ জোড়া জোড়া লাগানো শিশুদের আলাদা করা হয়েছে এবং আরো এক জোড়া লাগানো শিশুদ্বয়কে আলাদার প্রস্তুতি চলছে।