১০:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৩) কলম্বিয়ার সংবিধান পরিবর্তনের উদ্যোগ সাকিব ও মাশরাফি ছাড়া পারফরম্যান্স, শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজের পর পথ কি? রাষ্ট্রে কখন ও কেন সংখ্যালঘুরা সংগঠিত ধর্ষণের শিকার হয় গ্রামীণ গর্ভবতী নারীদের আয়রন ঘাটতি: অর্ধেকের বেশি রক্তস্বল্পতায় আরব আমিরাত, মরুভূমি শহরে ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মুরাদনগরে সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণ: ‘এরপর সরকার ক্ষমতায় থাকার যোগ্য নয়’—জাপা চেয়ারম্যান ইরান ও পাকিস্তান থেকে আফগানদের গণনির্বাসনে উদ্বেগ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যে নতুন নিষেধাজ্ঞা ভারতের, প্রভাব কেমন হবে ইরানে চীনা বিনিয়োগ অনিশ্চিত, তবু মধ্যপ্রাচ্যের আহ্বান অটুট

টলস্টয়ের স্মৃতি (পর্ব- ৩৯)

  • Sarakhon Report
  • ০৪:০০:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫
  • 16

ম্যাকসিম গোর্কী

একটি চিঠি

পাথরগুলো ছিল প্রকাণ্ড, ফাটল ধরা, গায়ে তাদের সামুদ্রিক শ্যাওলার গন্ধ: জোয়ার এসেছিল, তাই। তাঁকে দেখে আমার মনে হোলো, পুরাতন একটি পাথর যেন প্রাণ পেয়েছেন; যে পাথরের জানা আছে সকল কিছুর আদি, সকল কিছুর অন্ত; যিনি ভেবে দেখেন কবে কোথায় সমস্ত পাথরের, সমস্ত মাটির, ঘাসের, সমস্ত সাগরের জলের, উপল থেকে সূর্যের, সমস্ত বিশ্বের হবে শেষ।

আর এই সমুদ্র, এ তাঁরই আত্মার অংশ, তাঁর চারিদিকের সব কিছু তাঁরই মধ্য থেকে উদ্ভাবিত, উৎসারিত। এই বৃদ্ধ মানুষটির চিন্তামগ্ন স্তব্ধতা দেখে আমি অনুভব করলাম এমন কিছু যা নিয়তির মতো দুর্বার, জাদুর মতো অদ্ভুত; অনুভব করলাম, এই মানুষটির তল দেশে অন্ধকারের মধ্যে কী যেন কেবলই তলিয়ে যাচ্ছে, তারপর তা প্রসারিত হয়ে রশ্মিবন্যার মতো প্রক্ষিপ্ত হ’চ্ছে পৃথিবীর ঊর্ধ্বে সুনীল শূন্যতায়- মনে হোলো, যেন তিনিই তাঁর সংহত ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সমুদ্র তরংগগুলিকে আকর্ষণ করছেন, আপনার কাছ থেকে আবার সেগুলিকে দিচ্ছেন সরিয়ে, দূরে থেকে তিনিই যেন নিয়ন্ত্রণ করছেন মেঘ আর ছায়ার সঞ্চারণ, তিনিই যেন প্রাণ-দান করছেন পাষাণকে।

যেন এক উন্মাদ মুহূর্তে অকস্মাৎ আমি সম্ভব ব’লে অনুভব করলাম, তিনি যেন উঠে দাঁড়াবেন, নিমেষে স্তব্ধ হয়ে কাচের মত কঠিন হয়ে যাবে সমুদ্র, পাথর গুলো উঠবে নড়ে, কলোল্লাসে করবে চীৎকার। তাঁর চারিদিকের সকল কিছুই হয়ে উঠবে প্রাণময়, ভাবময়, তারা সবাই তাদের বিভিন্ন সুরে কথা কইবে, তাঁরই কথা, তাঁর সম্পর্কে কথা, তাঁর প্রতিবাদে কথা। ওই একটি মুহূর্তে আমি কী অনুভব করেছিলাম, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারিনা; আমার সমগ্র আত্মা ভরে উঠেছিল আনন্দে, আতংকে। তারপর সমস্ত কিছুই যেন মিশে গেলো একটি মাত্র গুলকচঞ্চল চিন্তার মধ্যে: “এই মানুষটি যতোদিন পৃথিবীতে থাকবেন ততোদিন আমার পিতামাতার অভাব হবে না, আমি নিরাশ্রয় হবো না। কখনো না, কখনো না।”

তারপর আমি চুপিচুপি আঙুলের ওপর ভর ক’রে সেখান থেকে পালিয়ে গেলাম, পাছে আমার পায়ের চাপে পাথরের শব্দে তাঁর চিন্তা- সমাধি যায় ভেঙে। এখন আমি অনুভব করছি, আমি যেন পিতৃমাতৃহীন একটি শিশু। লিখতে লিখতে কান্নায় আমার বুক ভেঙে আসছে।

 

 

 

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৩)

টলস্টয়ের স্মৃতি (পর্ব- ৩৯)

০৪:০০:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫

ম্যাকসিম গোর্কী

একটি চিঠি

পাথরগুলো ছিল প্রকাণ্ড, ফাটল ধরা, গায়ে তাদের সামুদ্রিক শ্যাওলার গন্ধ: জোয়ার এসেছিল, তাই। তাঁকে দেখে আমার মনে হোলো, পুরাতন একটি পাথর যেন প্রাণ পেয়েছেন; যে পাথরের জানা আছে সকল কিছুর আদি, সকল কিছুর অন্ত; যিনি ভেবে দেখেন কবে কোথায় সমস্ত পাথরের, সমস্ত মাটির, ঘাসের, সমস্ত সাগরের জলের, উপল থেকে সূর্যের, সমস্ত বিশ্বের হবে শেষ।

আর এই সমুদ্র, এ তাঁরই আত্মার অংশ, তাঁর চারিদিকের সব কিছু তাঁরই মধ্য থেকে উদ্ভাবিত, উৎসারিত। এই বৃদ্ধ মানুষটির চিন্তামগ্ন স্তব্ধতা দেখে আমি অনুভব করলাম এমন কিছু যা নিয়তির মতো দুর্বার, জাদুর মতো অদ্ভুত; অনুভব করলাম, এই মানুষটির তল দেশে অন্ধকারের মধ্যে কী যেন কেবলই তলিয়ে যাচ্ছে, তারপর তা প্রসারিত হয়ে রশ্মিবন্যার মতো প্রক্ষিপ্ত হ’চ্ছে পৃথিবীর ঊর্ধ্বে সুনীল শূন্যতায়- মনে হোলো, যেন তিনিই তাঁর সংহত ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সমুদ্র তরংগগুলিকে আকর্ষণ করছেন, আপনার কাছ থেকে আবার সেগুলিকে দিচ্ছেন সরিয়ে, দূরে থেকে তিনিই যেন নিয়ন্ত্রণ করছেন মেঘ আর ছায়ার সঞ্চারণ, তিনিই যেন প্রাণ-দান করছেন পাষাণকে।

যেন এক উন্মাদ মুহূর্তে অকস্মাৎ আমি সম্ভব ব’লে অনুভব করলাম, তিনি যেন উঠে দাঁড়াবেন, নিমেষে স্তব্ধ হয়ে কাচের মত কঠিন হয়ে যাবে সমুদ্র, পাথর গুলো উঠবে নড়ে, কলোল্লাসে করবে চীৎকার। তাঁর চারিদিকের সকল কিছুই হয়ে উঠবে প্রাণময়, ভাবময়, তারা সবাই তাদের বিভিন্ন সুরে কথা কইবে, তাঁরই কথা, তাঁর সম্পর্কে কথা, তাঁর প্রতিবাদে কথা। ওই একটি মুহূর্তে আমি কী অনুভব করেছিলাম, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারিনা; আমার সমগ্র আত্মা ভরে উঠেছিল আনন্দে, আতংকে। তারপর সমস্ত কিছুই যেন মিশে গেলো একটি মাত্র গুলকচঞ্চল চিন্তার মধ্যে: “এই মানুষটি যতোদিন পৃথিবীতে থাকবেন ততোদিন আমার পিতামাতার অভাব হবে না, আমি নিরাশ্রয় হবো না। কখনো না, কখনো না।”

তারপর আমি চুপিচুপি আঙুলের ওপর ভর ক’রে সেখান থেকে পালিয়ে গেলাম, পাছে আমার পায়ের চাপে পাথরের শব্দে তাঁর চিন্তা- সমাধি যায় ভেঙে। এখন আমি অনুভব করছি, আমি যেন পিতৃমাতৃহীন একটি শিশু। লিখতে লিখতে কান্নায় আমার বুক ভেঙে আসছে।