সত্যেন্দ্রকুমার বসু
এখান থেকে পথ বিশেষ দুর্গম ছিল। চারদিকেই খড় বা ঘাসের দেশ, উত্তর দিকে গোবির মরুভূমি, দক্ষিণে কোকোনরের বন্য মালভূমি। তার উপরে এই সীমান্ত শহর থেকে বেরতে হলে সম্রাটের পরোআনা দরকার হত। হিউএনচাঙ গোপনে এই শহর ত্যাগ করে উত্তর-পশ্চিম দিকে গেলেন। দিনে সাবধানে লুকিয়ে থাকতেন, রাত্রে পথ চলতেন, কিন্তু এত সাবধানে থেকেও তিনি জানতে পারলেন যে, সীমান্ত রক্ষীদল তাঁর বিনা আদেশে যাত্রার কথা জানতে পেরেছে। আর তাঁকে গ্রেপ্তার করতে লোক নিযুক্ত হয়েছে।
আরও শুনলেন যে, পশ্চিম সীমান্ত ছেড়ে যাবার পথে কুড়ি মাইল অন্তর পাঁচটি পাহারা-স্তম্ভ আছে। বিপদের উপর বিপদ, এই সময়ে তাঁর ঘোড়াটাও মরে গেল। সৌভাগ্যক্রমে এ-জেলার শাসনকর্তা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী হওয়ায় তাঁকে আর গ্রেপ্তার হতে হল না। কিন্তু তাঁর যে দুজন চেলা সঙ্গী ছিল তারা এখানেই তাঁকে ত্যাগ করল। ধর্মগুরু এখন একেবারে নিঃসঙ্গ হলেন।
তিনি একটা নতুন ঘোড়া কিনলেন আর মন্দিরে গিয়ে বোধিসত্ত্ব মৈত্রেয়ের কাছে প্রার্থনা করলেন যে, শেষ সীমান্তরক্ষীর দল এড়িয়ে যাবার জন্যে তিনি যেন একজন পথপ্রদর্শক পান। শীঘ্রই একজন বৌদ্ধ বিদেশী যুবা নিজেই এসে পথপ্রদর্শক হতে চাইল। হিউএনচাঙ আনন্দের সঙ্গে তাকে নিযুক্ত করলেন। এই সময়ে এক বিদেশী বুড়ো এসে তাকে বলল,’পশ্চিমের পথ দুর্গম আর বিপদসংকুল। ভূত প্রেত, কোথাও বা তপ্ত ঝড়। সম্ভব নয়।
বড় বড় যাত্রীর দল পথ কোথাও চোরাবালি, কোথাও এইসব সহ্য করা কারো পক্ষেই ভুলে মারা যায়। এ অবস্থায় আপনার পক্ষে একা এ পথ অতিক্রম করা দুঃসাধ্য। সাবধান! জীবন বিপন্ন করবেন না।’ হিউএনচাঙ তথাপি যাবার জন্যে বদ্ধপরিকর হওয়াতে বৃদ্ধ তাকে একটা বুড়ো অস্থিচর্মসার লাল ঘোড়া দিয়ে বলল যে, ‘এটাই রাস্তা চেনে আর ওর সঙ্গে আপনার ছোট ঘোড়াটা বদল করুন।’ হিউএনচাঙ এতে রাজী হলেন, কারণ চাংআনে থাকতে এক দৈবজ্ঞের কাছে শুনেছিলেন যে এই রকমই হবে।
চলবে