শ্রী নিখিলনাথ রায়
পরদিন প্রাতঃকালে জেলে উপস্থিত হইয়া দেখি, অনাথ-দরিদ্রগণের কাতর রোদনধ্বনিতে চতুদ্দিক প্রতিধ্বনিত হইতেছে; তাহারা মহারাজকে শেষ দর্শন করিতে আসিয়াছে। মহারাজ জেলরক্ষকের আবাসস্থানের একটি গৃহে আসিয়া উপবেশন করিলে, আমিও তাঁহার পার্শ্বে উপবেশন করিলাম। মহারাজ প্রসন্নচিত্তে তিনজন ব্রাহ্মণকে তাঁহার মৃতদেহ বহনের জন্য ইঙ্গিত করিলে, তাহারা দুঃখে অভিভূত হইয়া পড়িল। আমি আমার ঘড়ি দেখিয়া মহারাজকে বলিলাম যে, এখনও সময় হয় নাই।
তিনি আবার আমাকে গুরুদাসের, ক্লেভারিং, মন্সন ও ফান্সিসের কথা বলিয়া, একমনে ঈশ্বরধ্যানে নিমগ্ন হইলেন। অবশেষে তিনি উঠিয়া আমাকে ইঙ্গিত করিয়া, তাঁহার পরিত্যক্ত দ্রব্যাদি রাজা গুরুদাসকেই লইয়া যাইবার জন্য জেলখানার ভৃত্যদিগকে আদেশ দিয়া, পাকীতে আরোহণ পূর্ব্বক বধ্যভূমি অভিমুখে যাত্রা করিলেন। আমরা গিয়া দেখি- লাম সেই প্রশস্ত ময়দান লোকে পরিপূর্ণ হইয়া গিয়াছে।
মহারাজ তাঁহার সমভিব্যাহারী ব্রাহ্মণ তিনটির জন্য আমাকে অপেক্ষা করিতে বলিলেন। তাহারা উপস্থিত হইলে, তাহাদের সহিত কোন গুপ্ত কথা থাকিতে পারে মনে করিয়া, আমি লোকজন সরাইয়া দিতে চাহিলাম। মহারাজ আমাকে নিষেধ করিয়া তাহাদিগকে গুরুদাস ও তাঁহার পরিবার- বর্গের কথা মনে করিয়া দিলেন। মহারাজ বারংবার আমাকে সেই তিন জন ব্রাহ্মণের দ্বারা মৃতদেহ বহন করিবার জন্য অনুরোধ করেন এবং আর কাহাকেও স্পর্শ করিতে নিষেধ করিয়া যান।
তিনি জনতার জন্য কিছুমাত্র যে স্থান মহারাজের বধ্যভূমি বলিয়া নিদ্দিষ্ট হইয়াছিল, তাহার সম্বন্ধে বিশেষ কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কিন্তু কেহ কেহ অনুমান করিয়া থাকেন যে, খিদির- পুরের নিকট কুলীবাজার ও হেষ্টিংস সেতুর মধ্যবর্তী নদীর নিকটস্থ শূন্য ময়দানে নন্দকুমারের বধমঞ্চ নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। বিচলিত হন নাই। তাঁহার বন্ধুবান্ধবদিগের সহিত সাক্ষাতের কথা বলিলে, তিনি বলেন যে, আমার অনেক বন্ধু আছেন, এ স্থানে সকলের সহিত সাক্ষাতের প্রয়োজন নাই। পরে তিনি একজনের নাম করিয়া- ছিলেন; অবশেষে তাহাকেও উপস্থিত হইতে নিষেধ করেন।