আর্কাদি গাইদার
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
ধোঁয়ায় আর স্কুল-কালিতে কালো-হয়ে-থাকা ছোট্ট-ছোট্ট বাড়িগুলোর দিকে অবাক হয়ে আর কিছুটা কৌতূহল নিয়েও তাকাতে-তাকাতে পথ হাঁটছিলুম। দেখছিলুম কারখানাগুলোর পাথরের দেয়াল, আর তার মধ্যে বসানো অন্ধকার জানলাগুলোর ভেতর দিয়ে নজরে আসছিল লাফিয়ে লাফিয়ে-ওঠা আগুনের উজ্জল শিখা আর বন্দী যন্ত্রদানবের চাপা গর্জন।
কারখানাগুলোয় ঠিক তখনই দুপুরের খাওয়ার ছুটি হচ্ছে। পাহাড়-প্রমাণ গাড়ির চাকায় ভরতি কয়েকটা খোলা মালগাড়িকে টেনে একটা এঞ্জিন আমার পাশ দিয়ে আড়াআড়িভাবে রাস্তা পেরিয়ে চলে গেল। যাবার সময় এঞ্জিনটার পাশ থেকে হঠাৎ ফোঁস-করে ধোঁয়া বেরুনোয় রাস্তার কুকুরগুলো ভয় পেয়ে গেল। কারখানাগুলোয় ভোঁ বাজতে লাগল নানান সুরে। কারখানার গেটগুলো দিয়ে ঘাম-চপচপে ক্লান্ত শরীর নিয়ে হড়হড় করে বেরিয়ে আসতে লাগলেন শ্রমিকরা।
আর দলে দলে বাচ্চারা খালি পায়ে, হাতে খাবার আর বাসনকোসনের ছোট-ছোট পুটলি ঝুলিয়ে ওঁদের দিকে ছুটে আসতে লাগল। পুটলিগুলো থেকে পেয়াজ, টক, বাঁধাকপি আর ভাপের গন্ধ উঠছিল।
অনেকগুলো আঁকাবাঁকা সর্-সরু রাস্তা পার হয়ে অবশেষে দাঁড়কাক যে-রাস্তায় থাকতেন সেখানে এসে পৌঁছলুম।
নম্বর মিলিয়ে একটা ছোট্ট কাঠের বাড়ির জানলায় টোকা দিলুম। হাড্ডিসার পাকাচুলো এক বুড়ি কাপড় কাচতে-কাচতে গামলাটার কাছ থেকে উঠে এসে, জানলা দিয়ে টকটকে লাল মুখ বাড়িয়ে খরখরে গলায় জিজ্ঞেস করল, কী চাই।
বললুম।
‘ও তো আর এখেনে থাকে না। অনেক দিন চলি গেচে।’ বলেই আমার মুখের ওপর দড়াম করে জানলাটা বন্ধ করে দিল।