১১:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

পাউন্ডের সর্বোচ্চ দরপতন 

  • Sarakhon Report
  • ০৩:১৩:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫
  • 14

সারাক্ষণ ডেস্ক

পাউন্ড গত নয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে, কারণ যুক্তরাজ্যের সরকারি ঋণগ্রহণের খরচ অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে।এই পতন ঘটে সেই সময়ে, যখন যুক্তরাজ্যের ১০ বছরের ঋণগ্রহণের সুদের হার ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ওই আর্থিক সংকটের সময় ব্যাংকগুলো প্রায় ঋণ দানে অচল হয়ে পড়েছিল।

অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, ঋণগ্রহণের এই উর্ধ্বমুখী ব্যয় আরও কর বৃদ্ধির কারণ হতে পারে অথবা ব্যয় পরিকল্পনায় কাটছাঁটের প্রয়োজন হতে পারে, যাতে সরকার তার নিজস্ব নির্ধারিত ঋণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ট্রেজারির এক মুখপাত্র বলেছেন, “কেউ যেন সন্দেহ না করে যে নির্ধারিত অর্থনৈতিক নিয়ম বজায় রাখা নিয়ে কোনো সমঝোতা হবে। সরকার জনগণের অর্থের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ রাখবে।”

তিনি আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী “অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এবং শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ রক্ষায় কোনো প্রয়াসই বাদ দেবে না।”

বিবিসি ট্রেজারির কাছে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করেছে।

এর আগে সরকার জানিয়েছিল, স্বাধীন পূর্বাভাসকারী সংস্থার (ওবিআর) মার্চে প্রকাশিত সরকারি ঋণগ্রহণ সংক্রান্ত পূর্বাভাসের আগে তারা কোনো মন্তব্য করবে না।

“আমি স্বাভাবিকভাবেই আগেভাগে কিছু বলতে চাই না… ওবিআরের (অফিস ফর বাজেট রেসপন্সিবিলিটি) ওপরই তাদের পূর্বাভাস দেওয়ার দায়িত্ব,” বলেছিলেন এক কর্মকর্তা।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি মুখপাত্র বলেন, “জনগণের অর্থব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা না থাকলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি আসবে না। তাই সরকারের অর্থব্যবস্থায় ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য।”

ছায়া অর্থমন্ত্রী মেল স্ট্রাইড অভিযোগ করেন যে বাজেটে অর্থমন্ত্রীর বিশাল ব্যয় ও ঋণগ্রহণ পরিকল্পনা সরকারের জন্য ঋণ নেওয়াকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলছে।

তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে বলেন, “আমরা এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তোলার কথা ভাবছি যা আরও স্থিতিশীল, সেখানে কর বাড়িয়ে অদক্ষতার মূল্য পরিশোধ করা ঠিক নয়।”

সতর্কবার্তাটি এসেছে এমন সময়, যখন ৩০ বছরের ঋণগ্রহণের সুদের হার গত ২৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এদিকে পাউন্ড ডলারের বিপরীতে প্রায় ১.১% কমে ১.২৩৩ ডলারে নেমে গেছে, যা গত বছরের এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন।

সাধারণত সরকার কর থেকে যা আয় করে, তার চেয়ে ব্যয় বেশি হয়। এই ঘাটতি মেটাতে সরকার ঋণ নেয়, যা সুদসহ ফেরত দিতে হয়। এর একটি উপায় হলো বন্ড বিক্রি করা।

সাদ র‍্যাবিট ইনভেস্টমেন্টস-এর ম্যাক্রোইকোনমিকস প্রধান গ্যাব্রিয়েল ম্যাককিয়ন জানান, “ঋণগ্রহণের খরচ বৃদ্ধির ফলে রিভসের বাজেট পরিকল্পনায় বরাদ্দকৃত বাড়তি ব্যয় প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেছে। এতে লেবার দলের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি ব্যাহত হতে পারে এবং ব্যয় পরিকল্পনায় যন্ত্রণাদায়ক সমন্বয়ের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।”

সামগ্রিকভাবে বিশ্ববাজারে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সরকারি ঋণগ্রহণের খরচ বেড়ে চলেছে। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের কানাডা, মেক্সিকো ও চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা এবং সে কারণে সম্ভাব্য মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তা দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।

এই নীতিগুলো বাস্তবায়নের সম্ভাবনা একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ঋণের ক্রমবর্ধমান চাপ ও স্থায়ী মূল্যস্ফীতির বিষয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ ঋণগ্রহণের সুদের হার বহাল রাখতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বছরের সরকারি বন্ডের সুদের হারও বুধবার বেড়ে গিয়েছিল, যদিও মধ্যদুপরের দিকে কিছুটা কমে ৪.৭%-এরও বেশি ছিল, যা এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ।

যুক্তরাষ্ট্রের বন্ডবাজারের এই পরিবর্তনে বিশ্ববাজারে প্রভাব পড়ছে এবং যুক্তরাজ্যও তার ব্যতিক্রম নয়।

এজে বেলের আর্থিক বিশ্লেষণ প্রধান ড্যানি হিউসন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ১০ বছরের ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, আর যুক্তরাজ্যের ১০ বছরের ঋণগ্রহণের খরচ ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে।”

তিনি আরও বলেন, “এটি বৈশ্বিক স্তরে একযোগে ঘটছে, কিন্তু যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রীর জন্য এটি এক বিরাট মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি কর বাড়ানো ছাড়াই সরকারি সেবায় আরও ব্যয় করতে চান, আবার নিজের নির্ধারিত অর্থনৈতিক নিয়মও ভাঙতে চান না।”

হিউসন আরও বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি থাকায়, তার সম্ভাব্য শুল্কনীতি ঘিরে বিনিয়োগকারীরা ভীতসন্ত্রস্ত।”

সরকারি ঋণগ্রহণ নিয়ে আনুষ্ঠানিক পূর্বাভাসকারী সংস্থা ওবিআর আগামী মাস থেকে তাদের হালনাগাদ পূর্বাভাস তৈরির কাজ শুরু করবে, যা মার্চের শেষ দিকে সংসদে উপস্থাপন করা হবে।

পাউন্ডের সর্বোচ্চ দরপতন 

০৩:১৩:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫

সারাক্ষণ ডেস্ক

পাউন্ড গত নয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে, কারণ যুক্তরাজ্যের সরকারি ঋণগ্রহণের খরচ অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে।এই পতন ঘটে সেই সময়ে, যখন যুক্তরাজ্যের ১০ বছরের ঋণগ্রহণের সুদের হার ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ওই আর্থিক সংকটের সময় ব্যাংকগুলো প্রায় ঋণ দানে অচল হয়ে পড়েছিল।

অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, ঋণগ্রহণের এই উর্ধ্বমুখী ব্যয় আরও কর বৃদ্ধির কারণ হতে পারে অথবা ব্যয় পরিকল্পনায় কাটছাঁটের প্রয়োজন হতে পারে, যাতে সরকার তার নিজস্ব নির্ধারিত ঋণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ট্রেজারির এক মুখপাত্র বলেছেন, “কেউ যেন সন্দেহ না করে যে নির্ধারিত অর্থনৈতিক নিয়ম বজায় রাখা নিয়ে কোনো সমঝোতা হবে। সরকার জনগণের অর্থের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ রাখবে।”

তিনি আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী “অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এবং শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ রক্ষায় কোনো প্রয়াসই বাদ দেবে না।”

বিবিসি ট্রেজারির কাছে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করেছে।

এর আগে সরকার জানিয়েছিল, স্বাধীন পূর্বাভাসকারী সংস্থার (ওবিআর) মার্চে প্রকাশিত সরকারি ঋণগ্রহণ সংক্রান্ত পূর্বাভাসের আগে তারা কোনো মন্তব্য করবে না।

“আমি স্বাভাবিকভাবেই আগেভাগে কিছু বলতে চাই না… ওবিআরের (অফিস ফর বাজেট রেসপন্সিবিলিটি) ওপরই তাদের পূর্বাভাস দেওয়ার দায়িত্ব,” বলেছিলেন এক কর্মকর্তা।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি মুখপাত্র বলেন, “জনগণের অর্থব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা না থাকলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি আসবে না। তাই সরকারের অর্থব্যবস্থায় ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য।”

ছায়া অর্থমন্ত্রী মেল স্ট্রাইড অভিযোগ করেন যে বাজেটে অর্থমন্ত্রীর বিশাল ব্যয় ও ঋণগ্রহণ পরিকল্পনা সরকারের জন্য ঋণ নেওয়াকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলছে।

তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে বলেন, “আমরা এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তোলার কথা ভাবছি যা আরও স্থিতিশীল, সেখানে কর বাড়িয়ে অদক্ষতার মূল্য পরিশোধ করা ঠিক নয়।”

সতর্কবার্তাটি এসেছে এমন সময়, যখন ৩০ বছরের ঋণগ্রহণের সুদের হার গত ২৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এদিকে পাউন্ড ডলারের বিপরীতে প্রায় ১.১% কমে ১.২৩৩ ডলারে নেমে গেছে, যা গত বছরের এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন।

সাধারণত সরকার কর থেকে যা আয় করে, তার চেয়ে ব্যয় বেশি হয়। এই ঘাটতি মেটাতে সরকার ঋণ নেয়, যা সুদসহ ফেরত দিতে হয়। এর একটি উপায় হলো বন্ড বিক্রি করা।

সাদ র‍্যাবিট ইনভেস্টমেন্টস-এর ম্যাক্রোইকোনমিকস প্রধান গ্যাব্রিয়েল ম্যাককিয়ন জানান, “ঋণগ্রহণের খরচ বৃদ্ধির ফলে রিভসের বাজেট পরিকল্পনায় বরাদ্দকৃত বাড়তি ব্যয় প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেছে। এতে লেবার দলের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি ব্যাহত হতে পারে এবং ব্যয় পরিকল্পনায় যন্ত্রণাদায়ক সমন্বয়ের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।”

সামগ্রিকভাবে বিশ্ববাজারে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সরকারি ঋণগ্রহণের খরচ বেড়ে চলেছে। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের কানাডা, মেক্সিকো ও চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা এবং সে কারণে সম্ভাব্য মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তা দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।

এই নীতিগুলো বাস্তবায়নের সম্ভাবনা একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ঋণের ক্রমবর্ধমান চাপ ও স্থায়ী মূল্যস্ফীতির বিষয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ ঋণগ্রহণের সুদের হার বহাল রাখতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বছরের সরকারি বন্ডের সুদের হারও বুধবার বেড়ে গিয়েছিল, যদিও মধ্যদুপরের দিকে কিছুটা কমে ৪.৭%-এরও বেশি ছিল, যা এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ।

যুক্তরাষ্ট্রের বন্ডবাজারের এই পরিবর্তনে বিশ্ববাজারে প্রভাব পড়ছে এবং যুক্তরাজ্যও তার ব্যতিক্রম নয়।

এজে বেলের আর্থিক বিশ্লেষণ প্রধান ড্যানি হিউসন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ১০ বছরের ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, আর যুক্তরাজ্যের ১০ বছরের ঋণগ্রহণের খরচ ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে।”

তিনি আরও বলেন, “এটি বৈশ্বিক স্তরে একযোগে ঘটছে, কিন্তু যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রীর জন্য এটি এক বিরাট মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি কর বাড়ানো ছাড়াই সরকারি সেবায় আরও ব্যয় করতে চান, আবার নিজের নির্ধারিত অর্থনৈতিক নিয়মও ভাঙতে চান না।”

হিউসন আরও বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি থাকায়, তার সম্ভাব্য শুল্কনীতি ঘিরে বিনিয়োগকারীরা ভীতসন্ত্রস্ত।”

সরকারি ঋণগ্রহণ নিয়ে আনুষ্ঠানিক পূর্বাভাসকারী সংস্থা ওবিআর আগামী মাস থেকে তাদের হালনাগাদ পূর্বাভাস তৈরির কাজ শুরু করবে, যা মার্চের শেষ দিকে সংসদে উপস্থাপন করা হবে।