০৬:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১১২)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 21

শশাঙ্ক মণ্ডল

সাহিত্য

পঞ্চম অধ্যায়

বিশেষ করে চাষি সম্প্রদায়ের মানুষরা শিক্ষার প্রয়োজন অনুভব করত না। আর ইচ্ছা থাকলেও উপায় ছিল না। সুন্দরবনের বনাঞ্চল উঠিত করার ব্যাপারে তাদের প্রতিনিয়ত জীবনসংগ্রামে নিয়োজিত হতে হত বনের বাঘ, সাপ ও কুমির, নদীর বাঁধ, পানীয় জল, রোগ-মহামারী প্রাকৃতিক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়াই-এর জীবন। প্রতিনিয়ত জমিদার চকদার গাতিদার ও তাদের নায়েব পাইকদের নানারকমের অত্যাচার তার নিত্যসঙ্গী; জীবনে তখনও স্থিতি আসেনি। ছেলেদেরকে সেদিন নিজেদের জীবিকার প্রয়োজনে অল্পবয়স থেকে কাজে লাগতে হত।

পাঠশালা শিক্ষক এ সবের ব্যবস্থা অনেক এলাকার মানুষ করে উঠতে পারেনি। সেদিন পাঠশালার শিক্ষার যতটুকু সুযোগ ছিল তার পাশাপাশি বিভিন্ন বৃত্তিমূলক শিক্ষা দিতেন পরিবারের কর্তারা ছেলেদের কাজের মধ্যে রেখে। এভাবে কুলবৃত্তি শেখানো হত, তালুকদার হাওলাদার দোকানদার গ্রামের মোড়ল ও অন্যান্য পেশার মানুষরা পাঠশালার বাইরে জীবিকাগত শিক্ষা তাদের সন্তানদের দিত। সাধারণ মানুষদের এক বিশাল অংশ সেদিন নিরক্ষর ছিল কিন্তু অশিক্ষিত ছিল তা বলাটা ঠিক হবে না।

সমাজসংক্রান্ত সভা, গ্রাম্য পঞ্চায়েত, সালিশ বিচার, কবিগান রামায়ণ মহাভারত পুরাণ পাঠের মধ্য দিয়ে জীবনে চলার পথের শিক্ষা গ্রহণ করত। ১৮৫০-৫৫ এর মধ্যে পাশ্চাত্ত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার ক্ষেত্রে যে অস্পষ্টতা ছিল তা পরিষ্কার হল। ১৭৭৪ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতায় সুপ্রীমকোর্ট প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ইংরেজি শিক্ষার চাহিদা কিছু মানুষের মনে দেখা দিলেও উনিশ শতকের শুরুতে এর সুযোগ ছিল সীমাবদ্ধ। (৪) ১৮১৭ খ্রীষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠার পর পাশ্চাত্ত্য শিক্ষা প্রচলনের পথ প্রস্তুত হল।

সুন্দরবন এলাকার বিভিন্ন স্থানে উনিশ শতকের মাঝামাঝি পাশ্চাত্ত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্য নিয়ে কয়েকটি স্কুল তৈরি করা হল- এসব স্কুল প্রতিষ্ঠার পিছনে তৎকালীন কিছু উচ্চপদস্থ রাজ কর্মচারী এবং স্থানীয় জমিদারদের উদ্যোগ কার্যকরী ভূমিকা নিয়ে ছিল। ১৮৩২ খ্রীষ্টাব্দে জুন মাসে টাকীর জমিদার কালীনাথ মুন্সিদের উৎসাহে টাকী একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। কলকাতা থেকে ৫০ মাইল দূরে ইছামতী নদীর তীরে এই বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন মিঃ ক্লিফট্। আলেকজান্ডার ডাফ্ প্রমুখ শিক্ষাব্রতী এই বিদ্যালয় পরিদর্শন করে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

ছাত্রদের পুরস্কার-বিতরণী সভা কলকাতার টাউনহলে অনুষ্ঠিত হয়। ১৮৩৬ খ্রীষ্টাব্দে লর্ড ও লেডী বেন্টিংক উপস্থিত ছিলেন। প্রথম বছরেই ছাত্রসংখ্যা তিন শতের উপর দাঁড়ায়। ১৮৩৬ সালের ১৬ই আগস্ট সমাচার চন্দ্রিকার সংবাদে দেখা যাচ্ছে ‘ইংরাজী বিদ্যাতে টাকীস্থ ছাত্রদের সংঙ্গে কলিকাতাস্থ ছাত্রদের ভদ্রমতেই তুলনা হইতে পারে।’ বেশ কয়েক বছর চলার পর এই বিদ্যালয় বরানগরে স্থানান্তরিত হয় এবং তারপর কয়েক বছরের মধ্যে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়।

 

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১১২)

১২:০০:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

শশাঙ্ক মণ্ডল

সাহিত্য

পঞ্চম অধ্যায়

বিশেষ করে চাষি সম্প্রদায়ের মানুষরা শিক্ষার প্রয়োজন অনুভব করত না। আর ইচ্ছা থাকলেও উপায় ছিল না। সুন্দরবনের বনাঞ্চল উঠিত করার ব্যাপারে তাদের প্রতিনিয়ত জীবনসংগ্রামে নিয়োজিত হতে হত বনের বাঘ, সাপ ও কুমির, নদীর বাঁধ, পানীয় জল, রোগ-মহামারী প্রাকৃতিক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়াই-এর জীবন। প্রতিনিয়ত জমিদার চকদার গাতিদার ও তাদের নায়েব পাইকদের নানারকমের অত্যাচার তার নিত্যসঙ্গী; জীবনে তখনও স্থিতি আসেনি। ছেলেদেরকে সেদিন নিজেদের জীবিকার প্রয়োজনে অল্পবয়স থেকে কাজে লাগতে হত।

পাঠশালা শিক্ষক এ সবের ব্যবস্থা অনেক এলাকার মানুষ করে উঠতে পারেনি। সেদিন পাঠশালার শিক্ষার যতটুকু সুযোগ ছিল তার পাশাপাশি বিভিন্ন বৃত্তিমূলক শিক্ষা দিতেন পরিবারের কর্তারা ছেলেদের কাজের মধ্যে রেখে। এভাবে কুলবৃত্তি শেখানো হত, তালুকদার হাওলাদার দোকানদার গ্রামের মোড়ল ও অন্যান্য পেশার মানুষরা পাঠশালার বাইরে জীবিকাগত শিক্ষা তাদের সন্তানদের দিত। সাধারণ মানুষদের এক বিশাল অংশ সেদিন নিরক্ষর ছিল কিন্তু অশিক্ষিত ছিল তা বলাটা ঠিক হবে না।

সমাজসংক্রান্ত সভা, গ্রাম্য পঞ্চায়েত, সালিশ বিচার, কবিগান রামায়ণ মহাভারত পুরাণ পাঠের মধ্য দিয়ে জীবনে চলার পথের শিক্ষা গ্রহণ করত। ১৮৫০-৫৫ এর মধ্যে পাশ্চাত্ত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার ক্ষেত্রে যে অস্পষ্টতা ছিল তা পরিষ্কার হল। ১৭৭৪ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতায় সুপ্রীমকোর্ট প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ইংরেজি শিক্ষার চাহিদা কিছু মানুষের মনে দেখা দিলেও উনিশ শতকের শুরুতে এর সুযোগ ছিল সীমাবদ্ধ। (৪) ১৮১৭ খ্রীষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠার পর পাশ্চাত্ত্য শিক্ষা প্রচলনের পথ প্রস্তুত হল।

সুন্দরবন এলাকার বিভিন্ন স্থানে উনিশ শতকের মাঝামাঝি পাশ্চাত্ত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্য নিয়ে কয়েকটি স্কুল তৈরি করা হল- এসব স্কুল প্রতিষ্ঠার পিছনে তৎকালীন কিছু উচ্চপদস্থ রাজ কর্মচারী এবং স্থানীয় জমিদারদের উদ্যোগ কার্যকরী ভূমিকা নিয়ে ছিল। ১৮৩২ খ্রীষ্টাব্দে জুন মাসে টাকীর জমিদার কালীনাথ মুন্সিদের উৎসাহে টাকী একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। কলকাতা থেকে ৫০ মাইল দূরে ইছামতী নদীর তীরে এই বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন মিঃ ক্লিফট্। আলেকজান্ডার ডাফ্ প্রমুখ শিক্ষাব্রতী এই বিদ্যালয় পরিদর্শন করে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

ছাত্রদের পুরস্কার-বিতরণী সভা কলকাতার টাউনহলে অনুষ্ঠিত হয়। ১৮৩৬ খ্রীষ্টাব্দে লর্ড ও লেডী বেন্টিংক উপস্থিত ছিলেন। প্রথম বছরেই ছাত্রসংখ্যা তিন শতের উপর দাঁড়ায়। ১৮৩৬ সালের ১৬ই আগস্ট সমাচার চন্দ্রিকার সংবাদে দেখা যাচ্ছে ‘ইংরাজী বিদ্যাতে টাকীস্থ ছাত্রদের সংঙ্গে কলিকাতাস্থ ছাত্রদের ভদ্রমতেই তুলনা হইতে পারে।’ বেশ কয়েক বছর চলার পর এই বিদ্যালয় বরানগরে স্থানান্তরিত হয় এবং তারপর কয়েক বছরের মধ্যে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়।